বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপারে রেকর্ড : ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয়

প্রকাশিত: ১১:০৮ অপরাহ্ণ , জুলাই ২৭, ২০২৩

পদ্মা সেতু ব্যবহারে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গেল অর্থবছরে (২০২২-২৩) বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ২১ লাখ ২৯ হাজার ৬৯৩ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেছেন। এতে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। কিন্তুু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় দুর্ভোগ কাটেনি যাত্রীদের। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন অবকাঠামো নির্মাণের।
পদ্মা সেতুর কল্যাণে ঢাকা থেকে
বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব কমে যাওয়ায় এ রুটে যাত্রী পারাপার বেড়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মালবাহী ট্রাককে আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীপাড়ে অপেক্ষা করতে হয় না। ফলে বেড়েছে বাণিজ্যিক সুবিধাও।

জানা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতের বাণিজ্য শহর কলকাতাসহ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষাসহ স্বজনদের সাথে দেখা করতে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ যান। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, যাতায়াতে সময় ও খরচ কম বিধায় ভারতগামী অধিকাংশ মানুষ এপথ ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তুু বেনাপোল চেকপোস্টে আগের ভোগান্তি রয়ে গেছে। বন্দরে যাত্রী নিরাপত্তা ও সুবিধা বাড়েনি। ভ্রমণকর ৫০০ টাকার স্থলে এক হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। বন্দরের টার্মিনাল চার্জ ৫২ টাকা যাত্রী প্রতি নেওয়া হলেও কোন অবকাঠামো বেড়ে ওঠেনি। কোন সেবা পাচ্ছে না যাত্রীরা। এখনো ঘন্টার পর ঘন্টা রোদ বৃষ্টিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। টার্মিনালের বাইরে অসুস্থ্য যাত্রীদের বসার বা বাথরুমের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। লাইনে থাকা যাত্রীরা টার্মিনালের মধ্যে বাথরুমে যেতে পারেন না। ভোরে আসা যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো চরমে।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক বলেন, গত বছর দেশে উন্নয়ন খাতে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে তার মধ্যে পদ্মা সেতু ছিল সবচেয়ে আলোচিত। সেতুর কল্যাণে ঢাকা থেকে বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব কমেছে ৭১ কিলোমিটার। এটি শুধু বাণিজ্যকে সহজ করেনি, এ পথে ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ কমিয়েছে। এখন ঢাকা থেকে মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টায় বেনাপোলে পৌঁছানো যাচ্ছে। যাতায়াত সুবিধা ও অর্থ সাশ্রয়ের জন্য অন্য বন্দর বা আকাশপথ ব্যবহারকারীরা এখন বেনাপোল রুট ব্যবহার করছেন।

ভারত থেকে আসা যাত্রী জেসমিন বলেন, পদ্মা সেতুতে যাত্রা সহজ হয়েছে। তবে বেনাপোল বন্দরের আগের ভোগান্তি রয়ে গেছে। বন্দরে যাত্রী নিরাপত্তা ও সুবিধা বাড়াতে হবে।
ভারতগামী পাসপোর্টধারী যাত্রী আমির হোসেন জানান, বর্তমানে ভারত ভ্রমণে প্রাপ্তবয়স্কদের এক হাজার টাকা, শিশুদের ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর ও বন্দর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল চার্জ বাবদ ৫২ টাকা পরিশোধ করতে হয়। অথচ প্রতিশ্রুতি কোনো সেবা নেই। বন্দরে যাত্রীছাউনি না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভ্রমণকরের হার পূর্ণ নির্ধারণের কথা বলেন এই যাত্রী।

ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্রমণ কর এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। এছাড়াও ১২ বছরের নিচের যাত্রীদের জন্য ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৫ বছরের নিচে, অন্ধ, ক্যান্সার আক্রান্ত ও পঙ্গুত্ববরণকারী যাত্রীদের ক্ষেত্রে কোনও ভ্রমণ করের প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কতৃপর্ক্ষ। পূর্বে ৫০০ টাকা ভ্রমণকর পরিশোধ করে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করতে পারতেন।

বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবীব জানান, ভারত ও বাংলাদেশগামী পাসপোর্ট যাত্রীদের সুবিধার্থে ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়। কোন ধরনের অনিয়ম করা হয় না বিধায় প্রতি বছর ভারত গমনাগমনকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. শাফায়েত হোসেন জানান, পদ্মা সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করে দিয়েছে। সময় কম ও সাশ্রয়ের জন্য যাত্রীরা এখন বেনাপোল চেকপোস্ট ব্যবহার করছে বেশি। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। গত অর্থবছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে ভ্রমণ কর থেকে।

যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে যাত্রী ছাউনির জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে জানিয়ে বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, পদ্মা সেতুর কল্যাণে গেল অর্থবছর শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২১ লাখ ২৯ হাজার ৬৯৩ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী দুই দেশে যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ১০ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৪ জন। আর ভারত থেকে দেশে এসেছেন ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৮ জন। ২০২১-২২ অর্থবছরের যাতায়াত করেন ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৮ জন। ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে যাত্রী বেড়েছে ১৫ লাখ ৭১ হাজার ১০১ জন।

Loading