বশেমুরবিপ্রবি: ভবনে তালা ঝুলিয়ে দাবি আদায়ের সংস্কৃতি

প্রকাশিত: ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ , এপ্রিল ১১, ২০২২

২০১৯ সালে নিয়োগে দুর্নীতি, ভর্তি দুর্নীতি, টাকা আত্মসাৎ ও নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগে পদত্যাগ করেছিলেন সাবেক উপাচার্য খন্দকার নাসির উদ্দিন। তবে পদত্যাগেই শেষ নয়। শুরু হতে থাকে বহুমুখী সমস্যা। শিক্ষক, ক্লাসরুম ও ল্যাব সংকট, অনুমোদনহীন বিভাগ, স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগসহ হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি।

দিনের পর দিন লেগে থাকে নতুন নতুন ইস্যু নিয়ে আন্দোলন, অবস্থান কর্মসূচি, ও আমরণ অনশন। এরই সূত্র ধরে চালু হয় দাবি আদায়ের লক্ষ্যে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টির এক সংস্কৃতি। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলেই ভোগান্তিতে পড়ছেন।

একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা জানান, অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার সম্মিলিত স্বার্থ হাসিল, দাবি আদায় বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে একাডেমিক বা প্রশাসনিক ভবনে তালা দিলেও বর্তমানে একক দাবি আদায়ের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। মূলত প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়হীনতার কারনে এমনটা হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের উপর একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এটা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে সমাধানের বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয়।

বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিজা সুলতানা বলেন, “নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে তালা ঝুলিয়ে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম অস্থিতিশীল করা নিন্দনীয় কাজ৷ আমাদের এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং খেসারতও দিতে হচ্ছে। সকলের দিক বিবেচনা করে আমাদের এমন সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।”

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, “নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। এছাড়া সাবেক উপাচার্যের দুর্নীতি কারনে বিভিন্ন সমস্যা লেগেই আছে। এমনিতেই করোনার কারনে সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে, এরকম তালা দেয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা আরও পিছিয়ে পড়ছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে, ইউজিসি অনুদান বাড়াতে হবে এবং অতিদ্রুত সম্ভব সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।”

এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের সভাপতি জাকিয়া সুলতানা মুক্তা বলেন, “দাবি আদায়ের জন্যে আন্দোলন সংগ্রাম হবে খুবই স্বাভাবিক। সেই সাথে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী সকলেরই দায়বদ্ধতা রয়েছে। এই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আন্দোলনকারীরা দাবি বা অধিকার আদায়ের জন্যে বিকল্প পন্থা খুঁজে নিতে পারে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, “এটা প্রশাসনের দূর্বলতা নয়। ছাত্ররা শিক্ষকদের কোনো কথা মানে না। রুম দখল করা শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব না। একজন শিক্ষককে তালা দিয়ে রাখে এটা প্রশাসনের দুর্বলতা নাকি ছাত্রদের বেয়াদবি? রুম আছে, ডিস্ট্রিবিউট হয়ে যাবে কিন্তু তাদের এখনি রুম চাই। এসমস্ত বিশৃঙ্খলা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা করেনা।”

Loading