চিকিৎসককে নিয়ে ফেসবুকে কেন এত বিতর্ক? নিউজ ৭১ অনলাইন নিউজ ৭১ অনলাইন প্রকাশিত: ১১:১৮ অপরাহ্ণ , জুন ৯, ২০২০ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্প্রতি দেশে ফেরা একজন বাংলাদেশি চিকিৎসককে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরণের বিতর্ক চলছে। কোভিড-১৯ নিয়ে করা ফেসবুক লাইভ দিয়ে নিউইয়র্ক ভিত্তিক এই চিকিৎসক সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পান। কিন্তু ৭ই জুন বাংলাদেশে ফেরার পর তাকে আনুষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠায় কর্তৃপক্ষ, আর এরপরই বিষয়টির পক্ষ-বিপক্ষে নানা রকম আলোচনা শুরু হয়। কেন বিতর্ক? ডা. ফেরদৌস খন্দকার সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে চান—সামাজিক মাধ্যমে এমন ঘোষণা দেন। তখন থেকেই তাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। রোববার তিনি কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফেরার পর এয়ারপোর্ট থেকেই তাকে আনুষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। সামাজিক মাধ্যমে তাকে নিয়ে চলা আলোচনা এরপর বিতর্কে রূপ নেয়। বিতর্কের মূল কারণ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ওই বিশেষ ফ্লাইটে মোট ১২৯ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের ১২৮ জনকেই হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। একমাত্র ওই চিকিৎসক ফেরদৌস খন্দকারকেই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেছেন, “ডা. ফেরদৌস খন্দকারের করোনা নেগেটিভ সনদ রয়েছে, কিন্তু তার অ্যান্টিবডি টেস্ট পজিটিভ। ফলে তার করোনা হয়েছিল এটি বোঝা যায়। এখন সেটা ‘রিকভারি’ হয়েছে, না-তার শরীরে ভাইরাস এখনো ‘অ্যাক্টিভ’ আছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। সেজন্যই তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।” “অ্যান্টিবডি টেস্ট পজিটিভ হবার পরের টেস্টটি নেগেটিভ না আসলে বোঝা যায় না, ওই ব্যক্তি করোনা-মুক্ত হয়েছেন কি না। উনার ভাইরাস থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। কিন্তু এয়ারপোর্টে তো স্বল্প সময়ের মধ্যে আমি সেটা নিশ্চিত হতে পারবো না।” কখন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন আর কখন হোম কোয়ারেন্টিন? বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হবার পর থেকে নিয়ম হচ্ছে, ‘করোনা নেগেটিভ’ রিপোর্ট থাকলে বিদেশ থেকে আসা সকল যাত্রীকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হবে। “বিদেশ থেকে আসা সব যাত্রীকে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে।” কিন্তু ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, “কোন যাত্রীর যদি ‘আরটি-পিসিআর’ রিপোর্ট নেগেটিভ না থাকে, অথবা তার শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি থাকে, তাহলে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। আর কারো শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রির ওপরে থাকলে তাকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল অথবা কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।” ‘আরটি-পিসিআর’ নামে এই পরীক্ষা এইচআইভি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এই পরীক্ষাকে চিকিৎসকেরা নির্ভরযোগ্য মনে করেন, কারণ এতে ভুলভাবে নেতিবাচক বা ইতিবাচক ফল আসার হার খুবই কম। কিন্তু সোমবারই চীন থেকে একটি চিকিৎসা বিষয়ক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে, যাদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়নি। একই এয়ারপোর্টে দুই রকম নিয়মের কারণ জানতে চাইলে ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেছেন, “চীনের প্রতিনিধি দলের সবার করোনা-নেগেটিভ কাগজ ছিল, এবং তারা রাষ্ট্রীয় কাজে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য আসছে, সেই জন্য তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়নি।” এদিকে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি, তিনি বলেছেন, “চীনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আইইডিসিআর এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা-সিডিসির সঙ্গে যেসব কাজ করছে, কোনটাই পাবলিক (উন্মুক্ত স্থানে) না, আর অত্যন্ত সুরক্ষা নিয়ে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেগুলো করা হচ্ছে।” বিতর্কিত চিকিৎসকের বক্তব্য কী? প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর পর, ডা ফেরদৌস খন্দকারের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরণের আলোচনা চলছে এখন। বিবিসির পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তিনি তাতে সাড়া দেননি। তবে সোমবার এবং মঙ্গলবার তিনি ফেসবুক একাধিক স্ট্যাটাস দেন। সোমবার একটি ফেসবুক লাইভও করেন। দুই জায়গাতেই তিনি দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে, সেগুলোকে তিনি মিথ্যা বলে দাবি করেন। তবে, কারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। তিনি দাবি করেন দেশের স্বাস্থ্য খাতে কাজ করার উদ্দেশ্যে দেশে এসেছেন তিনি, রাজনীতি করার জন্য নয়। এছাড়া দেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য-কর্মীদের জন্য আট স্যুটকেস সুরক্ষা-সামগ্রী নিয়ে এসেছিলেন, যা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আটকে দিয়েছে বলে তিনি ফেসবুকে অভিযোগ করেন, এবং সেগুলো যেন কেউ ছাড়িয়ে নিয়ে কোন হাসপাতালে দিয়ে দেয় সেই মর্মে অনুরোধ জানান।বিবিসি বাংলা শেয়ার সোশ্যাল মিডিয়া বিষয়: