প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল

প্রকাশিত: ৫:০৫ অপরাহ্ণ , মে ২৫, ২০২৩

ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো দুখু মিয়া, প্রকৃতপক্ষেই যার জীবনটা ভরা ছিলো দুখে। তবে সেই দু:খকেই শক্তিতে পরিণত করেছিলেন তিনি, তার লেখনির মধ্যদিয়ে। আজ আমাদের জাতীয় কবি দুখু মিয়া, কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪ তম জন্মদিন।

বিদ্রোহী -প্রেম, সাম্য-মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন।

১৯০৮ সালে কাজী নজরুল ইসলামের পিতা ফকির আহমদ মৃত্যুবরণ করলে তাদের পরিবার আর্থিক অনটন ও কষ্টের মধ্যে পড়ে যায়। গ্রামের স্থানীয় মক্তবে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের প্রয়োজনে নজরুল নিজের মক্তবে শিক্ষকতা ও মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। আল কুরআন, ধর্ম ও দর্শন, ইসলামী জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশের সুযোগ পান তিনি বাল্যকালেই।

জীবিকার প্রয়োজনে এমনকি রুটির দোকানেও কাজ করেছেন দুখু মিয়া। তরুণ বয়সে সেনা সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছেন যুদ্ধেও। সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। করেছেন রাজনীতিও। সাহিত্য চর্চার শুরুটাও বালক বয়সে।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও কাজী নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল।

১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তার সাড়া জাগানো কবিতা সঙ্কলন ‘অগ্নিবীণা।’ কাব্যগ্রন্থটি বাংলা কাব্যের ভুবনে পালাবদল ঘটাতে সক্ষম হয়। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে যায়। পরে খুব দ্রুত আরও কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ‘বিদ্রোহী’, ‘কামাল পাশা’ ছাড়াও এই কাব্যগ্রন্থের ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘আগমনী’, ‘খেয়াপারের তরণী’, ‘শাত-ইল্-আরব’ কবিতাগুলো তুমুল হৈচৈ ফেলে দেয় সর্বত্র। নজরুল গদ্য রচনার বেলায়ও ছিলেন স্বতন্ত্র চিন্তার। তার প্রথম গদ্য ‘বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী’ ১৯১৯ সালে সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

নজরুলের সাহিত্যিক জীবনের অবসান ঘটে মাত্র ৪১ বছর বয়সে। এর পর তিনি নির্বাক হয়ে যান।

তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন।

Loading