হেনস্তার শিকার জাবি ছাত্রী, আটক পুলিশ কনস্টেবল

প্রকাশিত: ১:৩৯ অপরাহ্ণ , জুন ১২, ২০২৩

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে।

রোববার (১১ জুন) রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে৷ অভিযুক্ত ওই পুলিশ কনস্টেবল মেহমুদ হারুন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনসে কর্মরত, তার বাড়ি সাভার উপজেলায়।

উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন রাস্তায় এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করেন ওই পুলিশ কনস্টেবল ও তার সাথে থাকা যুবক বিদ্যুৎ চৌধুরী। এ সময় ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী তার মীর মশাররফ হোসেন হলের বন্ধুদের কল করেন এবং তার বন্ধুরা তাদের ধাওয়া করলে অভিযুক্তরা হল সংলগ্ন ফটক দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন।
এসময় কনস্টেবলের সাথে থাকা একজন পলিয়ে গেলেও ওই কনস্টেবলকে ধরে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তিতে কনস্টেবলকে গণপিটুনি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছে তুলে দেয় শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনের রাস্তা দিয়ে একা একা হলে ফিরছিলাম। গার্ডেনের মোড়ে যখন আসি তখন দু’জন লোক আমার গতিরোধ করে এবং আমি ক্যাম্পাসের কিনা জিজ্ঞেস করে। আমি ফরমাল পরিচয় দেই কিন্তু পরক্ষণেই ওনাদের আচরণে বুঝি যে ওনারা ক্যাম্পাসের না। আমি চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারা আমার পথ আটকায় এবং আমাকে হেনস্তা করা শুরু করে।

এক পর্যায়ে আমাকে যৌন নীপিড়নমূলক এবং আপত্তিকর বিভিন্ন কথা বলা শুরু করে। আমার ফোন নাম্বার চায়। ওই মুহূর্তে আমি একটা রিকশা দেখে দাঁড় করাই এবং দ্রুত রিকশায় উঠে স্থান ত্যাগ করতে চাইলে তারা বার বার রিকশা থামায় এবং ফোন নাম্বার নিতে জোরাজুরি করে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও জানান, এক পর্যায়ে আমি কোনভাবে রিকশাওয়ালা সহায়তায় ওই স্থান ছেড়ে এম এইচ হলের সামনে এসে বন্ধুদের কল দেই। এসময়ে এমএইচ হলের দোকানগুলোর সামনে তাদের আবার দেখতে পাই এবং তাদের ধরতে উদ্যত হলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় আমি এবং আমার বন্ধুরা একজনকে ধরতে পারি এবং বাকি একজন পালিয়ে যায়।

অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল মেহমুদ হারুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার কাছে অভিযোগ স্বীকার করেছেন। এসময় তার কাছে অবৈধভাবে ব্যবহার করা হ্যান্ডকাফ, নকল ওয়াকিটকি এবং আইডি কার্ড পাওয়া যায়।

নিরাপত্তা শাখার যোগাযোগের প্রেক্ষিতে রাত ১২টায় আশুলিয়া থানার ওসি কামরুজ্জামান অভিযুক্ত মেহমুদ হারুনকে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যান।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান সুদীপ্ত শাহিন বলেন,‘অভিযুক্ত প্রাথমিকভাবে তার দোষ স্বীকার করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বাদি হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। অভিযুক্তকে আশুলিয়া থানায় সোপর্দ করেছি।’

আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি অবহিত হয়েছি। সে যা করেছে তা আমাদের পুলিশদের জন্য অসম্মানের। অফ ডিউটিতে থাকাকালীন সে ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডকাফ ব্যবহার করেছে, যা অবৈধ। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে সে যেনো সর্বোচ্চ শাস্তি পায় সে ব্যবস্থা করা হবে।’

সহকারী প্রক্টর এস এম এ মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘নিরাপত্তা শাখা খবর পেয়ে অভিযুক্তকে আটক করা হয়। তিনি একজন পুলিশ কনস্টেবল। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়াও আশুলিয়া থানা কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

Loading