আলোচিত গৃহবধূ পারুল ধর্ষণ মামলায় ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ৩:০৮ অপরাহ্ণ , ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪

ইফতেখাইরুল আলম,স্টাফ রিপোর্টার

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মধ্য বাগ্যা গ্রামে গৃহবধূ পারুল আক্তারকে (৪০) দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার রায় প্রকাশ করেছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২। রায়ে রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এর রায় প্রদান করেন জেলা ও দায়রা জজ ফাতেমা ফেরদৌস।

রায়ে এ মামলায় অপর ৬ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন- সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলি ইউনিয়নের মধ্য ব্যাগ্যা গ্রামের মো. সোহেল (৩৮), মো. হানিফ (৩০), স্বপন (৪২), মো. চৌধুরী (২৫), মো. বাদশা আলম বসু (৪০), আবুল হোসেন আবু (৪০), মোশারফ (৩৫), মো. সালাউদ্দিন (৩২), মো. রুহুল আমিন (৪০), মো. জসিম উদ্দিন (৩২), মো. হাসান আলী বুলু (৪৫), মো. মিন্টু ওরফে হেলাল (২৮), মো. মুরাদ (২৮), মো. জামাল ওরফে হেঞ্জু মাঝি (২৮) ও মো. সোহেল (২৮)।

আসামি মো. মিন্টু ওরফে হেলাল ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।

এরআগে, ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। তবে, রায় লেখা শেষ না হওয়ায় সেদিন আদালত রায় ঘোষণার জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

এ মামলায় বাদি পক্ষে ২৩ হন স্বাক্ষীর এবং আসামি পক্ষে ৫ স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ৮ জন তাদের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন।

এ রায়ে খুশি বাদিসহ তার পক্ষের আইনজীবী ও আত্মীয় স্বজন। তারা রাষ্ট্রের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।

তবে এ রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে আপিলের কথা জানিয়েছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন সুবর্ণচর উপজেলায় নিজের ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে ১০-১৫ জন লোক গৃহবধূ পারুল আক্তারকে ঘিরে ধরে তাদের পছন্দের প্রতীকে সিল মারতে বলেছিলেন। এ নিয়ে ওই লোকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তারা।

এরপর রাত ১২টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত তাদের বাড়িতে গিয়ে তাকেসহ তার স্বামী ও চার সন্তানকে বেঁধে ফেলে। এরপর দুর্বৃত্তরা তাকে বেধড়ক পেটায় এবং টেনে হিঁচড়ে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণ করে।

ওই নারীর অভিযোগ, দুর্বৃত্ত কয়েকজনকে চিনে ফেলায় তারা তাকে গলা কেটে হত্যা করতে চেয়েছিল। তিনি হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে জীবন ভিক্ষা চাইলে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা না করে ভোর ৫টার দিকে ফেলে রেখে চলে যায়। সকালে প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই নারীকে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে চর জব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

Loading