মির্জাপুরে জমি সংক্রান্ত জেরে ৮ মাস যাবত বৃদ্ধের পরিবার ‘এক ঘরে’

প্রকাশিত: ১০:০৩ অপরাহ্ণ , ডিসেম্বর ২০, ২০২১

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এক বৃদ্ধের পরিবারকে ‘এক ঘরে’ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের সিংজুরি গ্রামে মেছের আলী নামের এক বৃদ্ধের ৮ মাস যাবত এক ঘরে করে রেখেছে সমাজ প্রতিরা। এ নিয়ে স্থানীয় মাতাব্বর ও থানা পুলিশকে জানিয়েও কোন সুরাহা পায়নি ওই বৃদ্ধের পরিবার।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাতগ্রাম ইউনিয়নের সিংজুরি মৌজায় সিএস খতিয়ান ৩৭ ও ২৪ এসএ খতিয়ান ২৬, ৬২, ৬৩, আরএস খতিয়ান ১৫২, ২০২, ২২৬, ৩১৩ এর সিএস ও এসএ দাগ ৪৭৬, ৪৬৮, ৪৭৫ আরএস দাগ ৬৪২, ৬৪৩, ৬৪৪ এর মোট ২০ শতাংশ জমির মালিক মৃত আজগর আলীর ছেলে মেছের আলী। দীর্ঘ দিন ধরে সে জমি ভোগ দখল করে আসছে। পার্শ্ববর্তী জমির মালিক রতন বিশ্বাস ও রফিক মিয়া এবং বাদশা মিয়ার নামে মেছের আলীর জমি দখলের পায়তারা করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের ৪ মার্চ ১৪৪ ধারায় অভিযুক্তদের নামে মামলা দিলে আদালত থেকে দখল অবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। এছাড়াও ২৪ এপ্রিল মির্জাপুর থানা কর্তৃক শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নোটিশ জারি করা হয়। পরবর্তীতে রতন বিশ্বাস মেছের আলীসহ চার জনের বিরুদ্ধে ১০৭/১১৭ (গ) ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ‘ক’ অঞ্চলে মামলা দায়ের করেন। নিজে বাদি হয়ে মামলা করলেও ওই মামলায় রতন বিশ্বাস কখনও গর হাজিরা আবার কখন আদালতের কাছে সময়ের আবেদন করেন। ৩১ মার্চ মেছের আলী রেকর্ড সংশোধনের জন্য মামলা করেন। ২ মে থেকে সমাজে এক ঘরে ও তার দোকান বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ করেন মেছের আলী। তার পর থেকে ওই সমাজের মসজিদে ও কোরবানী দিতে পারেননি মেছের আলী। ৭ ও ১৮ মে দুই দফায় মেছের আলীর ১৪ শতাংশ জমির ধান কেটে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে রতন বিশ্বাসসহ ১২/১৩ জনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে মেছের আলী বাদি হয়ে আদালতে ৯ মে মামলা ও থানায় ১৯ মে অভিযোগ দায়ের করেন। ইতিপূর্বে ১০ মার্চ ও ২৭ এপ্রিল মেছের আলীর মুদি দোকানে গিয়ে তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ২ এপ্রিল ও ২৮ এপ্রিল মির্জাপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন তিনি। ২৮ অক্টোবর মেছের আলীর দীর্ঘকাল যাবত ভোগ দখল বিদ্যমান মর্মে স্থিতিবস্থা বজার রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। মেছের আলীর দায়েরকৃত অপর একটি মামলায় রতন বিশ্বাসসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনের ১৪৩/৩৭৯ ধারায় সমন ইস্যু হলে ২০ ডিসেম্বর ৮ জনের জামিন মঞ্জুর ও ২ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জারির আদেশ হয়।
আরও জানা যায়, গত ১১ ডিসেম্বর বিকেলে মেছের আলী নিজ জমিতে কাজ করতে গেলে একই গ্রামের রফিক মিয়া, বাদশা মিয়া, শিপ্রা বিশ^াস, রতন বিশ^াস, বাছিরন, আশিুতোষ সরকার ও ধন্য খাসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী লাঠিসোঠা ও দেশীয় ধারালো অস্র নিয়ে মেছের আলী গংদের উপর হামলা চালায়। হামলায় বৃদ্ধ মেছের আলী, শুকুর আলী ও দুলাল মিয়াসহ ৪ জন গুরুতর আহত হয়। ওই দিন রাতে মেছের আলী বাদি হয়ে মির্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
মেছের আলী বলেন, ২০ শতাংশ জমিই তার দখলে এবং যুগ যুগ ধরে ভোগদখল করে আসছেন। এলাকার রতন, বাদশা, রফিক, নাজিম মেম্বার, আজাহার, দুলাল সিকদার, ছানোয়ার, চান মিয়া, বাবলুসহ একাধিক ব্যক্তি এলাকায় আধিপত্য বিরোধকে কেন্দ্র করে তাদের দীর্ঘ দিন ধরে অন্যায় ভাবে অত্যাচার নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছে। আরএস ৬৪৩ দাগের ১০ শতাংশ বেআইনিভাবে রতন বিশ্বাসকে গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তারা সমাজের মাতাব্বরদের নিয়ে আমাকে এক ঘরে করে রাখে। এছাড়াও আমার দোকান বন্ধ ও মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ ও কোরবানী দেওয়া বন্ধ করে দেন।
ওই এলাকার মাতাব্বর চান মিয়া বলেন, তারা আমাদের এলাকার মাতাব্বরসহ অনেকের নামে মামলা দিয়েছেন। তাদের জমি সংক্রান্ত বিষয় ও এক ঘরে করে রাখার বিষয়টি আমাদের অবগত করেননি। তারা আমাদের কাছে আসলে সমাজে বসে সমাধান করে দেওয়া হতো।
স্থানীয় চেয়ারম্যান আজাহারুল ইসলাম বলেন, তারা আমার নামেও মামলা দায়ের করেছেন। তবে তাদেরকে সমাজে বন্ধ করে রাখা হয়েছে কিনা তা আমি সঠিক বলতে পারবো না।
মির্জাপুর থানার এসআই মজিবর রহমান বলেন, জমিতে মেছের আলী ধান লাগালেও রতন বিশ্বাস সেই ধান কেটে নেয়। মেছের আলীর কাগজপত্র ঠিক আছে। এ বিষয় নিয়ে মারামারি হয়। পরে তারা পৃথক দুটি থানায় অভিযোগ করেন। বর্তমানে মেছের আলী দুলাল মিয়ার বাড়িতে অবস্থান করছে। নির্বাচন শেষ হলে সামাজিকভাবে বসে সমাধান করা হবে।

Loading