রেগ ডে এখন অশ্লীলভাবে মাধ্যমিকের গণ্ডিতে

প্রকাশিত: ২:৫৭ অপরাহ্ণ , নভেম্বর ১৪, ২০২১

রেগ শব্দের আভিধানিক অর্থ ছেঁড়া কাপড় বা ছিন্ন বস্ত্র। রেগডে বলতে সাধারণত স্কুল, কলেজ বা বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমাপনী দিনটিকে বোঝায়। সপ্তম-অষ্টম শতকে খেলার মাঠে স্পিরিট নিয়ে আসার জন্য রেগিং এর প্রচলন শুরু হয়। অষ্টম শতকের মাঝামাঝি ইউরোপে এর প্রচলন ঘটে। ইংরেজি শব্দ রেগিং থেকেই রাগ শব্দের উৎপত্তি। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১৮২৮ থেকে ১৮৪৫ সালের দিকে র্যাগ সপ্তাহ পালন শুরু হয়।
গত কয়েক দশক আগে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খুব নিটোল পরিবেশে র্যাগডে পালিত হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাপনী দিনে শিক্ষার্থীরা সারাদিন আনন্দ উল্লাস ও হৈ-হুল্লোড় করত। বিকেল গড়ালে উপাচার্যগণ শিক্ষার্থীদের উদ্যেশ্যে বিদায়ী বক্তৃতা দিতেন। যেখানে থাকত শিক্ষার্থীদের আদেশ, উপদেশ, পরামর্শ বা জীবনে চলার মুল্যবান পাথেয়। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আজ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাড়িয়ে র্যাগডে মাধ্যমিক স্কুলের গণ্ডিতে অত্যন্ত অশ্লীলভাবে প্রবেশ করেছে। আগে থেকে স্কুলগুলোর কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও র্যাগডে হতো। তবে তাকে র্যাডডে বলা হতো না। তাকে বলা হতো বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এখানেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় নিটোল এক অনুষ্ঠান করা হতো। হোক না ক্ষুদ্র পরিসরে। তাতে মঞ্চে শিক্ষার্থীরা তাদের স্ব স্ব অনুভূতি প্রকাশ করত, শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা ও দোয়া চাইত। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কখনো অঝোরে কেঁদেই দিত। শিক্ষকরাও তাদের উদ্যেশ্যে বক্তব্য দিতেন। জীবনকে সু্ন্দর করে তোলার পরামর্শ দিতেন। ফাঁক ফাঁকে বিদায়ী গানও হতো। সব মিলিয়ে এক প্রানবন্ত পরিবেশ ছিল। কিন্তু গত এক দেড় সাপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের অসংখ্য স্কুল-কলেজে অতীতের ঐতিহ্য সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে, পুরোপুরি বিপরীত হয়ে গেছেও বলা চলে। বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান না হয়ে তথাকথিত র্যাগডের নামে হচ্ছে অশ্লীলতা। শিক্ষার্থীরা একে অপরের সাদা টি-শার্টে রঙিন কলম দিয়ে লিখে দিচ্ছে অশ্লীল শব্দ, বাক্য বা মারাত্মক গালি। আঁকছে অপ-চিত্রও। গায়ে রং মেখে বিপরীত লিঙ্গের দুজনে জড়াজড়ি করছে। শিক্ষার্থীদের সুন্দর বিকাশে এ চিত্র চরম অন্তরায়ের জাহির করে। এ বয়সেই শিক্ষার্থীরা এমন কু-কর্মে জড়িয়ে পড়লে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। সমাজ জীবনের স্বার্থে ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অতীব প্রয়োজনে এ কু-কর্ম অনতি বিলম্বে বন্ধ করা উচিত। এর সুরহা পেতে হলে পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিল্পসাহিত্যের দিকে ধাবমান করাতে হবে। অভিবাবক ও শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে। ক্রমাগত আসন্ন এ অপসংস্কৃতি দ্রুত রুখতে না পারলে আগামী বছর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের এ কাজে লিপ্ত হবার সম্ভাবনা আছে।

মোঃ রাসেল হাসান

Loading