জনহিতকর কর্মকাণ্ড ও সৃজনশীল সৃষ্টিই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে

প্রকাশিত: ১:৫৩ অপরাহ্ণ , জুন ২১, ২০২১
                                                         এডভোকেট আব্দুল হান্নান রঞ্জন

মানুষ মরণশীল তবে মানুষের নাম-দাম, কাজ-কাম ও তার জনহিতকর সেবামুলক কর্মকান্ড আর সৃজনশীল সৃষ্টির মাঝে বেঁচে থাকে । মানুষের জনকল্যানমুলক কর্ম আর সৃজনশীল সৃষ্টিতে অর্জিত সুনামই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে যুগের পর যুগ, অনন্তকাল। কোন মানুষের কর্ম বা সৃষ্টি ভালো হলে বা সমাজে কল্যানকর কাজ হলে তার নাম-দাম সুনাম প্রশংসিত হয়, আলোচিত হয় তার গুণাবলী এবং রেখে যাওয়া কর্ম আর সৃষ্টিতে তার অবদানগুলিই সমাজে মানুষের মুখে মুখে প্রশংসিত হয় যা মানব সমাজের অনেককেই সমাজহিতকর কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততার পথ দেখায়। সমাজ তথা সমাজে বাস করা মানুষগুলোও উপকৃত হয় প্রজন্ম পরম্পরায়।

