কেএনএফ’র ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের প্রতিবাদে বম জনগোষ্ঠীর মানববন্ধন

প্রকাশিত: ৭:২৪ অপরাহ্ণ , মে ১৯, ২০২৪

বান্দরবান প্রতিনিধি,

বান্দরবানে সম্প্রতি রুমা ও থানচি দুই উপজেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) কর্তৃক ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ ও সরকারি ১৪টি অস্ত্র লুটের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন বান্দরবানের বসবাসরত বম সম্প্রদায়ে জনগোষ্ঠীরা।

আজ রবিবার (১৯ মে) বিকেল ৪ টায় বান্দরবান শহরে উজানী পাড়া ইভেনজেলিক্যাল খ্রীস্টান চার্চ প্রাঙ্গনে ‘সাধারণ বম জনগোষ্ঠী’ ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় মানববন্ধনে অংশ নেন শতাধিক বম সম্প্রদায়ের শিশু, নারী ও পুরুষ, শিক্ষার্থীসহ প্রায় শতাধিক। তারা হাতে প্লেকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন। বিভিন্ন প্লেকার্ডে লেখা ছিল-

“শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার, সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অধিকার তোমাদের (কেএনএফ) নাই।”

“আমরা ছাত্র সমাজ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে মাথা উচু করে বাঁচতে চাই”।

“আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে চাই, বাঁচতে চাই। অন্ধকার জীবন চাই না, আলোকিত জীবন চাই।”

“আলোকিত জীবনের জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। সেই অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করো না।”

“অস্ত্র নয়, কলমই আমাদের শক্তির উৎস।”

“সন্ত্রাসবাদকে না বলি, দেশপ্রেমই আমাদের লক্ষ্য।”

এসময় মানবন্ধনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লাল পেক থার বম। তিনি বলেন, কেএনএফ কারণে বর্তমানে প্রানের ভয়ে নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ-আবাল-শিশুসহ যারা জঙ্গলে অনাহারে অবর্ণনীয় কষ্টে দিন যাপন করছেন। আমরা, ছাত্র সমাজ, রাজনীতির বুঝি না, রাজনীতির চাল-চলন-ধরণ এর সাথে পরিচিত না। আমরা শুধু জানি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের জীবন গড়ে তুলতে চাই, সমাজ ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করা। সমাজ ও দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী করতে চাই। এটা আমাদের সাধনা ও ধর্ম করতে চাই।

এসময় স্পষ্টকন্ঠে কেএনএফ-কে উদ্দেশ্য তিনি বলেন, তোমরা (কেএনএফ) পথভ্রষ্ট ও বিপদগামী হয়েছ। তোমাদের কাছ থেকে এহেন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আমরা ছাত্র সমাজ আশা করি না। তোমাদের কাছ থেকে নবীন নাগরিকরা এই শিক্ষা গ্রহণ করবে? কখনোই না। তোমাদের এমন কর্মকান্ডকে আমরা তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। সন্ত্রাসী, রাষ্ট্রদ্রোহী, ও ডাকাতগোষ্টি পরিচয় পরিচিত হতে চাই না।

তিনি আরও বলেন, “গোটা বম ও ছাত্র সমাজ কেএনএফ বা কেএনএ-কে বর্জন করলাম”। সরকারের কাছে আহবান সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সন্ত্রসীদের আইনের আওতায় আনুন। নির্দোষ- নিরীহদের আটককৃত ছাত্র-ছাত্রীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিন। এবং দোষীদের দায় আমরা ছাত্র সমাজ কেন নেব, প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। বম সমাজ দেশের একটা অংশ, স্বাভাবিকভাবে বেচেঁ থাকার অধিকার আমাদেরও আছে। আমরা (ছাত্র সমাজ) শিক্ষা জীবন চালিয়ে যেতে চাই, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ ও দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে চাই, এই আহবান জানায়।

এসময় মানববন্ধনে বম সংগঠনের নারী নেত্রী ঙুন চুয়ান বম তাঁর বক্তব্যে বলেন, সম্প্রতি সময়ে কেএনএফ কর্তৃক ব্যাংক ডাকাত ও সরকারি অস্ত্র লুটে ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই, এই অস্ত্রগুলি ফেরত দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। বম নিরীহ জাতিগোষ্ঠী যাতে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে সরকার প্রতি অনুরোধ করছি। তাদের (কেএনএফ) কারণে আজ বম জনগোষ্ঠীর ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যত জীবন অন্ধকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ও  বিসিএস-এর মত পরীক্ষা অংশ নিতে পারছে না। গণহারে গ্রেপ্তার কারণে ভয়ে তারা কোথায়ও বের হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, পরিবারে ছেলে-মেয়েরা ভরার কন্ঠে বলে “মা” গো  বম জনগোষ্ঠী হয়ে কেন জন্ম নিয়েছি! আজ আমরা নিরীহ বম জনগোষ্ঠীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছি না। তার দাবি, “কেএনএফ মানেই বম নয়, বম মানে কেএনএফ নয়।” তাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সন্ত্রসীদের আইনের আওতায় এনে নির্দোষ-নিরীহদের আটককৃত ছাত্র-ছাত্রীদের নিঃশর্ত মুক্তি পাশাপাশি নিরপেক্ষভাবে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সরকার কেএনএফ সদস্যেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এবং বিপথগামী কেএনএফদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা আহ্বানও করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত চলতি বছরে ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপক অপহরণ, টাকা লুট ও পুলিশ-আনসারের ১৪টি অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ব্যাংক ব্যবস্থাপক উদ্ধার হলেও লুট হওয়া অস্ত্র ও টাকা দেড় মাসেও উদ্ধার করা যায়নি। সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে।

সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অস্ত্র ও টাকা উদ্ধারের অভিযানে অংশ নিচ্ছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। অভিযান সমন্বয় করছে সেনাবাহিনী।

Loading