রাবিতে স্বাধীনতা দিবসে শিক্ষার্থীদের বিশেষ খাবার কেড়ে নিল ছাত্রলীগের নেতারা

শামীম রেজা শামীম রেজা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ৭:১৮ অপরাহ্ণ , মার্চ ২৬, ২০২২

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত বিশেষ খাবারের শতাধিক প্যাকেট কেড়ে নিয়ে গেছে ছাত্রলীগের নেতারা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শনিবার (২৬ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হলে এ ঘটনা ঘটে। ফলে হলটির অনেক আবাসিক শিক্ষার্থীই স্বাধীনতা দিবসের এই বিশেষ খাবার থেকে বঞ্চিত হয়।

অভিযুক্তরা হলেন- জোহা হলের সভাপতি চিরন্তন চন্দ ও তার অনুসারী ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফারসি বিভাগের শিক্ষার্থী বাঁধন ও ওয়াহিদ। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলাম। তার অনুসারী তুষার, মিনাল ও আলামিন প্রমুখ। তাদের সঙ্গে অন্যান্য হলের বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মীও ছিল। গত বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যায়ের হল কমিটি ঘোষণা হয়। কমিটিতে নেতৃত্ব পাওয়ার দু’দিনের মাথায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এমন কর্মকাণ্ড ঘটালেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আবাসিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য একবেলা বিশেষ খাবারের বরাদ্দ করে কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৩০ টাকার বিনিময়ে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়। শনিবার দুপুর ১২টা থেকে হলের ডাইনিং কর্মচারীরা টোকেন জমা নিয়ে খাবার পরিবেশন শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের চিরন্তন চন্দ ও মো. মোমিনসহ অন্তত বিশজন বিনা টোকেনে খাবার নিতে যান। এ সময় সেখানে হল উপস্থিত হল কর্তৃপক্ষের নিষেধ সত্ত্বেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে খাবার নিয়ে যায় তারা। তারা প্রত্যেকেই ৫-৭টি করে প্যাকেট নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান। এতে হলটির অন্তত ১০০ জন শিক্ষার্থী খাবার থেকে বঞ্চিত হন।

হল সূত্রে জানা যায়, জোহা হলে ৪৩০ জন আবাসিক শিক্ষার্থী থাকেন। আবাসিক শিক্ষার্থী ও হলের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য মোট ৪৮০ প্যাকেট খাবার প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাদের এমন কর্মাকাণ্ডে খাবার ঘাটতি তৈরি হয়।

নাম প্রকাশ না করে খাবার না পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘তিনদিন আগে আমি বিশেষ খাবারের টোকেন কিনে নিয়েছিলাম। কিন্তু দুপুর এক টার একটু আগে গিয়ে খাবার পাইনি। পরে প্রাধ্যক্ষ স্যার বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসে আমাদের দিয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সভাপতি চিরন্তন চন্দ বলেন, ‘হলের প্রাধক্ষ্য স্যার ছাত্রলীগের সবার খাবার একসাথে দেবে বলে আমরা সেখানে যাই। তবে আমি ডাইনিং এ খুব অল্প সময় থাকার পর চলে আসি। আমাদের আসার পর হলে অনেকে নাম ভাঙ্গিয়ে খাবার নিতে পারে। সে বিষয়ে বলতে পারছি না। আমরা কোনো বেশি খাবারের প্যাকেট নেই নি।’

হল প্রাধ্যক্ষ একরামুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকেই আমরা খাবারের প্যাকেটসহ আনুষাজ্ঞিক কাজ করছিলাম। খাবার বিতরণ শুরু করলে ছাত্রলীগের প্রায় ২০ জন এসে টোকেন ছাড়াই অনেকগুলো খাবারের প্যাকেট নিয়ে যায়। আমরা বার বার বলার পরও তারা কোনো কথা শোনেনি। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের খাবার দিতে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি, তারা এখন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘জোহা হলে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা কুপন দেখিয়ে খাবার নিয়েছে।’

Loading