রামগড়ে শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদেরের ৫০ তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন  

বাহার উদ্দিন বাহার উদ্দিন

রামগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১:০২ অপরাহ্ণ , এপ্রিল ২৭, ২০২১

 

৭১’র ২৭ এপ্রিল মহালছড়ির তুমুল যুদ্ধে শহীদ হন তরুণ বীর সেনানী ক্যাপ্টেন কাদের বীর উত্তম

বিয়ের মেহেদির রঙ ম্লান হওয়ার আগেই ১৯৭১ এর ২৭ এপ্রিল খাগড়াছড়ির  মহালছড়িতে পাক হানাদার ও তাদের সহযোগি মিজোদের সাথে প্রচন্ড সন্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন তরুণ বীর সেনা ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীর উত্তম।
আজ (মঙ্গলবার) এ বীর শহীদের ৫০তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে রামগড়ে  শহীদ পরিবারের পক্ষে দরিদ্র রোজাদারদের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ, কোরআনখানি, ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সকালে শহীদের কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণের কর্মসূচি রয়েছে।
৭১ এর ৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্মস্থল পাকিস্তানের হায়াদ্রাবাদ থেকে ছুটিতে নিজ বাড়ি ঢাকায় এসেছিলেন ৪০ ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসার ক্যাপ্টেন কাদের। ১৯ ফেব্রুয়ারি  জুলিয়াকে বিয়ে করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ২৫ মার্চের কালো রাতে  নিরস্ত্র বাঙালিদের নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায়  মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। ২ এপ্রিল সীমান্তবর্তী মহকুমা শহর রামগড়ে এসে স্থানীয় স্বাধীনতাকামী যুব ও তরুণদের গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেন। রামগড়কে শত্রুমুক্ত রাখতে তাঁর নেতৃত্বে সর্বপ্রথম এক সফল অপারেশনের মাধ্যমে ধুমঘাট রেলওয়ে ব্রীজ ধ্বংস করা হয়। এমনিভাবে রামগড় ও এর আশে পাশের এলাকায় বহু প্রতিরোধযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তিনি।
২৭ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে মহালছড়িতে অবস্থানকারি মুক্তিযোদ্ধরা শত্রুদ্বারা আক্রান্ত হয়। পাকিস্তানি ও তাদের সহযোগি মিজোবাহিনীর শত্রুরা ছিল দলে ভারী। পাক সৈন্যদের একটি নিয়মিত কমান্ডো কম্পানি, আর ছিল দুই ব্রিগেডে ১৫০০ মিজো সৈন্য ছিল শত্রু পক্ষে। যা মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যার চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি। এছাড়া বিমান থেকেও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্ভাব্য ঘাঁটি লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলাও চালায় পাকবাহিনী। তবুও অসীমসাহসিকতা নিয়ে বীর যোদ্ধারা লড়াই চালিয়ে যান। এ সময় ক্যাপ্টেন কাদের ছিলেন রাঙ্গামাটি রেকিতে। রেকী শেষে মেজর শওকতের প্ল্যান অনুযায়ি ক্যাপ্টেন কাদের যোগ দেন মহালছড়ির এ অসম তুমুল যুদ্ধে। প্রতিকূলতা সত্বেও বীরযোদ্ধারা  অসিম সাহসে শত্রুদের  প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে  শত্রুরা প্রায় চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে  মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রচন্ড যুদ্ধের এক মূহুর্তে শত্রুদের মেশিনগানের কয়েকটি গুলি এসে বিঁধে যুদ্ধরত অসীম সাহসি ক্যাপ্টেন কাদের এর বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তুমুল গুলি বৃষ্টির মধ্যে সহযোদ্ধা শওকত আলী ও ফজলুর রহমান ফারুক আহত কাদেরকে উদ্ধার করে   একটি জীপে করে রামগড়ে আনার পথে  মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এ বীর যোদ্ধা। শেষ বিকালে তাঁর মরদেহ রামগড় পৌঁছার পর এখানকার সহযোদ্ধাদের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। ঐদিন সন্ধ্যার পর রামগড় কেন্দ্রীয় কবরস্তানে পূর্ণ সামরিক ও ধর্মীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় তাঁকে। সেদিন নিজের প্রাণের বিনিময়ে প্রায় ২০০ মুক্তিসেনার জীবন বাঁচিয়েছিলেন তিনি। এ বীর মুক্তিযোদ্ধার অতুলনীয় বীরত্বকে চির স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করেন তাঁকে।

Loading