 মানুষ সমাজকল্যানকর কর্ম, কাজ বা সৃষ্টিতে বিশ্বাসী। যে কোন মানুষের সমাজহিতকর কর্মকান্ড বা জনকল্যানমুলক সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন হয় সমাজ আলোকিত হয়। এরকম পরিবর্তনের ফসল ভোগ করে সমাজের অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ  সমাজের তরুন আর নুতন প্রজন্ম।
  দিলওয়ার খান, সিনিয়র সাংবাদিক, নিরহংকারী এবং কর্মঠ মানুষ । তার কর্মস্পৃহাই বলে দেয় সে দেশ সমাজ তথা মানুষকে ভালবাসে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি লালিত স্বপ্নে পথচলে আর ভাবে, কি করলে বা কিভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে  বা যুবসমাজকে বা আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে নেওয়া যায়, আলোর পথ দেখানো যায়, গ্রামীন পরিবেশকে আলোকিত করা যায় এবং বিস্তীর্ণ গ্রামীন জনপদে শিক্ষার হার বাড়ানো যায়। এমনই ভাবনায় তার পথচলার প্রতিপাদ্য হলো,  দেশ, সমাজ ও সামাজিক পরিবেশকে সুন্দর রাখতে জ্ঞানার্জন জরুরী। “আলোকিত সমাজ গড়তে জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই”।
  সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে সমাজ ও সামাজিক পরিবেশকে আলোকিত করার উদ্দেশ্য এবং সমাজের অসহায় দরিদ্র ও পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীকে সাধ্যমত সহায়তা করার উদ্দেশ্যে এবং লক্ষ্যে গত ২০১১ সনে এলাকার সমমনা কয়েকজনকে নিয়ে গড়ে তোলে তার শিক্ষক পিতা মরহুম আব্দুর রহমান সাহেবের নামে ” আব্দুর রহমান ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ” নামক একটি  স্বেচ্ছাসেবী ও সমাজসেবামূলক অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
 এখানে উল্লেখ্য যে, মরহুম আব্দুর রহমান সাহেব ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক,  জ্ঞাণে-গুণে,  আচার-আচরণে ছিলেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষের কাছে সম্মানীয় ও শ্রদ্ধাশীল এক অসাধারণ মানুষ।
  অদম্য সাহস আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম এবং জনহিতকর কর্মকাণ্ডের নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে বিরামহীন পথচলায় হাঁটি হাঁটি পা পা করে ইতিমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি অনেক বাধা-বিপত্তিসহ ঘাত-প্রতিঘাত, আলোচনা-সমালোচনা এড়িয়ে সাফল্যের সাথে ৯ বছর পেরিয়ে ১০ বছরে পদার্পণ করলো।
   আব্দুর রহমান ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশ  কতৃক পরিচালিত বিভিন্ন  জনহিতকর ও সেবামুলক কার্যক্রম বিশেষ করে সামাজসচেতন ও পরিবেশ দূষন প্রতিরোধ কল্পে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়াম আয়োজন, পরিবেশ রক্ষায় বনায়ন কার্যক্রম, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ভিক্ষুক পূনর্বাসনে কর্মসূচী গ্রহনসহ জনগনকে সম্পৃক্তকরণে গৃহীত কার্যক্রম গ্রহন এবং বাস্থবায়ন, সমাজের অসহায় দরিদ্র মানুষদের সহায়তাসহ বিভিন্ন জনহিতকর কার্যক্রমে আব্দুর রহমান ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে সারা জাগিয়েছে, সমাজের সচেতন মহলে স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত এবং প্রশংসিত হচ্ছে তার হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠানটি।
   এ ছাড়াও এলাকার বেকার নারী পুরুষদের বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দক্ষ কর্মশক্তি গড়ে তোলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে।
   সাংবাদিক দিলওয়ার খান  এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। এই প্রতিষ্ঠানটির মূল কার্যালয় করা হয়েছে নেত্রকোণা শহরের অনতিদূরে নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে সাকুয়া বাজারে।
    আলোকিত সমাজ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে এলাকার দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের পাঠদানে সহায়তা প্রদানের লক্ষে  “আব্দুর রহমান ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ” ইতিমধ্যেই  “আব্দুর৷ রহমান ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরী” (arfb library) গড়ে তোলেছে – যেখানে এলাকার দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের চাহিদা মোতাবেক পাঠদানে সহায়ক বিভিন্ন ক্লাসের পাঠ্য বই, বিভিন্ন পত্রিকা সহজলভ্য করে তোলা হয়েছে — যখানে এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদিনই এসে নিয়মিত পাঠদান করছে। বর্তমানে ভিট পাকা টিনসেড ঘরটির বড় একটি কক্ষে এককক্ষ বিশিষ্ট লাইব্রেরিটিতে ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী এক সাথে বসে পড়তে পারে। প্রতিদিনই এলাকার ৫০/৬০ জন শিক্ষার্থী পাঠ্যবইসহ সহায়ক বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে বই পড়তে এখানে ছুটে আসে এবং শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী পাঠকসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের চাহিদার তুলনায় এই লাইব্রেরী কতৃপক্ষ আর্থিক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের হাতে পর্যাপ্ত বই  তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
   আব্দুর রহমান ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান, জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক দিলওয়ার খান বলেন, স্বপ্ন বিশাল, সাধ্য কম– অর্থ সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যবইসহ তাদের শিক্ষা সহায়ক অন্যান্য প্রয়োজনীয় বই সরবরাহ করতে পারছি না। বর্তমানে লাইব্রেরিতে স্কুল, কলেজের পাঠ্যবই সহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা সহায়ক তিন হাজারের উপর বই রয়েছে।
  এই লাইব্রেরীর মাধ্যমে এলাকার দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী বিশেষকরে গণিত এবং ইংরেজিতে দূর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষ শিক্ষক/শিক্ষিকার মাধমে  রুটিন করে বিনামূল্যে পড়ানোসহ দরিদ্র শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহযোগিতা করাসহ মেধাবৃত্তি পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
   এলাকার ধনাঢ্য ও দানশীল ব্যাক্তিগন, উপজেলা ও জেলা প্রশাসন সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা পেলে শিক্ষার্থীদের জন্য বই সংগ্রহ করে বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো সহ লাইব্রেরী কেন্দ্রিক ডিজিটাল ষ্টাডি সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে যেখানে এলাকার শিক্ষার্থীদের তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিনামূল্যে  সেবা দেওয়া হবে।
   একটা প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরী সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রদীপের ন্যায় জ্ঞাণের আলো ছড়ায়, তরুন প্রজন্মকে উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত করে, বিকশিত করে, পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করে, এলাকার দূষনমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে, সামাজিক অনাচার প্রতিরোধে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে সুন্দর সমাজ গঠনে নিঃসন্দেহে বদ্ধপরিকর ।
   আব্দুর রহমান ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কতৃক প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরীটি সংশ্লিষ্ট এলাকার সবার সম্পদ, এলাকার স্বার্থেই প্রশাসনসহ ধনাঢ্য, দানশীল ব্যাক্তিবর্গ এবং জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসা উচিৎ এবং  নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে এই লাইব্রেরীতে সাধ্যমত সার্বিক সহযোগীতা  করে পরিপূর্ণ রুপ দেয়া এলাকার সকলেরই দায়িত্ব এবং কর্তব্য।  এ ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতার হাত প্রসারিত হউক, লাইব্ররীর সার্বিক উন্নয়নই লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধি করে সফলতার চুড়ান্ত শিখরে পৌঁছে এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হলেই সেবা নিশ্চত হবে এবং দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীরাসহ এলাকাবাসী উপকৃত হবে।

Loading