নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি

মোংলায় বাড়ছে আতঙ্ক

প্রকাশিত: ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ , অক্টোবর ২৪, ২০২২

ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে মোংলায় সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। এই বিপদ সংকেতে মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠা-নামার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ঝড়ের কারণে গাড়িসহ পাঁচটি বাণিজ্যিক জাহাজ এই বন্দরে ঢুকতে পারেনি।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টায় এই সতর্কতা জারি করে আবহাওয়া অফিস। পণ্য খালাস শেষ হওয়ার পরও তিনটি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করতে পারেনি।

চরম আতংকে রয়েছে মোংলাসহ সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০৩টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তত রাখা হয়েছে। তবে সেখানে জোয়ারের উচ্চতা ছাপিয়ে মোংলা ও পশুর নদীতে পানি বেড়েছে পাঁচ থেকে সাত ফুট।

মোংলা উপজেলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানান, শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপটি সোমবার (২৪ অক্টোবর) ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ বাড়ার সাথে ভারী বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে।

যদি প্রতিঘন্টায় ৭৫ থেকে ৮০ কিলোমিটার হয় তাহলে এটি সাইক্লোনে রুপ নিবে। মঙ্গলবার (২৫ অক্টেবার) ভোরের দিকে সিত্রাং বাংলাদেশ অতিক্রম করবে বলে জানান তিনি।

এর ফলে সাগর উত্তাল থাকার পাশাপাশি সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে নতুন করে উপকূলের জনমনে আতংক বিরাজ করছে। সুন্দরবনের পাশের এলাকা জয়মনির বাসিন্দা মোঃ শাহজালাল (৪৮), বেল্লাল হোসেন (৩২) বলেন ও রয়মন বেগম (৪১) বলেন, সকাল থেকে বাতাসসহ ভারী বৃষ্টি হচ্ছে, ঝড় শুরু হয়েছে। আমরা ভয়ে আছি, সাইক্লোন শেল্টারে যাচ্ছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, ইতোমধ্যে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পাশাপাশি, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ও সিপিপি (ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচি) কাজ করছে। এছাড়া ১০৩টি সাইক্লোন শেল্টারে লোকজন আশ্রয় নেওয়া শুরু করছে। এছাড়া তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

উপজেলা, পৌরসভা এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে পৃথক তিনটি কন্ট্রোলরুমও খোলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সিপিপি’র মোংলা উপজেলার টিম লিডার মাহমুদ হাসান বলেন, ৭ বিপত সংকেত জারির পর উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় তারা দুটি সিগনাল পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ঝড় মোকাবেলা ও করণীয় দায়িত্ব পালনে তাদের ১৩২০ জন স্বেচ্ছাসেবক কর্মিরা মাঠে কাজ শুরু করেছেন।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ বলেন, সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারি হওয়ার পর তারা জরুরি সভা করে বন্দরের নিজস্ব এলার্ট-থ্রি জারি করেছেন। এছাড়া রোববার রাত থেকে বন্দরে অবস্থানরত ১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা রাখা হয়েছে। ঝড়ের কারণে সার, কয়লা ও গাড়ীসহ পাঁচটি জাহাজ এই বন্দরে ঢুকতে পারেনি। এছাড়া পণ্য খালাস শেষ হওয়ার পরও তিনটি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করতে পারেনি বলেও জানান তিনি।

এদিকে উপকূলে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের সাথে একই দিনে সূর্যগ্রহণের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ফুট পানি বাড়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাব কারণে পাঁচ থেকে পাঁচ সাত ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য উপকূলের জনপদকে সতর্ক হতে বলা হয়েছে।

Loading