“অপারেশন ধনুনদী -৭১” সুস্থির সরকার সুস্থির সরকার বিভাগীয় প্রধান ময়মনসিংহ প্রকাশিত: ৭:১১ পূর্বাহ্ণ , ডিসেম্বর ২৯, ২০২০ আ ফ ম রফিকুল ইসলাম খান আপেল৭১ এর নয়মাস স্বসস্ত্র সংগ্রামেরে মধ্যদিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশে স্বাধীনতা লাভ করেছে । রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতার ইতিহাস খুবই গৌরবের । অনেক কষ্ট ও আত্বত্যাগের মধ্যদিয়ে অসীম সাহসের সাথে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর বিরুন্ধে আমাদেরকে লড়তে হয়েছে। আত্বত্যাগের মহিমায় উজ্জল আমাদের এই স্বাধীনতা ।নিরস্র অবস্থায় স্বসস্ত্র যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল দেশের মুক্তিপাগল জনতা ২/১ টি বন্ধুক আর বাশেঁর লাঠি ,তীর ধনুক হাতে নিয়েই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুন্ধে গড়ে তুলেছিল মরনপণ প্রতিরোধ যুদ্ধ।আর এমেনি একটি প্রতিরোধ যুন্ধ সংগঠিত হয়েছিল নেত্রকোনা জেলার মোহনগজ্ঞ উপজেলার ধনুনদীর তীরবর্তী গাগলাজুর বাজারে যা ‘‘অপারেশন ধনু নদী ৭১” নামে এই লিখাটি এর প্রতিপাদ্য বিষয়।জুলাই মাস ১৯৭১ , কংস ও ধনুনদীর মোহনার পশ্চিমতীরে চাঁনপুর গ্রাম, গোলাম রব্বানীর বাড়ি মোহনা হতে ১০০ মি: এর মধ্যে। উক্ত মোহনার দক্ষিন পশ্চিম ধনুনদীর তীর ঘেষেঁ গাগলাজুর বাজার।আমার দিন তারিখ সঠিক মনে নেই , আগের দিন সন্ধায় আমি আর রব্বানী ভারতের মহীষখলা হতে চানঁপুর এসেছি। রব্বানীর নিজস্ব পাতাম নৌকায় আমরা রব্বানীর পরিবার সহ দশ বার দিন পূর্বেই মহীষখলা চলে যাই। শুধু রব্বানীর ছোট ভাই মুকুল বাড়িতে ছিল।মহীষখলা মেম্বার বাড়ির উপরের টিলায় মাচাঘর বেঁধে রব্বানীর মা সহ পরিবারের সকলেই বসত করে আসছি। আমি আর রব্বানি প্রাত্যহিক খাদ্য সামগ্রী নেওয়ার জন্য চানপুর আসি। এই এলাকাটি ছিল মুক্ত অঞ্চল। তখন ভরা বর্ষাকাল। চর্তুদিকে পানি থৈথৈ করছে। নদীর সীমারেখা দুমাস পূর্বেই বর্ষার যৌবনে ঠিকানা হারিয়ে গেছে । রত্রিবেলা খাওয়ার শেষে ঘুমিয়ে পড়ি। কে যেন আমাদেরকে তরস্ত হয়ে ডেকে তুললো তখন সকাল আটটা বাজে। বারান্দায় এসে দেখি খাকি পোষাকদারী দুইজন আনসার, হাতে তাদের দুটি ত্রি-নট-ত্রি রাইফেল , তাদের প্রশ্ন করার আগেই আমাদেরকে সালাম দিল। আর বললো আমরা ভারতে যাওযার উদ্দেশ্যে এসেছি, আমরা খুবই তৃষ্ণার্ত, কিছু খাবারের ব্যবস্থা করুন। তারা আমাদের নিকট রাইফেল দুটি গচ্ছিত রেখে বিশ্রামের আবেদন করে এতে রব্বানীর বিস্বাস হয় যে আনসারদ্বয় সত্যি বলেছে