ছাত্রলীগের হল সম্মেলনে বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের নিন্দা ও প্রতিবাদ

শামীম রেজা শামীম রেজা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১২:৪৬ অপরাহ্ণ , মার্চ ১৭, ২০২২

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের হল সম্মেলনে সিটি করপোরেশনের মেয়র, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে(১৭ মার্চ) সাংবাদিকদের ই-মেইলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমান, রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাগীব শাহরিয়ার ও সেক্রেটারি তাসনীম আলম নামে যৌথ প্রতিবাদবার্তার কথা বলা হয়েছে।

‘ভোট ডাকাত মেয়র এখন হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের উস্কানি দিচ্ছেন— ছাত্রশিবির’ শিরোনামের এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের মাথা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়ে খায়রুজ্জামান লিটন আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তার এই বক্তব্য ফৌজদারি অপরাধের শামিল। তার আজন্ম সন্ত্রাসী চরিত্র ও বিকৃত রূপ জাতির সামনে প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রকাশ্যে বর্বর, সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের মাথা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘তার সাথে সুর মিলিয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেছেন,’যেখানেই জামায়াত-শিবির সেখানেই গণধোলাই।’ একই সময় চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘জামায়াত-শিবিরকে রুখে দিতে সকল ধরনের সহযোগিতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ করবে’এসব বক্তব্য কোন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা ছাত্রসংগঠনের নেতার হতে পারে না বরং তা সন্ত্রাসী-বর্বরদের বক্তব্য। আদর্শহীন সন্ত্রাসনির্ভর আওয়ামী রাজনীতির ভয়াল চিত্রটি তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে দেশবাসী আবারো দেখতে পেয়েছে।’

‘রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক খায়রুজ্জামান লিটন, তা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট। খায়রুজ্জামানের মত আওয়ামীলীগ নেতাদের সরাসরি মদদে তাদের লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের নৃশংস বর্বরতায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আবরার ফাহাদ,আবু বকর,শরীফুজ্জামান নোমানীসহ বহু মেধাবী ছাত্র নেতা নিহত হয়েছে। ফলে আওয়ামীলীগ যেমন দেশে গণধিকৃত হয়েছে তেমনি ছাত্রলীগ সর্বগ্রাসী বর্বরতা ও নৃশংসতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ‘

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,’ছাত্রশিবিরকে হত্যার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। সকল ধরনের সন্ত্রাস মোকাবেলা করেই ছাত্রশিবির আজ গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ছাত্রশিবিরের পথচলার শুরুতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই চারজন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে খুন করে আমাদের পথ চলা থামিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা ও নির্যাতন করেছেন। একইভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সর্বগ্রাসী জুলুম, নির্যাতন,অবিচার ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছাত্রশিবিরকে দমন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রশিবিরের পথচলায় সামান্যতম বিঘ্ন ঘটাতে সক্ষম হননি। আপনাদের বক্তব্যেই প্রমাণ হয়েছে এত কিছুর পরও রাজশাহীতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আপনারা ভীত-সন্ত্রস্ত। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, মেয়র খায়রুজ্জামান বা তার হাতিয়ার সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের হুমকিকে ছাত্রশিবির পরোয়া করে না।’

এতে আরো বলা হয় ‘রাষ্ট্রীয় শক্তিকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক বাহাদুরি সুস্পষ্ট কাপুরুষতা। পুলিশের বেষ্টনি থেকে বের হয়ে রাজনৈতিকভাবে রাজনীতির ময়দান মোকাবিলা করুন। তখন দেখবেন জামায়াত-শিবিরের মাথা কাটা দূরে থাক গণধিক্কারের সামনে নিজেদের মাথা উঁচু করে হাঁটতে পারবেন না। ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্মূল করার দিবাস্বপ্ন আপনাদের কোনদিনই পূরণ হবে না, ইনশাআল্লাহ। ছাত্রশিবির আপনার বা ছাত্রলীগের মতো সন্ত্রাসনির্ভর সংগঠন নয়। ছাত্রশিবির ছাত্রজনতার সংগঠন, যার সাক্ষী এদেশের জনগণ। ইসলামী ছাত্রশিবির অতীতেও আপনাদের মত উগ্র সন্ত্রাসবাদীদের আদর্শ দিয়ে মোকাবেলা করে এ পর্যন্ত এসেছে এবং ভবিষ্যতেও একইভাবে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’

প্রকাশ্যে মাথা কেটে ফেলার নির্দেশ দেওয়ার অপরাধে বক্তব্যদাতাদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

এছাড়া,বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়,’আমরা আশাকরি ন্যূনতম রাজনৈতিক শিষ্টাচারবোধ থাকলে তারা তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করবে।’

Loading