কঠোর বিধিনিষেধ

‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ নিয়ে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী

প্রকাশিত: ৫:২৭ অপরাহ্ণ , জুন ৩০, ২০২১

দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে। ভারতীয় তথা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে কেবল ‘বিধিনিষেধ’ নয়, ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ পালনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এই কঠোর বিধিনিষেধের সামগ্রিক চিত্র আগের যেকোনো বিধিনিষেধের চেয়ে ভিন্নতর। এবার ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠে নামছে সেনাবাহিনী।

বুধবার (৩০ জুন) দুপুরে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে ২১ শর্ত উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারির পর, একইদিন বিকেলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে আলাদা বার্তা পাঠানো হয়।

ওই বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ‘করোনা ভাইরাসের বিস্তাররোধে আরোপিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের জন্য “ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার” এর আওতায় ১-৭ জুলাই ২০২১ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে।’

আইএসপিআর এর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রেজা-উল করিম শাম্মী’র বার্তাপত্রে স্বাক্ষর করেন।

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে-

১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিসসূমহ বন্ধ থাকবে।

২. সড়ক, রেল ও নৌ-পরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

৩. শপিংমল ও মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

৪. সকল পর্যটনকেন্দ্র রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৫. জন সমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান (বিয়ে, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীও আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৮. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা যেমন-কৃষি পণ্য ও উপকরণ ( সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্য শস্য, খাদ্য দ্রব্য পরিবহন , ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসহ অন্যান্য জরুরি পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারি ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কার্ভাডভ্যান, কার্গো, ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।

১০. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।

১১. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

১২. শিল্প-কারখানাসমুহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।

১৩. সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন ও সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।

১৪. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।

১৫. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল টাকা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (online/take) করতে পারবে।

১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে।

১৭. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

১৯. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোন কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

২১. স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।

উল্লেখ্য, এই কঠোর বিধিনিষেধ চলবে আগামীকাল ১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ভোর ৬টা থেকে ৭ জুলাই (বুধবার) রাত ১২টা পর্যন্ত। এই কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কেবল সেনাবাহিনী নয়, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরাও মাঠে তৎপর থাকবে।

Loading