তারাও মুক্তিকামী লোক। বেলা এগারোটার দিকে নাস্তা ভাত খেয়ে আমরা সিদ্বান্ত নেই যে,পরদিন ভোর বেলা মহীষখলা বাসাবাড়ির জন্য খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আনসারদ্বয় সহ ভারতে চলে যাব। এমন সময় বহুদূরে জনরব শোনা যায়। দুএকজনকে জিজ্ঞেস করে কোন সঠিক উত্তর পাই নাই । বাড়ির বাহিরাঙ্গনে দাড়িয়ে দেখি নারী পুরুষ ভর্তি নৌকা উত্তর দিকে আসছে, আর ধীরে ধীরে জনরব স্পষ্ট হচ্ছে । দৌড়ে এসে একজন লোক বললো স্টিমারে ধনু নদী দিয়ে পাক আর্মি আসছে। শুনে আমরা কিংকর্ত্যব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম , রবানী নীরবতা ভেঙ্গে বললো চলেন বাজারের দিকে যাই। এরই মধ্যে চানপুরের কেনু,মুকুল ,ওয়াহাব , রশিদ , আ: হক সহ আর ও অনেকেই আমাদের সাথে বাজারে যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যেই এসেছে। দুই জন আনসার ও রবানীর বন্দুক সহ আমরা সবাই নৌকা যোগে বাজারে এসে দেখি জনমানব শুন্য, চেয়ে দেখি দক্ষিন দিক হতে লোক বোঝাই নৌকা আসছে। তারা আমাদের দেখে বললো আপনারা চলে আসুন পাক আর্মি আসছে। রব্বানী উত্তর দিল আপনারা যান আমরা আসছি।রব্বানী খুব সাহসী লোক, সে আমাকে বললো এদের এভাবে যেতে দেওয়া যায় না। তার দুনালা বন্দুকের এলজি গুলি চব্বিশটি আর আনসারের নিকট মাত্র বারটি রাইফেলের গুলি ছিল। এই নিয়ে সে প্রতিরোধের পরিকল্পনা করে। এরই মধ্যে মান্দার বাড়ি ও গাগলাজুরের কিছু সাহসী যুবক আমাদের সাথে যোগ দিল। কিন্তু আর্মি বহন কারী স্টিমার এখনও আমাদের দৃষ্টিতে আসে নাই। দক্ষিন পূর্ব কোণে প্রায় দেড় দুই কিলোমিটার দূরে পাতড়া গ্রাম। সেই গ্রামটি ধনু নদীর তীরে অবস্থিত । সেখানকার সবাই সনাত্বনী তাদের দিক থেকে কোন সাড়াশব্দ আমাদের দৃষ্টিতে আসেনি। ধীরে ধীরে জনরব আরও স্পষ্ট হতে লাগলো। আমার মনে কিছু ভয় সঞ্চালিত হলো। আবার অন্যদের সামনে নিজের ভয় সম্মবরণ করে রববানীকে জিজ্ঞেস করলাম এখন আমাদের কি করতে হবে? এই সময় রব্বানী পাতড়া গ্রামের আড়ালে আকাশের দিকে কালো রেখা দেখতে পেয়ে বললো মামা ওরা পাতড়া পর্যন্ত এসে গেছে চেয়ে দেখুন , আমিও তাই দেখলাম আমাকে সে নির্দেশ দিল কেনু ,মুকুল ও এক জন আনসার নিয়ে বাজারের দক্ষিন পাশে অবস্থিত ধান ভাঙ্গানো কলের পানির ট্যাংকের আড়ালে অবস্থান নিতে, আর রব্বানী নিজে একজন আনসারকে নিয়ে বাজারের উত্তর পাশে বটগাছের আড়ালে অবস্থান নিল , অন্যদেরকে বললো তোমরা দুটি নৌকা নিয়ে প্রস্তুত থাক প্রয়োজনে নিজেরা যেন নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারি। দক্ষিন দিকে চেয়ে দেখি পাতড়া গ্রামের সন্নিকটে কালোধোয়ার নিচে স্টিমারে অস্তিত । তখন আমার হ্রদস্পন্দন বেড়ে যেতে লাগল , নিজের ভয়টাকে সামলে নিয়ে রব্বানীর নির্দ্দেশ মত অবস্থান নিলাম। অল্পক্ষনের মধ্যে জনরবের সাথে ভো ভো শব্দ কানে আসতে লাগল ধীরে ধীরে তা স্পষ্ট হয়ে আসছে, আমার ভয় আর কল্পনার মায়াজগতের চিত্র এলোমেলো ভাবে ভাসতে লাগল । নেত্রকোনা শহরে মোক্তারপাড়ার মাঠে আলীউসমান সাহেবের নিকট (প্রাক্তন আনসার কমান্ডর ও আওয়ামীলীগ নেতা ) মার্চ ৭১এ ডেমি রাইফেল দিয়ে ট্রেনিং নিয়ে ছিলাম তার ছবিও কল্পনায় ভেসে উঠল , তখন নিজের মনে কিছুটা সাহস বেড়ে গেল , এরই মধ্যে গ্রামের কিছু সাহসী যুবক তীর ধনুক নিয়ে আমাদের পাশে অবস্থান নিল .দক্ষিন দিকে চেয়ে দেখি স্টিমারটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে আসছে । তার শব্দও স্পষ্ট হচ্ছে প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে । স্টিমার যত এগুচ্ছে আমার মনে ততই ভয় বাড়ছে । তার পরও উক্ত যুদ্বের মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি এখন আর সরে যাওয়ার অবস্থান নেই , এমন সময় বিকট আকারের ড্রিম শব্দ হল লক্ষ্য করে দেখি টেংকির দেয়ালের এক কোন ভাঙ্গা, আনসারের অসাবধানতা রাইফেল হতে গুলি বেড়িয়ে গেছে ,রব্বানী চিৎকার দিয়ে বলে আমি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গুলি চালাবেন না। তার নির্দেশ মত আমরা প্রস্তত । অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে আমার দৃষ্টিতে এল স্টিমারের উপরে একটি কাপড় উড়ছে তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে লাগল যে ,একজন লোক লগ্রীর (বাশঁ) মাথায় সাদা কাপড় বেধেঁ উড়াচ্ছে আর আমাদের দিকে এগুচেছ কিছুক্ষনের মধ্যে বুঝতে পারলাম এটি একটি বড় আকারের কার্গো , ওরা চিৎকার করে কি-যেন বলছে তা বুঝতে পারিনি , সময়ের সাথে সাথে বুঝতে পারি যে , আপনারা গুলি চালাবেন না । আমাদের কার্গোতে কোন পাক আর্মি নেই। আমরা আপনাদের লোক , আমি বুঝতে পারি যে অসাবধানতায় যে গুলিটি বের হয়েছে তাতে ওরা ধারনা করছে মুক্তি যোদ্বাদের এ¤ু^সে পড়েছে, রব্বানী বাজারের পশ্চিম দিক দিয়ে এসে আমাদের নির্দেশ দিল ভাল করে পরখ করে দেখুন পাক আর্মি আছে কি না ,অন্যথায় গুলি ছুরবেনা , ইতিমধ্যে কার্গো আমাদের কাছাকাছি চলে এসেছে, চেয়ে দেখি ওরা চার জন একত্রে দাড়িয়ে সাদা কাপড় বাধা বাশটিকে ডানে বামে নারাছে আর বলছে আমরা মাল