সেনবাগে সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লিখকদের পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ বিপাকে জনসাধারণ

প্রকাশিত: ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ , জুন ২৫, ২০২১

মোঃ আমির হোসেন(লিটন),সেনবাগ প্রতিনিধিঃ

নোয়াখালীর সেনবাগে সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লিখকদের পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ ও কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়েছেন জনসাধারণ।ব্যহত হচ্ছে সার্বিক কার্যক্রম। সেনবাগ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার তানিয়া তাহেরের বিরুদ্ধে অনিয়ম,দলিল লিখকদের সঙ্গে অসদাচরণ, ঘুষ দাবী ও দলিল লিখকদের সনদপত্র বাতিলের হুমকি প্রদান করেছেন মর্মে অভিযোগ করেছেন এবং দু’জন দলিল লিখকের সনদপত্র বাতিলের জন্য সাব-রেজিস্ট্রার উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদনও করেন।
এরপর ২০ জুন সকাল ১১.৩০ মিনিটে সেনবাগ সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস সংলগ্ন দলিল লিখক সমিতির অস্থায়ী কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম তালেবুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় এই কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়। উক্ত সভায় ঐ দু’জন অভিযুক্ত দলিল লিখকের সনদপত্র বাতিলের অভিযোগ প্রত্যাহার,অফিসের অনিয়ম ও অসদাচারণ বন্ধ না করা পর্যন্ত ২১ জুন সোমবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন সেনবাগ দলিল লিখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আইনুল হক বাহাদুর। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলমান রয়েছে।

অপর দিকে, সেনবাগ সাব-রেজিস্ট্রার তানিয়া তাহের তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলি মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন। ১৪ জুন তিনি অফিস কার্যক্রম সম্পাদনের পরও সন্ধা ৭টা পর্যন্ত দলিল রেজিষ্ট্রি করেন। এরপরেও আরো বাকী থাকা দলিলগুলি রেজিষ্ট্রি করার জন্য অফিসের বাহিরে দলিল লিখকগণ তাকে অবরুদ্ধ করে অসদাচরণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন।

দলিল লিখক সমিতি ও অফিসসুত্রে জানা যায়-চলতি বছরের মার্চ মাসে কবির হাট উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রার তানিয়া তাহের সেনবাগে সপ্তাহে দু’দিন (সোমবার ও মঙ্গলবার) অফিস করেন। গত দু’সপ্তাহ ধরে ডেপুটেশনে থাকা সাব-রেজিষ্ট্রারের সাথে দলিল লিখকদের বিভিন্ন মতবিরোধ ও বাকবিতন্ডা চলে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক,কয়েকজন দলিল লিখক সাংবাদিকদের কে জানান- কথিত কয়েকজন সিনিয়র দলিল লিখক কাগজ-পত্র সম্পূর্ণ ছাড়া দলিল রেজিষ্ট্রি করার জন্য দীর্ঘদিন যাবত প্রতিটি সাব রেজিস্ট্রারের সাথে বাক বিতন্ডায় লিপ্ত হয় তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও একই পথ অবলম্বন করেন,না হলে সেদিন দলিল জমা পড়ে প্রায় ১৬০টি তার মধ্যে রেজিষ্ট্রি হয় প্রায় একশ’টির বেশি। শুধু ৪/৫ জন সিনিয়র দলিল লিখকদের সাথেই ঝামেলা হয়।তাদের এ ঝামেলার কারনে নিরীহ দলিল লিখকগণ ও সাধারণ জনগন ভূক্তভোগী হন। তারাও এ সব ঘটনার সুষ্টু তদন্ত দাবী করেন।

অভিযুক্ত দলিল লিখক আলী হোসেন রতন বলেন- গত ৭ জুন রবিউল ইসলাম রিফাত (নাবালক) ও লতিফা আক্তার মিমি’র (নাবালিকা)পক্ষে অভিভাবক নিযুক্ত হয়ে মাতা শাহিদা আকতার ধাত্রী, ইস্রাফিল ভূঁইয়া গ্রহীতার দলিলটি সাব- রেজিষ্ট্রার বরাবরে দাখিল করলে সাব রেজিষ্ট্রার তানিয়া তাহের বলেন- বন্টন নামা,হেবা ঘোষণা, দানপত্র, নাদাবী পত্র,অছিয়ত নামা,উইল এবং নাবালক-নাবালিকার দলিল রেজিষ্ট্রি করার পূর্বেই কথা বলে নিতে হয়।অন্যথায় রেজিষ্ট্রি করতে হলে পনের হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেছেন বলে অভিযোগ করেন।

অন্যদিকে, আলী হোসেনের এ অভিযোগ অস্বীকার করে সাব-রেজিষ্টার তানিয়া তাহের বলেন- আমি বলেছি উপরোক্ত দলিলে যে যে সমস্যা গুলো ছিল তা সমাধান করে আনলেই আমি দলিল রেজিষ্ট্রির কাজ সম্পূর্ণ করে দিবো এবং অনেক বাকবিন্ডার পর সমস্যা সমাধান করে আসলে তিনি ঐ দিনই দলিলটি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
সাব-রেজিষ্ট্রার আরো বলেন-
আমার বিরুদ্ধে দলিল লিখকদের আনীত অভিযোগ গুলো সম্পুর্ন মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
বরং তারা আমার সাথে অসদাচরণ ও আমাকে অবরুদ্ধ করার জন্য আমি দুই লিখক আলী হোসেন রতন ও কাজী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি আশাকরি কর্তৃপক্ষ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ঐ লিখকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান,দলিল লেখক সমিতির নেতারা বুধবার স্থানীয় এমপি মহোদয়কে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন এবং তিনি জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন।

Loading