করোনাকালে শিক্ষার ক্ষতি পোষাণোই চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ৪:০৫ অপরাহ্ণ , মে ১, ২০২১

সেই গত বছর ১৭ মার্চ থেকে করোনার বহুল সংক্রমনের আশংকায় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অবরুদ্ধতার কঠিন জালে আটকে দেয়া হয়। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে এক অনাকাঙ্খিত ভয়ংকর রোগের প্রাদুর্ভাবে জনজীবন অচল হওয়ার উপক্রম।দীর্ঘ এক বছর হয়ে এলো শিক্ষাঙ্গনে নেই কোলাহল।ভোর হলে শোনা যায় না জাতীয় সংগীত,হয়না পাঠ শপথ বাক্য।স্কুল -কলেজ,মাদ্রাসা,বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কর্মস্হল যেন থমকে গেল কোভিড ১৯ এর কারণে।অর্থনীতি যেমন ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে,চাকুরীচ্যুত হয়েছেন অনেকে।শিক্ষা ব্যবস্হা পিছিয়েপড়েছে অবর্ণনীয়ভাবে।সত্যিকথা বলতে কী–করোনার মহাদুর্বিপাকে সবচাইতে বেহালদশা জাতির মেরুদন্ডস্বরুপ শিক্ষা কার্যক্রম।আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যত কারিগর খুদে ও উদীয়মান প্রজন্ম গত একবছর ধরে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন।

করোনার কারণে ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে শিক্ষাব্যবস্হা।জীবনের তাগিদে অন্য সব খাত স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল, পিছিয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। ৩০ মার্চ সব মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থতি অবনতি হওয়ায় খোলা হয়নি।

গত বছরের ১ এপ্রিল এইচ এস সি ও সমমানের পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে এ পরীক্ষা সূচি স্থগিত করতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অনিশ্চয়তায় দিন পার করছিল প্রায় ১২ লাখ পরিক্ষার্থী। অটো পাস দেওয়া হয় তাদের। কিন্তু এ বছরের শিক্ষার্থীদের কী হবে? নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে তাদের মাঝে।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ১৬কোটি ৮০ লাখেরও বেশি শিশুর জন্য প্রায় এক বছর ধরে স্কুল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।শিশুদের পড়াশুনা ও সার্বিক সুস্হতার ক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ রাখার পরিণতি ধংসাত্মক।সবচেয়ে ঝঁুকির মুখে থাকা এবং যারা দুরশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়না তারা আর কখনো ক্লাসরুমে ফিরতে না পারার ক্রমবর্ধমান ঝঁুকিতে রয়েছে।এমনকি শিশুবিয়ে বা শিশু শ্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার ঝঁুকিও বেড়েছে।স্কুলগামী শিশুদের বেশির ভাগই এমন এক স্হান হিসেবে তাদের স্কুলগুলোর ওপর নির্ভর করে যেখানে তারা তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে  যোগাযোগ রাখতে পারে, সহায়তা চাইতে পারে,স্বাস্হ্য পরিসেবা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারে।যত বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকবে, তত বেশি সময় ধরে শিশুরা তাদের শৈশবের এই গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে।

প্রকৃতঅর্থে শিক্ষা কার্যক্রম এমন এক নিত্য দিনের পাঠ্যাভাস যা কোন শিক্ষার্থিকে নিয়মশৃংঙ্খলার অনুবর্তী হয়ে ঞ্জানচর্চায় সমাপিত হতে হয়। কিন্তু বর্তমানে তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
এখন ফিরে আসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথায় তাদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কতটুকু হচ্ছে? সেমিষ্টার ফাইনাল হচ্ছে না,ক্লাসরুমে ফিরতে পারছেন না। পরবর্তী সময়ে সেমিষ্টারে উওীর্ণ কবে নাগাদ হবে?  সবচাইতে বেশি পিছিয়ে পড়ছে অনার্স প্রথম,দ্বিতীয়,তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।  সেশন জটের আশঙ্খায় দিন পার করছেন তারা।
দেশের সর্বমোট সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী অনিশ্চিয়তায় দিন পার করছেন। কবে নাগাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে এ বিষয় যেন নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করে তুলছে নতুন করে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাওয়াতে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচাইতে বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন।সেখানে তেইশ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী পড়াশুনা করেন। মূলত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবথেকে বেশি পিছিয়ে পড়েছে।
শিক্ষার্থীদের সাময়িক ক্ষতি পোষাণোর জন্য  তাৎক্ষনিকভাবে চালু করা হয় সংসদ টিভির মাধ্যমে পাঠক্রমের ব্যবস্হাপনা। কিন্তু তেমন শিক্ষা কার্যক্রমও সবার জন্য অবারিত হতে পারেনি। মূলত গ্রামে গঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে হতদরিদ্র বাবা মায়ের সন্তানদের অনেকের ঘরে টিভি পর্যন্ত নেই। তথ্যপ্রযুক্তির অপশক্তি এবং বিদ্যুত সঙ্কটের আবর্তে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী পাঠক্রমে সংযুক্ত হতে পারে না। যাদের ঘরে টিভি এবং সংসদ টিভি ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তারের সুযোগ ছিল তারাও প্রত্যাশিত কার্যক্রমে মনোযোগী হতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্রাকের এক জরিপে এমন তথ্য ওঠে আসে। করোনা যুগের বহুল উচ্চারিত বিষয় অনলাইনভিত্তিক পাঠক্রম শিক্ষকদের কোন পূর্বপ্রস্তুতি, অভিজ্ঞতা কিংবা প্রশিক্ষণ ছিল না। সঙ্গত কারণে এমন কার্যক্রম সর্বজনীন হওয়ার কথা নয়। তারপরেও উপস্থিত সঙ্কট নিরসনের চেয়ে বিকল্প কোন পথ আলোর মুখ দেখাতে পারেনি ভবিষ্যত প্রজন্মকে। ভাল মন্দের বিবেচনায় না গিয়েও বলা যায় কোমলমতি শিশু-কিশোররা পাঠ গ্রহণের চাইতেও অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়ে তথ্যপ্রযুক্তির এই নতুন বলয়ে। সুতরাং বিদ্যাচর্চার সুযোগ কিংবা গ্রহণ কতখানি হয়েছে তাও খতিয়ে দেখার বিষয়। এই বছরও কবে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার স্বাভাবিক নিয়মে চলমান হবে তাও অনিশ্চিত। অনিশ্চয়তার বাতাবরণে অবরুদ্ধ অসংখ্য শিক্ষার্থীর চলমান শিক্ষার সঙ্কট কিভাবে পোষানো যাবে তাই এখন ভাববার বিষয়। স্থবিরতার এই ক্রান্তিকালে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত অনেক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কাও তীব্রতর হচ্ছে। নিয়মিত স্কুলে যেতে না পারার কারণে হত দরিদ্র কৃষক পিতা তার সন্তানকে খেতে খামারে শ্রম বিনিয়োগে সম্পৃক্ত করার চিত্রও সামনে চলে আসে।আর অবোধ বালিকারাপড়ে বাল্যবিয়ের খপ্পরে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন শিক্ষাকার্যক্রমের প্রতিদিনের ক্ষতি পোষাণো এই মুহুর্তে সবচাইতে বড় চ্যালেন্জ।

শিক্ষক ও সাংবাদিক

Loading