পরিবহন কারী সাধারন লোক , আমাদের কার্গোতে শত্র“ সেনা ও অস্ত্র নেই। রব্বানী আমাকে একজন আনসার সহ বাজারের পূর্ব পাশে নদীর তীরে পাঠিয়ে বললো এদের বলুন মাঝ নদীতে নোঙ্গর করতে আর ভালো করে পরখ করুন পাক আর্মি আছে কি না। আমরা তাই করলাম,কার্গো আমাদের হতে আধা কিলোমিটার দুরে দাড়িয়ে রইল । রব্বানী আমাদের নিকট এসে বললো পিছনে একটি রক্ষিত নৌকাকে আসতে বলুন তার কথামত নৌকা এল ,কার্গো তল্লাশী করার জন্য দুই জনকে পাঠানো হল ওরা এসে বললো কার্গোতে কোন পাক আর্মি নেই । রব্বানী চিৎকার দিয়ে বললো আপনারা ঘাটে কার্গো ভিরান । বাজারে ভিরানোর পর নোঙ্গর ফেললো আর বট গাছের গোরায় তারের দড়ি দিয়ে বাধল , রব্বানী ওদের সমস্ত লোকদের নেমে আসতে বললো ওরা তাই করল ,তাদের নিয়ে আমরা বাজারে বসলাম তাদের সমস্ত পরিচয় নিলাম ওরা নারায়নগঞ্জ হতে পন্যসামগ্রী পরিবহন করে সিলেট নিয়ে যাচিছল । আমাদের দুইজন লোক পাঠালাম কার্গো ভিতরে দেখে আসার জন্য , ফিরে এসে আমাদের লোক জানানদিল কার্গোর লোকজনের কথাই ঠিক । কার্গোর লোকজন কার্গো রেখে চলে যেতে চাইছিল কিন্তু রব্বানী এতে আপত্তি জানিয়ে বললো আপনাদের যেতে হলে কার্গো নিয়ে যাবেন কার্গোতে রক্ষিত পণ্য সামগ্রী মহিষখলা শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হবে, ওরা বুঝতে না পেরে উওর দিল গভীর নদী ব্যতিরেখে কার্গো চলাচল করবেনা । রব্বানী বললো এই চিন্তা আপনাদের করতে হবেনা, তা আমরাই ব্যবস্থা করব।আমরা সবাই বসে সিদ্বান্ত নিলাম যে , আজই নৌকা যোগাড় করে পণ্য সামগ্রী মহীষখলা পাঠিয়ে দেব। রব্বানী আমাকে ও কেনু মিয়াকে দায়িত্ব দিল কার্র্গো বুঝাই পণ্যের তালিকা তৈয়ার করতে, আরেক দলকে দায়িত্ব দিল মহীষখলা যাওয়ার নৌকা ঠিক করতে। এরই মধ্যে চানপুর মান্দার বাড়ী ও গাগলাজুর হতে অনেক যুবক আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এলো।বেলা চারটা পর্যন্ত আমরা কি কি পন্য আছে তার তালিকা তৈরী করলাম। এরই মধ্যে কিছু নৌকাও বাজারে এসেছে । কার্গোতে রক্ষিত পণ্য থানকাপরের গাইড,লংঙ্গীর গাইড ,শাড়ীর গাইড ,ঔষধের বাস্ক , সরিষা তৈলের পেকেট টিন , নারিকেল তৈলের ড্রাম , ডিজেলের ড্রাম , আতপ চাউলের বস্তা,চিনির বস্তা ,ডালের বস্তা ,আটার বস্তা, তৈয়ালে ,গামছা , গেনজি সহ আরো অনেক পণ্য সামগ্রী । তৎসময়ে এর মূল্য হবে প্রায় লক্ষ টাকা । এরই মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে ১৫/২০টি নৌকা বাজারের ঘাটে এসেছে , মুক্তিকামি যুবকরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কার্গোতে রক্ষিত পণ্য সামগ্রী নৌকায় তুলতে লাগল । রব্বানী প্রতি নৌকা ১০সের চাউল .