ঘুরে এলাম জাফলং

শামীম রেজা শামীম রেজা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ , মার্চ ২৯, ২০২৩

ঘুরে এলাম বৃহত্তর সিলেটের বিখ্যাত স্থান চায়ের দেশ সিলেট, পাহাড় ও ঝর্নার দেশ সিলেট, তার চেয়ে বড় পরিচয় হলো সিলেট জীববৈচিত্র্যের এক সমৃদ্ধ বিভাগ। সিলেটের প্রকৃতি যেমন বৈচিত্র্যময় আছে পাহাড়, ঝর্না, নদী, ছরি, হাওর, বাঁওড়, বিল ও বন তেমনি সিলেট বন্যপ্রাণি পাখি, প্রজাপতি, মাকড়সা ও মাছের জন্য বৈচিত্র্যময় সমাহার। সিলেট বিভাগে আছে সাতটি সংরক্ষিত বন ও বিল। এর মধ্যে রাতারগুল, বিছানাকান্দি, জাফলং, লাওয়াছড়া জাতীয় উদ্যান অন্যতম। আর তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) উদ্যোগে ২০২২ সালের ভ্রমণের জন্য বৃহত্তর সিলেট বিভাগকে বেছে নেয়া হয়। আমাদের সফর শুরু হয় ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭ টায় রাবিসাসের কার্যালয়ের সামনে থেকে ।

