গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত

প্রকাশিত: ১:৫৫ অপরাহ্ণ , অক্টোবর ২৩, ২০২৩

গাজা উপত্যকায় টানা ১৬তম দিনের মতো বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। এই বিমান হামলায় এ পর্যন্ত চার হাজার ৬০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক সম্পর্ক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, দ্বিতীয় দফায় ত্রাণবাহী ১৪টি ট্রাকের একটি বহর গাজায় প্রবেশ করেছে। তিনি এই পদক্ষেপকে ওই এলাকায় বসবাসরতদের জন্য ‘ছোট একটি আশার আলো’ বলে অভিহিত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে আলোচনা করার পর জানিয়েছেন, তারা দুজনই একমত হয়েছেন যে,“ফিলিস্তিনিদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই ত্রাণের সরবরাহ এখন থেকে চলমান থাকবে।”

অক্সফামের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান ম্যাগনাস করফিক্সেন বিবিসিকে বলেন, “প্রতিদিন কয়েকটি ট্রাককে ঢুকতে দেয়াটা মোটেই পর্যাপ্ত নয়” এবং সাহায্য সংস্থাগুলোকে গাজায় “অবাধ প্রবেশাধিকার” দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে তিনি।

ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির বলেন, হামাস যদি তাদের হাতে আটক সব জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি না হয়, তাহলে ওই এলাকায় “ত্রাণ সরবরাহ চলমান” রাখার কোন গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালির নেতারা ইসরায়েলের “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিরক্ষার অধিকারকে” সমর্থন জানিয়েছেন। একই সাথে তারা “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলারও” আহ্বান জানিয়েছেন।

ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দিয়েছেন যে, তারা আগামী সপ্তাহে ইসরায়েল সফর করবেন।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা লেবাননে হেজবুল্লাহর দুটি দলকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। তারা ইসরায়েলের ভেতরে ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট ছোড়ার পরিকল্পনা করছিল বলে দাবি করা হয়েছে।

এদিকে, গাজা থেকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছে। তারা জিম্মিদের ছবি বহন করছিলেন, এবং পার্লামেন্ট সদস্য এবং ইহুদী সম্প্রদায়ের নেতাদের বক্তব্য শোনেন।

গাজার হাসপাতালের কাছে বিস্ফোরণ
গত কয়েক ঘণ্টায় গাজার বেশ কয়েকটি হাসপাতালের কাছে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু কোন হতাহত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।

ফিলিস্তিনি সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, যেসব হাসপাতালের পাশে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে সেগুলো হচ্ছে, আল-শিফা, এটা গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। এছাড়াও রয়েছে আল-কুদস এবং ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল।

হামাস তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে আল-কুদস হাসপাতালের কাছে বিস্ফোরণের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করছে এটা ইসরায়েলি বিমান হামলা।

তারা একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের ছবি প্রকাশ করে দাবি করেছে, সেটি কুয়েতি হাসপাতালের পেছনের ভবন। এই মুহূর্তে এসব ছবি ও ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছে বিবিসি জানতে চেয়েছে যে, তারা ওই এলাকায় হামলা চালিয়েছে কিনা। আইডিএফ এ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে।

সংঘাতে নিহত কয়েক হাজার: গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত সাতই অক্টোবর সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত চার হাজার ৬৫১ জন মানুষ গাজায় নিহত হয়েছে।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, নিহতদের মধ্যে এক হাজার ৮৭৩ জন শিশু, এক হাজার ১০১ জন নারী এবং এক হাজার ৬৭৭ জন পুরুষ রয়েছে।

হতাহতের মোট সংখ্যার মধ্যে ৮৩৯ জন গাজার দক্ষিণাঞ্চলে নিহত হয়েছে। এই অঞ্চলেই গাজার উত্তরাঞ্চলের মানুষদের আশ্রয় নিতে বলেছিল ইসরায়েল।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংঘাতে আরো ১৪ হাজার ২৪৫ জন আহত হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট বলেছেন, গাজায় চলমান সামরিক অভিযান শেষ হতে “এক মাস, দুই কিংবা তিন মাস লাগতে পারে, কিন্তু এটি শেষ হওয়ার পর হামাস বলতে কিছু থাকবে না।”

ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর অপারেশন্স কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টারে হামলা পরিচালনা বিষয়ে ব্রিফিংয়ের পর এই কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “অভিযান পরিচালনার দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে দিনশেষে আইডিএফকে কোন কিছুই রুখতে পারবে না।”

“গাজায় এটাই হবে আমাদের শেষ অভিযান। কারণ খুবই সহজ। অভিযান শেষ হওয়ার পর হামাস বলে কিছু থাকবে না।”

মন্ত্রী বিমান বাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, পরবর্তী ধাপে বহুল প্রত্যাশিত স্থল অভিযান “শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে।”

তবে সেটা কবে- সে সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলেননি তিনি।

এদিকে, আগামী দুই দিনে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ইসরায়েল সফরের কথা রয়েছে।

হাসপাতালে জেনারেটর বন্ধ হলে শিশুদের নিয়ে শঙ্কা
গাজার হাসপাতালগুলো জরুরি রসদের জন্য মরিয়া হয়ে আছে। শনিবার মিশর থেকে ২০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত গাজায় জ্বালানি প্রবেশ করেনি।

সোমবার ইউনিসেফ হুশিয়ার করে বলেছে, কমপক্ষে ১২০টি শিশু ইনকিউবেটরে রয়েছে।

এর মধ্যে ৭০টি অপরিণত নবজাতক ভেন্টিলেটরে রয়েছে-অর্থাৎ এরা সবাই জেনারেটর চালিত মেশিনের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে।

গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ইসরায়েল বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে জেনারেটর ব্যবহার করা শুরু হয়।

ফিলিস্তিনের চিকিৎসা সহায়তা বিষয়ক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ফিকর শাল্লতুত এর গাজার পরিচালক বলেন, জেনারেটর চলা বন্ধ হয়ে গেলে অপরিণত শিশুরা নাও বাঁচতে পারে।

বিবিসিকে তিনি বলেন, “ওই ওয়ার্ডে ৩২ সপ্তাহ বয়সী একটি শিশু রয়েছে যার মা বিমান হামলায় মারা যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে বাঁচিয়েছে।”

“শিশুটির মাসহ পুরো পরিবার মারা গেছে। শুধু শিশুটিকেই বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।”

এর আগে রাফা ক্রসিংয়ে জ্বালানির ট্রাক দেখা গেছে। তবে সেগুলো গাজায় ঢুকতে পেরেছে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

যা বলছেন বিশ্ব নেতারা
রবিবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালির নেতারা ইসরায়েল-গাজা সংঘাত এবং গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

হোয়াইট হাউজ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং অন্য নেতারা ফোনালাপের মাধ্যমে “ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং তার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থনও জানিয়েছেন”।

একই সাথে “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করারও” আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, “দুই জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার ঘটনাকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন এবং বাকি সব জিম্মিকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।”

“নেতারা গাজায় থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরী ত্রাণ নিয়ে প্রথম মানবিক সহায়তার গাড়ি বহর প্রবেশের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

এছাড়া মানবিক সহায়তা হিসেবে জরুরী খাবার, পানি, চিকিৎসা সেবা এবং অন্যান্য সহায়তার টেকসই ও সহজ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ওই অঞ্চলে থাকা অংশীদারদের সাথে সমন্বয় করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।”

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Loading