২সের ডাল্, কিছু পরিমান সরিষার তৈল , লবণ ডিজেল এবং নগদ কুড়ি টাকা দিয়ে রাত ৯টার দিকে বাজার হতে একজন আনসার , রব্বানীর বাড়ির লোক লোকমান গ্রামের দুইজন যুবককে নৌকার বহরের সাথে দিয়ে শ্রদ্বেয় খালেক দাদ চৌধুরী সাহেবের নিকট পাঠানো পন্য সামগ্রী তালিকা সহ এক খানা পত্র দিল । তখন মহীষখলায় শেকান্দর নুরী , জামাল ভাই মৌলানা ফজলুর রহমান , আ: বারেক (পরে চল্লিশার চেয়ারম্যান ) ভাই সহ অনেকে থাকেন আমার ঘনিষ্ট বন্ধু মালনী রোডের হেলাল, এডভোকেট মরহুম মঞ্জুরুল হক সহ অনেকের সাথে আমি মহীষখলা থাকা অবস্থায় দেখা হয়েছে ।আমরা রাত ১০টার দিকে সারেং ও ড্রাইভার সহ রব্বানীর বাড়িতে চলে আসি । কয়েকজন গ্রামের মুক্তি কামী যুবককে কার্গো পাহাড়া দেওয়ার জন্য রেখে আসি এবং গ্রামের একদল মুক্তিকামী লোককে দায়িত্ব দেই কার্গোতে রক্ষিত অবশিষ্ট পণ্য পরিহনের জন্য নৌকা ঠিক করতে।পরদিন সকাল ৯ টায় বাজারে যাই সেখানে পাঁচ ছয়টা নৌকা দেখতে পাই তারা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে , এরই মধ্যে গ্রামের মুক্তিকামি যুবকরা এসে গেছে । সবাইমিলে কার্গোর অবশিষ্ট পণ্য নৌকায় তুলতে শুরু করল, এরই মধ্যে আরো তিন চারটি নৌকা মহিষখলা যাওয়ার জন্য এসেছে , পণ্য সামগী কার্গো হতে খালাস করতে বেলা ১ টা বেজে গেছে।রব্বানী মহীষখলা অবস্থানরত নিজ পরিবারের জন্য নিজস্ব ভাওয়ালিয়ায় সিদ্ব চাল বাড়ীর গোলা হতে নৌকায় ভর্তি করল , আর বাজার হতে ডাল , তৈল লবন ক্রয় করে নিজ নৌকায় তুললো । বেলা ৪টার দিকে রব্বানী ,মুকুল , আনছার ও দুইজন গ্রামের যুবক সহ শরণার্থী শিবিরের উদ্দেশ্যে মহীষখলা রওনা দেয় , আমাকে বলে যায় লোকমান বাড়ীতে আসার পর আপনি মহীষখলায় চলে আসবেন । রব্বানী যাওয়ার সময় কার্গো লোকদের নির্দেশ দিলো আপনারা কার্গোসহ চলে যেতে পারেন । ওরা মুক্তি পেয়ে খুবই আনন্দিত মনে সিলেটের দিকে কার্গো ছেড়ে চলে যায় ।রব্বানি চলে যাওয়ার দুদিন পর লোকমান বাড়ী আসে, তাকে জিজ্ঞেস করি পণ্য সামগ্রী ঠিকমত পৌঁছেছে কিনা ? সে উওর দিল চৌধুরী সাহেব পত্র গ্রহন করে লোক দ্বারা পণ্য নৌকা হতে খালাশ করান।