বালাগাল উলা বিকামালিহি কাসাফাদ্দোজা বিজামালিহি

প্রকাশিত: ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ , সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী

মহান আল্লাহ পাক নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রতি সালাত, সালাম, দোয়া ও দরূদ প্রেরণের তাকিদ আল-কুরআনে এভাবে করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দোয়া ইস্তেগফার করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর ওপর সালাত পাঠ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও’। (সূরা আল আহযাব : আয়াত ৫৬)

এই আয়াতে কারীমায় আসল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো মুমিন মুসলমানদের নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করার আদেশ দান করা। তবে, তা এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, প্রথমে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং নিজের ও তাঁর ফেরেশতাগণের দরূদ ও দোয়া পাঠানোর কথা উল্লেখ করেছেন। তারপর সাধারণ মুমিনগণকে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এরই আলোকে আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীন এ বিষয়ে একমত যে, কেউ রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর নাম উচ্চারণ করলে অথবা শুনলে দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে ফাতহুল কাদীর) কেননা, এরূপ ক্ষেত্রে হাদীসে দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব হওয়া বর্ণিত আছে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন: ‘সেই ব্যক্তি অপমানিত হোক যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে দরূদ পাঠ করে না’। (জামেয়ে, তিরমিজী : ৩৫৪৫) অন্য এক হাদীসে আছে : ‘সেই ব্যক্তি কৃপণ, যার কাছে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে দরূদ পাঠ করে না’। (জামেয়ে তিরমিজী : ৩৫৪৬)

বস্তুত আরবি ভাষায় সালাত শব্দের অর্থ রহমত, দোয়া, প্রশংসা। আল- কুরআনের সে সকল আয়াতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রতি যে সালাত সম্পৃক্ত করা হয়েছে এর অর্থ হলো আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রশংসা করেন। তাঁর কাজে বরকত দেন। তাঁর নাম ও সম্মান বুলন্দ করেন। তাঁর প্রতি নিজের রহমত ও করুণার বারি বর্ষণ করেন। (তাফসীরে ইবনে কাসির)

আর দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর সম্মান ও মর্যাদা এই যে, তিনি ফেরেশতাদরে কাছে তাঁর কথা আলোচনা করেন। তাছাড়া তাঁর নামকে সমুন্নত করেন। তিনি পূর্ব থেকেই তাঁর নাম সমুন্নত রেখেছেন। ফলে, আযান ইকামাত ইত্যাদিতে আল্লাহ তায়ালার নামের সাথে তাঁর নামও শামিল করে নিয়েছে। তাঁর স্বীয় ইসলামকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন, প্রবল করেছেন। তাঁর শরীয়তের কাজ কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছেন এবং তাঁর শরীয়তের হেফাজতের দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করেছেন। (তাফসীরে রূহুল বয়ান)

আর আখেরাতে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর সম্মান ও মর্যাদা এই যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর স্থান সমগ্র সৃষ্টির ঊর্র্ধ্বে রেখেছেন। যে সময় কোনো নবী ও ফেরেশতার সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না, তখনো আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সুপারিশের ক্ষমতা দিয়েছেন। যাকে ‘মাকামে মাহমুদ’ বলা হয়। (জালাউল আফহাস)

আর ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর ওপর সালাত প্রেরণের অর্থ হচ্ছে তারা তাঁকে চরমভাবে ভালোবাসেন এবং তাঁর জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করেন, আল্লাহ যেন তাঁকে সর্বাধিক মর্যাদা দান করেন। তাঁর শরীয়তকে প্রসার ও বিস্তৃতি দান করেন। তাঁকে সর্বোচ্চ প্রশংসিত স্থানে পৌঁছে দেন। তাঁর ওপর রহমত নাজিল করেন। (তাফসীরে কুরতুবী)

আর সাধারণ মুমিনদের তরফ থেকে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণের অর্থ দোয়া ও প্রশংসার সমষ্টি। রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রতি দরূদ পড়ার ফজিলত সংক্রান্ত অনেক হাদীস রয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর দরূদ পাঠ করে ফেরেশাতারা তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকে যতক্ষণ সে দরূদ পাঠে মশগুল থাকে’। (মুসনাদে আহমাদ: ৩/৪৪৫, সুনানে ইবনে মাজাহ : ৯০৭)

রাসূলুল্লাহ (সা:) আরো বলেছেন : ‘সে আমার ওপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশবার দরূদ পড়েন’, রহমত বর্ষণ করেন। (সহীহ মুসলিম : ৩৮৪)

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: ‘কিয়ামতের দিন আমার সাথে থাকার সবচেয়ে বেশি হকদার হবে সেই ব্যক্তি, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরূদ পড়বে’। (জামেয়ে তিরমিজী : ৪৮৪)

শুধু তাই নয়, মহান আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাহগণকেও সালাম সম্ভাষণ দ্বারা অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করবেন। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘যেদিন তারা আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ করবে, সে দিন তাদের অভিবাদন হবে সালাম’। (সূরা আল আহযাব: আয়াত ৪৪)। এখন প্রশ্ন হলোÑ এ সালাম কখন দেয়া হবে? এর উত্তরে বিভিন্ন সম্ভাবনার উল্লেখ করা হয়েছে। (ক) আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন হলো আখেরাতের দিন। সেদিন আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাহগণকে সালাম সম্ভাষণ জ্ঞাপন করবেন। (খ) জান্নাতে প্রবেশকালে আল্লাহ ও ফেরেশতাগণের পক্ষ হতে সালাম পৌঁছানো হবে। (গ) মৃত্যুদিবসে সকল মুমীন বান্দাহগণ সমগ্র বিশ্বের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তিতে রাখুন! আমীন!! – ইনকিলাব

Loading