চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ ধর্ষণ মামলায় দুই আসামীর যাবজ্জীবন

প্রকাশিত: ৩:১৩ অপরাহ্ণ , অক্টোবর ৪, ২০২১

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুরের চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী দেলোয়ার হোসেন দেলু ও তার সহযোগী মোহাম্মদ আলী প্রকাশ আবু কালামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসাথে দুই আসামীকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৪ অক্টোবর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জয়নাল আবেদীন এ রায় ঘোষণা করেন। মাত্র ১৩ কার্য দিবসের মধ্যে নিকট অতীতে এত দ্রুত কোনো মামলার রায় নোয়াখালীতে এটাই প্রথম।

এ রায়ে বাদী ও তার আইনজীবী সন্তুষ্ট থাকলেও রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন আসামীপক্ষের আইনজীবী।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার দুই আসামী দেলোয়ার হোসেন দেলু ও তার সহযোগী মোহাম্মদ আলী প্রকাশ আবু কালামের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে আদালত। পরে গত ১৮ আগস্ট আসামীদের উপস্থিতিতে বাদির স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

এ মামলায় বাদীপক্ষে ১২ ও আসামীপক্ষে ৩ জন সাপাই সাক্ষীসহ মোট ১৫ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এর আগে ২০২০ সালে ১৪ ডিসেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে অভিযোগপত্র ফরোয়ার্ড করা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মামলার বাদী ওই গৃহবধূ জানান, ‘এ রায়ে আমি এবং আমার পরিবার সন্তুষ্ট। একই সাথে আমার নির্যাতন ও পর্ণোগ্রাফী মামলা দুটিরও যেন সঠিক বিচার হয়। রায়ের পর আসামীপক্ষের লোকজন আমাদের ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করবে, তাই প্রশাসনের কাছে আমি ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাচ্ছি।’

এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বাদল জানান, শুধুমাত্র বাদীপক্ষের স্বাক্ষীর ভিত্তিতে আসামীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো। আশা করি, উচ্চ আদালত থেকে তাদের জামিন হবে।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ লাবলু জানান, ‘আলোচিত গৃহবধূ ধর্ষণ মামলাটিতে আমরা বিজ্ঞ আদালতে স্বাক্ষি উপস্থাপন, জেরা ও জবানবন্দি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। আসামীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ে আমরা এবং সারাদেশের মানুষ সন্তুষ্ট।’

প্রসঙ্গত, গত ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারীর আগের স্বামী তার সাথে দেখা করতে আসেন। বিষয়টি দেখতে পান স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন দেলু। রাত ১০টার দিকে দেলোয়ারের লোকজন ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে কুপ্রস্তাবে দিলে তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিটিয়ে তকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। ওই বছরের ৪ অক্টোবর নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েল জেলায় তথা দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

পরে এ ঘটনায় নির্যাতিতার দায়েরকৃত নির্যাতন, ধর্ষণ ও পর্ণোগ্রাফী মামলা অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। ধর্ষণ মামলায় দেলোয়ার হোসেন দেলুকে প্রধান ও ধর্ষণে সহযোগিতা করায় আবু কালামকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন ওই গৃহবধূ।

Loading