আমরা রাবিসাসের সদস্য এবং বাইরের অন্যান্য বন্ধুসহ প্রায় ৪০ জনের একটা বহর উঠি বাসে। বাসে উঠার পর বাস ক্যাম্পাস ত্যাগ করে সরাসরি সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ভোরের দিকে সূর্যমামা উঁকি দিল বাসের জানালায়। ততক্ষণে বাস প্রবেশ করেছে সিলেট শহরে। ভোরের আবহ খুলে রোদ পোহাচ্ছে ফসলের মাঠ, সবুজের জনপদ। এভাবে বাস এগিয়ে গেল আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। সকাল ৭টায় আমরা পৌঁছে গেলাম “রাতারগুল বনে”। এরপর বাস থেকে সকলে নেমে গোল হয়ে দাঁঁড়ালাম এবং শুনলাম চারদিকে প্রাথমিক আলোচনা কিভাবে বনে ঘুরতে হয় বন্যপ্রাণিকে ডিস্টার্ব না করে। রাতারগুলে পৌছিয়ে ৫টা নৌকা ভাড়া করা হলো। যার প্রত্যেকটিতে ৮ জন করে উঠলাম। এরপর সরু নালার মধ্য দিয়ে শুরু হল যাত্রা। আশেপাশে ঝোপঝাড় এবং গাছগাছালিতে ভরপুর। গা ছমছমে অবস্থা। আমাদের নৌক্র মাঝি ছিলো একটা ১২ বছরের কিশোর। যাকে আমরা আগে থেকেই চিনতাম ফেসবুকের তার ভাইরাল গানের জন্য। অতএব এবারো সে তার সুরেলা কণ্ঠে গান ধরলো। শুনলাম, মুগ্ধ হলাম,রেকর্ড করলাম। তারপর বনের একেবারে ভিতরে ঢুকে কিছুক্ষণ সবাই হাটাহাটি করে ছবি তুললাম। এরপরে আবারো বাসের দিকে ফিরে আসা। এবার আমাদের গন্তব্য বিছানাকান্দি। যেখানে আছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় এবং ঝর্ণা। যদিও সেখানে আমাদের যাওয়া নিষেধ। কেননা সেটা ভারত সীমান্তের মধ্যে। বিছানাকান্দির দৃশ্য দেখে মনে মনে রাগান্বিত হলাম। সব সুন্দর সুন্দর পাহাড়, ঝর্ণা ভারতের ভিতরে। আমাদের দেশ থেকে শুধু দেখায় যায়,ধরা যায় না। যাইহোক আমরা সেখানে আমাদের সীমান্তের মধ্যে ঝর্নার পানি প্রবাহিত হয়ে যে নদীর সৃষ্টি হয়েছে, সেই পাথুরে নদীতে সবাই মিলে জলকেলিতে মেতে উঠলাম,ছবি তুললাম। তারপর আবারো বাসের দিকে যাত্রা। বাস আমাদের নিয়ে এবার ছুটলো রাতের থাকার ব্যবস্থার হোটেলের দিকে। হোটেলে পৌছিয়ে দেখি হোটেলটি ঠিক শাহজালালের মাজারের গেটের সামনে। ১ম দিনের মত যাত্রা শেষ। ২য় দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই রওনা হলাম জাফলংয়ের দিকে। জাফলংয়ের সাদা পাথর, নৌকায় করে গিয়ে ঝর্নার পানিতে গোসল এবং যেখান থেকে ঝর্নার পানি পড়ছে সেই পাহাড়ে আরোহন করলাম। পাহাড়ে উঠা খুবই ঝুকিপূর্ণ ছিলো। পাথরগুলো পিচ্ছিল ছিলো তবুও অনেক কষ্টে উঠে ঝর্নার পানিতে গোসল সারলাম। তারপর আবারো সেই ঝর্নার পানিতে যে নদীর সৃষ্টি সেখানে গোসল দিলাম।এবার সেখানে দুপুরের খাবার সেরে ছুটলাম শহরের দিকে। শাহ পরানের মাজার যিয়ারত, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবদ্যালয় ঘুরে ২য় দিনের মত যাত্রা শেষ করে হোটেলের দিকে রওনা হলাম। এবার ৩য় দিনে আমাদের গন্তব্য হলো মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া উদ্যান ও শ্রীমঙ্গলের চা বাগান। আমরা প্রথমে গেলাম মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে। সেখানে গিয়ে দেখলাম পাহাড়ের অনেক উচু থেকে খুব জোরে জল গড়িয়ে পড়ছে। ফলে ঠিক পানি পড়ার স্থানে যাওয়া পর্যটকদের জন্য যাওয়া নিষেধ। কেননা স্থানটা বিপদজনক। তাই আমরা কিছুক্ষণ ছবি তুলে গোসল না করেই ফিরে এলাম। কেননা সেখানে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির পরিমান কম ছিলো। এবার আমাদের গন্তব্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। সেখানে পৌছিয়ে টিকিট কেটে আমরা সবাই উদ্যানে প্রবেশ করলাম। বনের আঁকা-বাঁকা পথে হারিয়ে যাওয়া আর বানরের বাদরামি নিয়ে যায় অন্য এক জগতে, আর মাঝে মাঝে বনের ছড়ির ভেতর হেঁটে যাওয়ার সময় বালিতে পা ঢুকে যাওয়া কিংবা বনের ছোট ছোট টিলাগুলো অতিক্রম করার সময় সত্যই মনে হয় এ এক অন্য জগত, তারুণ্যের উদ্দীপনা, আর যৌবনের শক্তি। বনের মধ্যে হাজারো পাখির কলরব আর নানা রং-এর প্রজাপতির উড়াউড়ি মন হারিয়ে যায় এক অন্য স্বর্গে। সাতছড়ি বনের নাম সাতছড়ি হয়েছে কারণ এর মধ্যে দিয়ে সাতটি ছড়ি প্রবাহিত হয়েছে তাই। বর্ষাকালে ছড়িগুলো দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও শীতের মৌসুমে ছড়িগুলো শুকিয়ে বালির রাস্তা হয়ে যায়। এভাবে দুঘণ্টা ঘোরার পর আমরা আবার বাসে উঠে সোজা চলে যাই মৌলভীবাজারের হোটেল স্কাই পার্কে। হোটেলে মাত্র দেড় ঘণ্টার জন্য বিরতি খাওয়া-দাওয়া আর গোসল সেরেই আবার যাত্রা শুরু “বাংলাদেশ চা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে” সেখানে নানা প্রজাতির চা বাগানের পরিদর্শন। এবার আমাদের অভিযান শ্রীমঙ্গলের চা বাগান। এভাবে আমরা তিনদিনের যাত্রা শেষে একটা ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা হলাম।

Loading