সিরাজগঞ্জে মনোতোষ হত্যায় ৬ যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ৫:১২ অপরাহ্ণ , অক্টোবর ২৫, ২০২৩

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে মনোতোষ (৩২) নামে এক যুবককে হত্যা ও মুক্তিপণ দাবির অপরাধে ৬ যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

আজ বুধবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা মো: নাজির এ রায় দেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, বেলকুচি উপজেলার খাস সোনামুখী মধ্যপাড়া গ্রামের আনন্দ সরকারের ছেলে সুজন কুমার সরকার, বিশ্বাস বাড়ি এলাকার আবু তালেবের ছেলে রুবেল, বলরামপুর পূর্বপাড়া এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে শিপন একই গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে ইউসুফ আলী, জলিল মণ্ডলের ছেলে লিটন মণ্ডল ও সড়াতৈল গ্রামের মৃত মোখদম সরদারের ছেলে রায়হান সরদার।

এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত রায়হান সরদারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপশি ৩৪ ধারায় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে বিচারক।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার রাশেদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন দণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামির মধ্যে ৫ জন রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন। আসামি সুজন কুমার সরকার পলাতক আছেন।

মামলার অভিযোগ পত্রে বলা হয়, আসামি রায়হান সরদার ও শিপন ভিকটিম মনোতোষের পিতার স’মিলে কাজ করতো। কাজের সময় আসামি রায়হান সরদার মনোতোষের পিতার নিকট থেকে ২২ হাজার টাকা ঋণ নেয়। কিছুদিন পর মনোতোষের পিতার স’মিলটি বন্ধ হয়ে গেলে তারা অন্য জায়গায় কাজ করেন। মনোতোষের পিতা পাওনা টাকার জন্য রায়হান সরদারকে চাপ দিলে ও বকাঝকা করলে রায়হান ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন।

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আসামি রায়হান সরদার, সুজন কুমার সরকার, রুবেল, শিপন, ইউসুফ আলী, লিটন মণ্ডলের সাথে শলাপরামর্শ করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রায়হান সরদার আসামি শিপনের বাড়িতে পিকনিকের আয়োজন করে এবং ভিকটিম মনোতোষকে দাওয়াত করেন। ভিকটিম মনোতোষ আসামি সুজনকে সাথে নিয়ে রাত ৮টার দিকে সুজনের বাড়িতে পিকনিক খেতে আসে।

খাওয়ার পর আসামি সুজন কুমার সরকার, রুবেল, রায়হান সরদার, শিপন,ইউসুফ আলী ও লিটন মন্ডল ভিকটিম মনোতোষকে বেঁধে রেখে তার পিতার কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির পরিকল্পনা করেন।

আসামিরা ভিকটিম মনোতোষকে বেলকুচি উপজেলার বিশ্বাসবাড়ী হুরা সাগর নদীর উত্তর পাশে জনৈক নুরনবীর ইউক্যালিপটাস বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে তারা মদ ও গাঁজা খায় এবং ভিকটিম মনোতোষকে পরিকল্পনা করে মদের মধ্যে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে বেশি পরিমাণ মদ খাওয়ায়। এসময় ভিকটিম মনোতোষ নিস্তেজ হলে আসামিরা ভিকটিম মনোতোষকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পার্শ্ববতী একটি ধুইঞ্চা ক্ষেতে কচুরী পানা দিয়ে ঢেকে রাখে।

পরে তারা মনোতোষকে আত্মীয় স্বজনের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

এ ঘটনায় নিহতের চাচাতো ভাই অচিন্ত কুমার সরকার বাদী হয়ে বেলকুচি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা চলাকালে ১৭ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত।

সাক্ষ্য সমাপ্তি শেষে আজ ৬ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক।

Loading