নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছা, নিজের রোজগারে জীবন নির্বাহের ইচ্ছা নেই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তবে একটা বয়সে মানুষ অবসরে যায়। ছুটি দেয় কাজ থেকে। কিন্তু ঢাকার ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়ার আমতলা বাজার এলাকার বৃদ্ধা ফুলবানুর যেনো ছুটির তাড়া নেই। বরং কাজেই তার আনন্দ। ৭৫ বছরেও তাই তিনি নিজের অবলম্বনেই চলতে চান। খেতে চান নিজের রোজগারের অর্থে। তাই তো বাজারে প্রয়াত স্বামীর দোকানে চা বিক্রি করে দিন কাটে তার।

ধামরাই উপজেলা ভাড়ারিয়া আমতলা বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা মেলে এই বৃদ্ধার। বাজারের মাঝখানে টিনের ছাপড়া দোকান তার।

দোকানে ডজন খানেক চায়ের কাপ, একটি মাটির চুলা, একটি টুল, কাঠের টেবিল, ছোট্ট একটি বাক্সে ছোট খাটো জিনিসপত্র, ছাপড়ার চালার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা রুটি ও বিস্কুটের প্যাকেট। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে তার। তিন বেলাই বাড়ি থেকে দোকানে ভাত দিয়ে যায় পরিবার।

গত ১৫ বছর ধরে দোকানটি শুরু করেন ফুলবানু এর স্বামী ছানেব আলী। সাত বছর আগে তিনি মারা গেলে একাই দোকান পরিচালনা করা শুরু করেন ফুলজান। তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে করেন কৃষি কাজ। ছেলে মানা করলেও দোকান ছাড়তে নারাজ তিনি।

দোকানে তীব্র ভিড়ের ফাঁকেই কথা হয় তার সঙ্গে। একের পর এক কাপ চা বানাতে বানাতে জানান দোকান চালানোর অভিজ্ঞতা ও কারণ। বললেন, কাজ না করলে ভালো লাগে না তার। তাই পরিবারের নিষেধ সত্বেও দোকান চালান তিনি।

ফুলবানু বলেন, আগে আমার স্বামী দোকান করতো। সাত বছর আগে এক ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে তিনি মারা যান। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। ছেলের সংসারে পাঁচ নাতি-নাতনি।

তিনি জানান, সারাদিনে ১,০০০-১,২০০ টাকার বেচাকেনা হয়। তাতে ২০০ টাকার কমবেশি লাভ থাকে। তা দিয়েই জীবন নির্বাহ করেন।

সরকারি ভাতা পান, ছেলেও কাজ করতে মানা করে জানিয়ে এই বৃদ্ধা বলেন, ছেলে, নাতি-নাতিনরা মানা করে। কিন্তু আমি বলি এটা ছাড়বো না। কাজ করতে ভালো লাগে। বাড়ি বসে থাকলে আরও বুড়ো হয়ে যাবো। একা বসে থাকতে হবে। এখানে থাকলে কাজ করতে পারবো। সরকারি বয়স্ক ভাতা পাই। কাজ না করলেও চলতে পারবো। আমার ছেলেও খাওয়াতে পারবে। খাই-ই কতটুকু। কিন্তু তবুও কাজ না করলে ভালো লাগে না।

ফুলবানু দোকানের সামনে সম্প্রতি আরও একটি দোকান বসানো হয়েছে, তাতে তার বিক্রি কমেছে বলেও জানান তিনি। বলেন, যাদের বাজার তারা আমার দোকানের সামনে দোকান বসানোর কারণে বেচাকেনা কম হচ্ছে। তবে সবাই কিছু করে খাক। তাই কোনো অভিযোগ নেই।

আমতলা বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হাকিম বলেন, বয়স্ক মানুষ, কাজ করে। আমরা জানি। বিষয়টা আমাদের ভালো লাগে না। তবে কাজকে ঘৃণা করি না। যে যতদিন কাজ করতে পারে করুক। কাজ করলে শক্তি ঠিক থাকে। ঘরে বসে থাকলে বরং শরীর ভারী হয়ে যায়।
একজন মানুষ যদি সহযোগিতা চায়। আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করবো।,

সচেতন নাগরিক সমাজ ধামরাই এর সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, বয়স্ক হয়েও এই বয়সে নিজের কাজ করে খাচ্ছে, এটা ইতিবাচক দিক। বর্তমান প্রজম্ম যারা আছে তাদের অনুকরণীয় আদর্শ বলে মনে করি। এমন অনেক যুবক আছে বেকার ঘোরাফেরা করে কাজ করে না। আমি তাকে সাধুবাদ জানাতে চাই।