লোকমান আসার পর আমি মহীষখলা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি , এমনিভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেলো । একদিন আমি গভীর ঘুমে মধ্যেরাতে দরজায় ঢক ঢক শব্দ আর মাঝে মধ্যে কেযেন মামা বলে ডাকছে , হারিকেনের আলো বাড়িয়ে দিয়ে দরজা খুলে দেখি লোকমান দাড়িয়ে, তার পিছনে ষ্টেনগান কাধে একটি লোক , তিনি বললেন ইনি আপেল মামা ? আমি উওর দিলাম হাঁ মুক্তিযোদ্ধাটি রুমে ঢুকে খাটের উপর বসে পরে । সে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে পরিচয় দিল, আমাকে মামা ডাকার সুত্র আমি চিন্তা করতে থাকলাম , কমান্ডার সাহেব বললেন ৩০/৩৫ জনের খাবারের ব্যবস্থা করতে বলেন, তিনি স্টেনগান সহ বাথরুমে গেলেন ।আমি লোকমানকে বলি হাজারার মাকে ডেকে তোলো আর তোমার স্ত্রী সহ দুজন মিলে ডাল ভাত রান্নার ব্যবস্থা কর । আমি বাড়ী উঠনে এসে দেখি কিছু মুক্তিযোদ্ধা গল্প করছে, পুকুরের পশ্বিমে তিনটি নৌকায় আরো মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছে , পরে জানতে পারি আরো তিনটি নৌকায় চানপুর গ্রামের তিন দিকে অবস্থান করছে । আমি ঘরে এসে দেখি কমান্ডার সাহেব আমার বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছেন , আমায় দেখে উঠে বসলেন আর আমায় জিজ্ঞেস করলেন খাবারের কিছু ব্যবস্থা হয়েছে ? আমি বললাম ডাল ভাতের ব্যবস্থা করেছি তিনি বললেন তাতেই হবে । খাওয়া শেষ করতে রাত তিনটা বেজে গেছে কমান্ডার সাহেব বললেন চলেন শুয়ে পড়ি আমি আর কমান্ডার সাহেব একই বিছানায় শুয়ে পড়ি , আমার ঘুম আসছেনা , কমান্ডার সাহেব বললেন রব্বানী ভাই আর তার মা আমাদের বলে দিয়েছেন যে, আপনি বাড়ী তে আছেন , আমরা যেন প্রয়োজনে এখানে উঠি । রব্বানি ভাইয়ের বড় চাচার মেয়েকে আমর চাচাত ভাই বিয়ে করেছেন , সেই দিক দিয়ে আপনি আমার মামা আর রব্বানি ভাইয়ের ছোট চাচা বিয়ে করেছেন আপনার বড় বোনকে, তিনি বেচেঁ নেই আমি সবই জেনে এসেছি আর আমার নাম সামছু বাড়ী বারহাট্রা থানা সালিউড়া গ্রামে । গল্প করতে করতে আজান পড়ে গেল সামছু ঘুমিয়ে পড়ল আমার ঘুম হলনা । সকালের নাস্তা ভাত যোগার করতে হবে । ধলপ্রহরে আমি ওঠে গেলাম হাজেরার মাকে ডেকে তুললাম তোমারা নাস্তা ভাতের ব্যবস্থা কর আমি ডাল আলু নিয়ে আসি , বাজারে গিয়ে জাহেদের ঘর হতে ডাল, আলু লবন নিয়ে আসি । কমান্ডার সামছুকে ৮টায় ডেকে তুলি নাস্তা ভাত খাওয়ার জন্য সে বাথ রুম সেরে হাত মুখ ধুয়ে আমাকে নিয়ে নাস্তা ভাত খেল এবং কমান্ডার সাহেব বললেন চৌধুরী স্যার (খালেকদাদ চৌধুরী) আমায় বলে দিয়েছেন আপনি এখান হতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে ।