উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে উন্নীত কতটুকু?

প্রকাশিত: ১১:২২ অপরাহ্ণ , জানুয়ারি ৩১, ২০২৩

কামাল পারভেজ

সংবিধান অনুযায়ী গণতন্ত্রের ৫টি মৌলিক অধিকার পরিপূর্ণ করা রাষ্ট্র সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এই ৫ মৌলিক অধিকার দেওয়ার অর্থ হচ্ছে জনগণকে রাষ্ট্রের বেষ্টনীতে একটা লিপিবদ্ধের তালিকা। যদি আমরা রাষ্ট্রের মূলনীতির দিকে তাকাই তাহলে সংবিধান কি উল্লেখ করেছে সেটাই একটু দেখা যাক।
মূলনীতিসমূহ

(১) জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে।

(২) এই ভাগে বর্ণিত নীতিসমূহ বাংলাদেশ-পরিচালনার মূলসূত্র হইবে, আইন-প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তাহা প্রয়োগ করিবেন, এই সংবিধান ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে তাহা নির্দেশক হইবে এবং তাহা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কার্যের ভিত্তি হইবে, তবে এই সকল নীতি আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হইবে না৷

জাতীয়তাবাদ
(৩) ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।]

সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি
(৪)মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।

মূলনীতি নিয়ে যা দেখতে পেলাম তার সঠিক পরিচর্যা ও সরকার কতৃক জনগণের উপর অর্পিত চার নীতি কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে তা নিয়ে এখন ধূম্রজালে পরিনত। তবে পুরো পৃথিবী যখন একটা পরিবর্তনের নিশান তৈরি হতে চলছে তাহলে আমাদের দেশ যুগের সাথে তাল মিলে আধুনিকায়ন হবেনা কেন। এই আধুনিকায়নকে উন্নয়নের চাবিকাঠি বলে একটা পরিবর্তনের স্লোগান তৈরির বাহক হিসেবেই কাজ করছে। [[ যেমন দেশজুড়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন হচ্ছে। সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশে উন্নয়নের অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, দারিদ্র্য বিমোচন, শান্তি, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি আজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে। উন্নয়নে অর্থনীতির গতিশীলতা এবং ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। করোনা মহামারির সংকটকালেও আমাদের অর্থনীতি অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় সচল থেকেছে, এটা গর্ব করার মতো। সমগ্র জাতি আশাবাদী যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উন্নীত হবে।]] উপরস্থ লেখা গুলো তুলে ধরা হলো বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ভূমিকার কত পার্সেন্ট সফলতা এবং গড় হারে সাধারণ জনগণ নিরব দুর্ভিক্ষতার সাথে যুদ্ধ করছে তা নিম্নে তুলে ধরেছি ।

উন্নয়ন দেশের সম্পদ ও সৌন্দর্যের প্রতিক হতে পারে সেটাকে আবার উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া ঠিক হবেনা, কারণ যে দেশ এখনো দারিদ্র্যের ঘেরা জাল থেকে বের হতে পারছেনা এবং মিথ্যার আবর্তনে কখনোই দারিদ্র্য বিমোচন ও দূরীকরণ, দারিদ্র্যতা ২০% নিম্নে দাঁড়িয়েছে এই শব্দ ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশ বলে চালিয়ে দেওয়া যায়না,(এখনো ৪০% সাধারণ মানুষ দারিদ্র্য সীমার মধ্যেই বসবাস করছে)। আমরা বলতেই পারি ১০০% উন্নয়ন হয়েছে, তবে তার টেকসই কত পার্সেন্ট নিশ্চয়তা দিচ্ছে সেটাই প্রাধান্যতা পায়, কিন্তু আজ তার উল্টোটা দেখা যায়। এখানে জীবনমান ভোগবিলাসের স্তর নির্দেশক এবং এটি বহুমাত্রিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধের বহিঃপ্রকাশও বটে। কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনি জীবনমান নিয়ে কথা বললে অনেক বিষয়ই বিবেচনায় চলে আসে। জীবনমানের প্রধান নিয়ামক নাগরিকের আয় এবং এর সঙ্গে জড়িত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পেশা, সামাজিক নিরাপত্তা, পরিবেশসহ জীবন ধারণের অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সদ্ব্যবহারে নাগরিকের জন্য রাষ্ট্র প্রদত্ত উন্মুক্ত সুযোগ সুবিধা।

 

তাই এ প্রক্রিয়াটি রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টার উৎপাদিত ফসল। জীবনমানের উন্নয়ন রাতারাতি অর্জিত হয় না। এ উন্নয়নের যাত্রা দীর্ঘমেয়াদি, আর সময়সাপেক্ষ, সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে ওপরে উঠতে হয়।যদি প্রশ্ন করা হয় পুরো দেশই উন্নয়নে ভরপুর কিন্তু জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কতটুকু পরিবর্তন এসেছে তার সঠিক জবাব কি আমরা পাবো। বাংলাদেশ উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে যে পথে হাঁটছে সেটা সহজ সরল বলা যাবে না। এখানে সম্ভবনার পাশাপাশি আছে অনেক চ্যালেঞ্জ, আছে ঝুঁকি, আছে সুযোগও। এ অভিযাত্রার সাফল্য দেশের আপামর জনগণকে পৌঁছে দিতে হলে জীবনমান উন্নয়নের অনুঘটকগুলো সার্বিক নজরদারিতে রাখা সরকারের দায়িত্ব। দায়িত্বশীলতায় অবহেলা থাকলে দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের অর্জনগুলো একপেশে হয়ে যাবে।
একটি উন্নত দেশ তার নাগরিকদের মুক্ত ও নিরাপত্তাসহ উপযুক্ত পরিবেশ, স্বাস্থ্যকর জীবন প্রদানের সক্ষমতা ধারণ করে। সেই অর্থে একটি দেশের উন্নয়নের মানদণ্ডের সূচক শুধু অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সীমাবদ্ধ থাকে না, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি দেশটির উন্নয়নের মাপকাঠি সেই দেশের জনগণ তথা নাগরিকদের জীবনমানকেও অন্তর্ভুক্ত করে। তবে গণতন্ত্রের গলা চেপে ধরে নিজের আস্ফাল ঘটানো হয়, তাহলে কি তাঁকে উন্নয়ন বলবেন নাকি উন্নীত বলবেন। যেখানে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি, এবং দারিদ্র্যতা দূরীকরণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি, জনগণের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা যায়নি, রাষ্ট্র কতৃক জনগণের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা যায়নি, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার রাষ্ট্র কতৃক নিশ্চয়তা নেই তাহলে কি এই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি কখনো জনগণের উন্নীত হতে পারে। এখানে একটা বিষয় পরিস্কার হওয়ার প্রয়োজন সরকার বলছে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নত থেকে উন্নীত হবে, কিন্তু সাধারণ জনগণের আদোও উন্নীত কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে তা স্পষ্ট ভাষায় দলিয় সরকার নিশ্চিত করছেন না। সাধারণ জনগণ যেভাবে উন্নয়ন চায় ঠিক তদরুপ খেটেখুটে খাওয়া মানুষ গুলো তাদের উন্নীত ও পরিবর্তন চায়। যতক্ষণ না পর্যন্ত সাধারণ জনগণ উন্নীত হচ্ছে না সেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া একটা অভিশাপগ্রস্ত হয়ে থেকে যাবে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেও আমরা দাবিদার করতে পারছিনা।

লেখক -সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

Loading