স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ৭৪তম জন্মজয়ন্তি

প্রকাশিত: ২:২১ অপরাহ্ণ , আগস্ট ১৯, ২০২৩

ফেনী প্রতিনিধি

স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যচার্য সেলিম আল দীনের ৭৪তম জন্মজয়ন্তিতে আলোচনা, নাটকে-কবিতায় স্মৃতিচারণ ও দোয়ার আয়োজন করেছে সেলিম আল দীন চর্চা কেন্দ্র ফেনী। শুক্রবার সন্ধ্যায় আর্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মিলনায়তন কক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ফেনী জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাহিদ হোসেন বাবলু। সেলিম আল দীন চর্চা কেন্দ্র ফেনীর সাধারণ সম্পাদক রাজীব সারওয়ারের সঞ্চালনায় অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব সংলাপ ফেনীর সাধারণ সম্পাদক নারায়র নাগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ফেনী জেলার সহ সভাপতি কবি মঞ্জুর তাজিম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ফেনীর সভাপতি ও উদয়ন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক শান্তি রঞ্জন চৌধুরী, নজরুল একাডেমী ফেনীর সহ সভাপতি সাইফুদ্দিন মজুমদার শাহীন, আর্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি প্রদীব দেব নাথ, ফেনী থিয়েটারের সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন রাজু, নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন চর্চা কেন্দ্র ফেনী জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও আলাপন আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক শামীম, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ফেনীর সাধারণ সম্পাদক আর কে শামীম পাটোয়ারী, সেলিম আল দীন চর্চা কেন্দ্র সোনাগাজী শাখার আহ্বায়ক আবদুর রহমান সুজন, সেলিম আল দীন চর্চা কেন্দ্র ফেনীর সাংস্কৃতিক সম্পাদক তাহমিনা তোফা সীমা, জাগরণী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সস্পাদক আর ডি বাবলু, ফেনী সাহিত্য সভার আহ্বায়ক সাবিহ মাহমুদ, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা ফেনীর সাধারণ সম্পাদক ওমর ফিরোজ মামুন প্রমুখ। স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন সেলিম আল দীন ভক্ত রাজনৈতিক সংগঠক দাউদুল ইসলাম, নাট্যকর্মী ফাতেমা জান্নাত শশি, রিফা তকি ইসলাম, মো. ইরফান মিয়াজি, মোসলেহ উদ্দিন, সাজ্জাদ হোসেন সানি, আবৃত্তি কর্মী মমিনুল রাহিম, সুবল চক্রবর্তী প্রমুখ। স্মরণসভায় নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন চর্চা কেন্দ্র ফেনীর সদস্যরা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সেলিম আল দীনের। তিনি নাটকের আঙ্গিক ও ভাষার উপর গবেষণা করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। বাংলা নাটকের শিকড় সন্ধানী এ নাট্যকার ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের বিষয় ও আঙ্গিক নিজ নাট্যে প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলা নাটকের আপন বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। নাটকে তিনি বলেছেন, মানুষের কোনো আলাদা পরিচয় ও ঠিকানা নেই। এই পরিচয় ও ঠিকানা না থাকলে তার জাতও থাকে না। বক্তারা আরও বলেন, নাট্যাচার্য তাঁর কর্মে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। এর আগে শুক্রবার বাদ জুমা সেলিম আল দীনের জন্মভূমি মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের সেনের খিল গ্রামের দুটি মসজিদে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করে। প্রসঙ্গত, নাট্যকারের জীবনী থেকে জানা যায়, নাট্যকার সেলিম আল দীনের (মঈন উদ্দিন আহমেদ) জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট, ফেনী জেলার সোনাগাজীতে। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান। বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। সেই সূত্রে ঘুরেছেন বহু জায়গায়। লেখক হবেন এমন স্বপ্ন তিনি ছেলেবেলা থেকেই দেখেছেন। এ বিষয়ে তিনি পাকা সিদ্ধান্ত নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর। লেখক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৮ সালে। সে বছর কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে তার একটি প্রবন্ধ দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি নাটকে জড়িয়ে পড়েন, যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠা সেলিম আল দীনের হাত ধরেই। ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আল দীন ১৯৮১-৮২ সালে নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফকে সাথী করে গড়ে তোলেন গ্রাম থিয়েটার। সেলিম আল দীন ১৯৮৪ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০০২ সালে পান কথাসাহিত্য পুরস্কার। ১৯৯৪ সালে তিনি নান্দিকার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৪ সালে শ্রেষ্ঠ টেলিভিশন নাটক রচয়িতার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি পান শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৯৫ সালে তিনি মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে নাটক এর উপর গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার পান ২০০১ সালে। সেলিম আল দীন বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানীয় পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন ২০০৭ সালে। তিনি ২০২৩ সালে স্বাধীনতা পদক (মরোনত্তর) এ ভূষিত হন। ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন বাংলা নাটকের কালপুরুষ সেলিম আল দীন।

Loading