বন্ধবন্ধু টানেলে সর্বহারা ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার আশঙ্কায় আনোয়ারার সাড়ে ৪শ পরিবার

প্রকাশিত: ৮:৫৯ অপরাহ্ণ , অক্টোবর ২৯, ২০২২

দেশের বহুল প্রতীক্ষিত মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এর মধ্যে টানেল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় টানেল প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া আনোয়ারার ৪০০ থেকে ৪৫০ পরিবার তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। দেশের এই মেগা প্রকল্পের এক প্রান্থ পতেঙ্গা হলেও অন্য প্রান্থ হচ্ছে আনোয়ারা উপজেলা। ফলে এই টানেলের সড়কের কারণে বাড়ী-ঘর ফসলি জমিসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই বন্দর, বৈরাগ, চাতরী ইউনিয়নের কিছু এলাকাসহ ৪০০ থেকে ৪৫০ পরিবার। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় এই টানেলের মূল সংযোগ সড়ক গিয়েছে বন্দর, রাঙ্গাদিয়া, বৈরাগ ও চাতরী মৌজার অংশ দিয়ে গিয়ে যুক্ত হয়েছে পিএবি ছয় লেন সড়কে। টানেল সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ মালিকদেরকে এলএ শাখা হইতে ক্ষতিপুরণ প্রদানের পাশাপশি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভূমির মালিকদের পুনর্বাসনের অতিরিক্ত মঞ্জুরি দিয়ে আসছে। তবে ইতি মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ায় পূনর্বাসন এই অতিরিক্ত মঞ্জুরি কার্যক্রম স্থগিত করতের যাচ্ছে প্রকল্প সংস্থা। দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেও পায়নি তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা। ফলে এই পূনর্বাসন প্রকল্পের অতিরিক্ত মঞ্জুরির এই এলাকা গুলোর ৪০০ থেকে ৪৫০ পরিবারের প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় শঙ্কায় রয়েছে। টানেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বৈরাগ মৌজা হইতে ২০.৪০৩০ একর ও বন্দর , চাতরী , রাঙ্গাদিয়া হইতে প্রয়োজনীয় নাল , বাড়ি , ঘর , ভিটি , পুকুর ইত্যাদি ভূমি অধিগ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ গত ৩১ আগস্ট স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয় আগামী ৩১অক্টোবরের পরে এই প্রকল্পের আর কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত ফাইল জমা নিবে না তারা। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় তারা কর্তৃপক্ষকে সব কাজ বুঝায় দিয়ে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করবে মর্মে জানাই।

তবে টানেল নির্মানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোর দাবি, যে অধিগ্রহণকৃত ভূমির অনেক দাবীদার ( মালিক ) করোনাকালীন দেশে সবকিছু বন্ধ থাকায় ও অনেকে প্রবাসে থাকায় এবং প্রকৃত মালিকানা ও ভূল বি.এস রেকর্ড সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে মামলা মোকাদ্দমা বিচারাধীন থাকায় এবং না – বালক না – বালিকাদের অভিবাবক নিযুক্ত সংক্রান্ত সমস্যাসহ নানা জটিলতার কারণে অনেক ভূমির ক্ষতিপূরণের টাকা এখনো পর্যন্ত উত্তোলন করিতে পারেনি। এছাড়াও দুই আড়াই বছর ধরে করোনার জন্য স্থগিত হয়ে থাকা সহ নানা জটিলতার কারণে এখনও পর্যন্ত তিন ভাগের এক ভাগ ভূমির মালিকগন ক্ষতিপূরনের টাকা উঠাইতে পারে নাই। যার ফলে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে অন্তত সাড়ে ৪শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এদিকে কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞাপ্তিটি প্রকাশের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো পাশ্বে দাড়িয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যানগন ও সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা। তারা ভূমির মালিকগণ ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে এর মধ্যে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক, ইউএনও স্থানীয় সাংসদ ভূমিমন্ত্রীর ধারস্থ হয়েছেন। বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোয়াব আলী বলেন, ১৯৮০ দশক হইতে সি.ইউ.এফ.এল কাফকো , কে.ই.পি.জেড , চায়না ইকোনোমিক্যাল জোন , গ্যাস লাইন , বিদ্যুৎ লাইন সহ বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য এলাকার বহু সম্পতি অধিগ্রহণ করা হয় । অথচ ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকগণ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় ও তাহাদের সহায় সম্পত্তি হারাইয়া অনেকে ভূমিহীন হইয়া নিঃস্ব হয়ে যায় । বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেইন সড়ক টানেল নির্মাণ ক্ষতিপূরণ পায়নি অন্তত সাড়ে ৪শ পরিবার। এমতস্বতায় কর্তৃপক্ষের যে সিন্ধান্ত নিয়েছে তা হলে এই ক্ষতিগ্রস্থরা আর এই ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে আমাদের সংশয় রয়েছে। তাই আমরা আমাদের মন্ত্রী মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছে অনন্ত আরো এক বছর সময় যেন বাড়িয়ে দেয়া হয়। টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে এবিষয় নিয়ে তো আমরা বসে থাকতে পারি না। তারা নানা ঝটিলতার কারণে আটকে আছে এখন এই কারণে আমাদের বসায় রাখা যাবে না। নির্দিষ্ট একটা সময়সীমার মধ্যে আমাদের কাজ শেষ করতে হবে। আমরা যাতে ক্ষতিপূরণ নিয়ে কোন কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় তার জন্য একাধিকবার মাইকিং এবং আমাদের নিয়োজিত সংস্থা গুলোর মাধ্যমে কাজ করে গেছি। তবে আমরা চেষ্টা করব যাতে কোন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার যেন ক্ষতিপূরণ না পেয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়।

Loading