দেশি-বিদেশি সংস্থায় ৬৬৪ পুলিশ কর্মকর্তার তালিকা পাঠিয়েছে বিএনপি

প্রকাশিত: ২:২১ অপরাহ্ণ , জুন ১৭, ২০২৩

বাংলাদেশ পুলিশের অতি উৎসাহী ৬৬৪ কর্মকর্তার প্রাথমিক তালিকা করেছে বিএনপি। এ তালিকা ইতোমধ্যে দেশে এবং বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিনিধি বা সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে।

গুম-খুন, নিপীড়ন, গায়েবি মামলার সঙ্গে জড়িত ও কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন এসব কর্মকর্তা। এছাড়া এ তালিকায় আছেন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সুপার (এসপি)। স্থানীয় নেতাদের পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী এ তালিকা করা হয়েছে। বিএনপির দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, অতীতে যারা গুম-খুন বা বড় ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদেরও এ তালিকায় আনা হবে। নির্দিষ্ট কোনো কারণে এ তালিকা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

তথ্য সংগ্রহ কমিটির সদস্য এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন খান বলেন, মোট ৬৬৪ কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৯৫ জন এসপি থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন। ইতোমধ্যে তা যেখানে পাঠানো দরকার সেখানে পাঠানো হয়েছে।

দেশব্যাপী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচিতে বাধাদানকারী ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করতে ২৩ মে ১৪ সদস্যের একটি ‘তথ্য সংগ্রহ কমিটি’ গঠন করে বিএনপি। এই কমিটি গায়েবি ও মিথ্যা মামলা, গুম-খুন, সহিংস আক্রমণ, অগ্নিসংযোগসহ কর্মসূচিতে বাধাদানকারী ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করছে। বিশেষ করে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ওই ‘কর্মকাণ্ডে’ জড়িত তাদের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে গত মাসের শেষদিকে বিএনপির সব জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।

এরই মধ্যে অধিকাংশ জেলার নেতারা তাদের রিপোর্ট কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। সেই রিপোর্ট থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সেল পুলিশের ৬৬৪ কর্মকর্তার নামের একটি প্রাথমিক তালিকা করেছে। এতে ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, এসপিসহ মোট শতাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন। এদের বেশিরভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের। যারা সবাই এখন পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের বিভিন্ন বড় পদে কর্মরত আছেন। বাকিরা থানার ওসিসহ নিচের সারির কর্মকর্তা। -যুগান্তর

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তথ্য সংগ্রহ কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক বিএনপি নেতা জানান, এসব কর্মকর্তা গুম, খুন, হামলা, মামলার সঙ্গে জড়িত আছেন-যার যথাযথ প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং সেই অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করার পরই এ তালিকা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এসব কর্মকর্তা তাদের কৃতকর্মের মাধ্যমে সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, দেশের প্রচলিত আইনসহ পৃথিবীর সব আইনেই তারা দোষী। যেসব পুলিশ কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে, তারা সবাই কমবেশি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত সারা দেশে দলটির সহস াধিক নেতাকর্মীকে হত্যা ও ৬০০ জনকে গুম করেছে সরকার। নেতাকর্মীর নামে মামলার সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এসব মামলায় আসামি ৩৬ লাখ। এখনো কারাগারে আটক আছেন ২০ হাজার।

বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন সময় গুম-খুন, নিপীড়ন, গায়েবি মামলার সঙ্গে জড়িত পুলিশের অধস্তন কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর সেটি ঢাকাস্থ দূতাবাসের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা হবে। এছাড়া সেটা দলের আর্কাইভেও সংরক্ষণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থায় জালিয়াতি ও অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে, সেই ব্যক্তিকে ভিসা দেবে না ওয়াশিংটন। এই নীতির আওতায় থাকবেন বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য। আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও এর আওতাভুক্ত হবেন। এছাড়া বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রকাশে বাধা দিলেও ভিসা পাবে না জড়িত ব্যক্তি।

সূত্র জানায়, ভিসানীতি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী নির্বাচন ও চূড়ান্ত আন্দোলন সামনে রেখে পুলিশের এসব কর্মকর্তাকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এর অংশ হিসাবেই এই তালিকা করা হয়েছে।

Loading