বেলা ১০টার দিকে কমান্ডর সাহেব গোয়েন্দা খবরের ভিত্তিতে তিনটি নৌকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে ,আমার সাথে দুইজন মুক্তিযোদ্বা রেখে যান । কারণ রাতের বেলায় একদল মুক্তিযোদ্বাকে লেপশিয়া পাঠিয়েছেন , সেখানে কিছু লোক যত্র তত্র ডাকাতি করছে তাদের ধরে আনতে । বেলা বারটার দিকে একটি নৌকা পুকুরের পশ্চিম পাড়ে দিকে ভিরল . দুইজন মুক্তিযোদ্বা এগিয়ে গেল কিছুক্ষন পরে দেখতে পেলাম চোখ বাধাঁ অবস্থায় একজন সুঠামদেহী লোককে নিয়ে পুকুরের পূর্বপাড় ও বাড়ি পশ্চিম পাশে দোচালাটিনের ঘরে উঠল । মুক্তিযোদ্বারা সাথে সাথে ঘরের পালার সাথে তাকে বেঁধে ফেললো ।বেলা তিনটার দিকে ৬/৭ টি নৌকা পূর্বের নৌকার পাশে ভিরল কমান্ডার সামছু সাহেব সবাইকে নিয়ে বাড়িতে এল , লেপশিয়া হতে আগত মুক্তিযোদ্বাদের অপারেশন কতটুকু স্বার্থকতা পেয়েছে তা শুনলেন এবং ধৃত ডাকাতকে দেখতে গেলেন । আমায় বললেন মামা এদের খাবার দিতে বলেন । গ্রাম হতে উদ্ধারকৃত পণ্য সামগ্রী শরণার্থী শিবিরে পাঠিয়ে দিতে হবে । লোকমানকে খাবার দিতে বলে পুকুরের পশ্চিম পাড়ে গিয়ে দেখি তিনটি নতুন নৌকায় কাপরের গাইড ,তেলের ড্রাম,লংঙীর গাইড ,সরিষা তেলের টিন বুঝাই । কমান্ডার সামছু আমায় দেখে বললেন রব্বানী ভাইয়ের এর নিকট জানতে পেরেছি কিছু পণ্য সামগী রাতের বেলায় পাহাড়াদারদের ঘুমন্ত অবস্থায় ু দুষ্ট লোকেরা নিয়ে গেছে তা উদ্বার করে নিয়ে এলাম।বেলা ৫টার দিকে চোখ বাধা লোকটিকে পুকুরের পূর্ব পাড়ের উওর দিকে দাড় করিয়ে কমান্ডার সাহেব থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে গুলি করার প্রস্ততি নিয়েছেন , ডাকাতটি অনেক অনুনয় প্রকাশ করেও রেহাই পাইনি । ১৫গজ দূর হতে তাকে গুলি করে বাপাশের বুক ছিদ্র হয়ে পিছন দিয়ে বড় গর্ত হয়ে বেড়িয়ে যায় , কিন্তু তার দম যাইনি কমান্ডার সামছু বলল লোকমান ভাই আমি আর গুলি খরচ করবোনা তুমি এর ব্যবস্থা কর ।প্রায় সন্ধা হয়ে আসছে লোকমান একটি ছুরি ও ছইয়াওলা নৌকা নিয়ে আমাকে ও কমান্ডার সাহেবকে বলল চলুন ধনুনদীর মাঝে একে মেরে ভাসিয়ে দেব , গিয়ে দেখি গলুইয়ের উপরে শুয়ে রেখেছে ডাকাতটিকে আমি আর কমান্ডার ছুইয়ার পেছনে দিকে দাঁড়ালাম । ধনুনদীর মাঝখানে গিয়ে গলায় ছুরি দিয়ে এক টান দিতেই লাশ পানিতে পড়ে যায় । আমরা আধঘন্টা খোঁজাখোঁজি করার পরও তাকে পায়নি । বাড়ী ফিরে এসে কমান্ডার সাহেব সবাইকে প্রস্তুত হতে বললেন একঘন্টার মধ্যে তাদের পরবর্তী অপরেশনে চলে যেতে হবে , রাতের খাবার খেয়ে ১০ টার দিকে তারা চাঁনপুর গ্রাম ছেড়ে দক্ষিল দিকে চলে যায়। তারিখ : ০৫/১০/২০১৫ ইং শেয়ার অতিথি কলামবিষয়: