রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলা

আতঙ্কে সময় কাটছে বাসিন্দাদের

প্রকাশিত: ৫:৪৬ অপরাহ্ণ , অক্টোবর ৩১, ২০২১

সাম্প্রতিক সময়ে হামলার ঘটনায় আতঙ্কে আছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা। হামলার পর নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও স্বস্তি ফিরে পাচ্ছে না কেউই। ক্যাম্পে এখনও বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি।

গত ২২ অক্টোবর রাতে কক্সবাজারে ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবচেয়ে বড় মসজিদ ও মাদরাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর আরও দুজনের মৃত্যু হয়। হামলার জন্য স্থানীয় রোহিঙ্গারা আরসাকে দায়ী করলেও তারা হামলার দায় অস্বীকার করেছে।

ওই মসজিদে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলোপাতাড়ি কোপানো হয়েছে মসজিদ, মাদরাসার দরজা-জানালায়। মসজিদের ভেতরে এখনও রয়েছে রক্তের কালচে দাগ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সশস্ত্র রোহিঙ্গা রাত তিনটার পর হামলা চালায়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে তাদের তাণ্ডব।

রোহিঙ্গারা জানান, তাদেরকে এখনও হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতেও সবার মাঝে আতঙ্ক কাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতৃস্থানীয় একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘এ মাদরাসা ও মসজিদের অবস্থান ছিল স্পষ্টতই আরসার কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। তারা এখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। তাদের সমর্থন না করায় আগেও হুমকি দিয়েছে। বলা হয়েছে মাদরাসা ছেড়ে দিতে। তারা (আরসা) চেয়েছে এই এলাকায় মাদরাসাটি তাদের একটা হেডকোয়ার্টার হবে। অনেক আগে থেকেই এই মাদরাসা তাদের টার্গেট ছিল। মাদরাসায় সাড়ে তিনশর মতো রোহিঙ্গা ধর্মীয় শিক্ষা নেয়।’

দিন দিন ক্যাম্পে নিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক হয়ে পড়ছে। ক্যাম্পের ভেতর চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্য এবং নানারকম অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে।

রোহিঙ্গা নারীদের একজন বলেন, ‘আমরা এখন বেশ অশান্তির মধ্যে আছি। খুব চিন্তা হয়। খুব ভয় লাগে।’

ওই হামলার প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী বলেন, ‘রাতে ঘুম হয় না আমাদের। নামাজ-দোয়া পড়ি। আবার মারামারি কাটাকাটি হয় কিনা এজন্য আতঙ্ক।’

ক্যাম্পের অস্থিরতায় উৎকণ্ঠা বেড়েছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। রোহিঙ্গাদের ডাকাতি ও অপহরণের মতো ঘটনার শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রাও।

জাদিমুরা ক্যাম্পের পাশে এক বাঙালি বৃদ্ধা জানান, বন্দুকধারীদের গুলিতে তার এক ছেলে নিহত হয়েছেন। ওই হামলায় অংশ নেওয়া বেশিরভাগই ছিল রোহিঙ্গা। তার আরেক ছেলে রোহিঙ্গাদের হুমকিতে ক্যাম্পের পাশে নিজের ঘরবাড়ি ফেলে ছাপড়া ঘরে বসবাস শুরু করেছেন।

টেকনাফ থানার পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মোট ১৫টি অপহরণ মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আটক করা হয়েছে অন্তত ১৩ জন রোহিঙ্গাকে।

এ ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হাফিজুর রহমান জানান, এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। এখানে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা আছে যারা অপহরণ এবং ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বেশিরভাগ সময় তারা পাহাড়ে অবস্থান নেয়। সুযোগ বুঝে ছদ্মবেশে লোকালয়ে আসে এবং অপরাধ করে আবার পাহাড়ে চলে যায়।’সূত্র : বিবিসি বাংলা

Loading