জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

সাংবাদিক-মুক্তিযোদ্ধা মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত ও তাঁর মূল্যায়ন

প্রকাশিত: ৭:২৪ অপরাহ্ণ , সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩

– এস.এম. জামাল উদ্দিন/কামাল উদ্দিন খোকন –

ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিলস্ ডব্লিউ এপিসি নির্বাহী পরিষদের সাবেক সদস্য, সাংবাদিক ও ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের একজন স্বশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত বিভিন্ন ভূমিকার কারণে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ডব্লিউ এপিসি নির্বাহী সদস্য হিসেবে সংবাদ মাধ্যমকে সচ্ছ, জবাবদিহি ও দায়িত্বশীল করতে বিশ্বব্যাপী ভূমিকা রেখেছিলেন। বিশ্বখ্যাত এই সাংবাদিকের রাজনীতি সচেতনতা ও স্পষ্টবাদিতা, আমাদের মত অধিকারহারা নিপীড়িত সাংবাদিকদের জন্য একটি আশ্বাস ও সাহস। কিন্তু ক্ষমতায় মদমত্তরা এই ধরণের সাহসী সাংবাদিকদের শুধু রক্ত রক্ষু দেখায় না, চরিত্রকে হরণ করে হেয় করার চেষ্টা করে।
চারিদিকে এখন নোংরা রাজনীতি। এই নোংরা রাজনীতি থেকে পালাবার পথ নেই। সর্বত্র ঘুষ, দুর্নীতি ও অন্ধকার। হয় রাজনীতিটা আপনি করবেন, নয় রাজনীতি আপনাকে নিয়ে রাজনীতি করবে। সে রাজনীতি কবরেও আপনার পিছু ধাওয়া করবে। তাই রাজনীতিকে এড়াতে চাইলেও এড়ানো যায় না। যদি রাজনৈতিক বাস্তবতায় কেউ চুপ করে থাকেন তখনও তিনি রাজনীতি করছেন। কোনো সত্যকে প্রকাশ করছেন না, গোপন করছেন। কোন কিছু ঘটতে দেখলে নিজের নীরবতা দিয়ে ঘটতে দিচ্ছেন। এর মধ্যেই নিজের হিসাব-নিকাশের রাজনীতিতেই ঐ লোক থাকছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনটা মানব বিচ্ছিন্ন কোন জগৎ নয়। সাংবাদিক যেখানেই থাকুন, তার জগৎটা মানুষ দিয়েই তৈরী। মানুষের সাথে যা কিছু সম্পর্কিত তা নিয়েই সাংবাদিকের মনন ও সৃজন। সাংবাদিককে তাই রাজনীতির মধ্য দিয়েই যেতে হয়। এই রাজনীতিটা যদি বাস্তবতা ও যথার্থতা দিয়ে করেন, তখন সাংবাদিক নিজের দায়িত্ব ও কাজটা সঠিকভাবে করলেন। নতুবা তিনি আপন স্বার্থ, সুবিধা, উচ্ছিষ্ট ভোগ ও করুণার জন্য প্রয়োজনে গণবিরোধী এস্টাবলিস্টমেন্টের জুতা পরিস্কার করবেন বাক্য দিয়ে, তত্ব ও তথ্য দিয়ে, তোষামেদ করে। কিন্তু, বৈভব ও প্রতিপত্তির গোলামদের চেঁচামেচিতে চারিদিকে যখন কম্পমান, দালালি, দুর্নীতি অপরের হক নষ্ট করার কুৎসিত প্রতিযোগিতা তখন সাহস করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সত্য, স্পষ্টভাবে বলার সাংবাদিক বিরল। এই বিরল সাংবাদিক ও সচ্ছ রাজনীতির অনুসারীদের অন্যতম হলেন মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত। বাবা আবদুল লতিফ উকিল ছিলেন বৃটিশ শাসন আমলে খ্যাতিমান আইনজীবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং মাতা আনোয়ারা বেগম ছিলেন পরহেজগার, সাধু, বিদূষী নারী।
মানুষের দুঃখ, কষ্ট, কান্নাকে মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত অন্তর দিয়ে অনুভব করছেন। বর্ণবাদ, জাতিভেদ, সন্ত্রাস, অন্ধ সাম্প্রদায়িকতা ও প্রশাসনিক দুর্নীতির সাথে তিনি পুরাপুরি আপোষহীন। এ সবকে তিনি ঘৃণা করে আসছেন আগাগোড়াই। সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই, নাগরিক অধিকার, সামাজিক আন্দোলন, নিপীড়িতদের কণ্ঠস্বর হবার ঝুঁকি নিতে পারার মানসিক শক্তি কাদেরী শওকতের ছিল। সমাজ-রাষ্ট্রে প্রভাবশালী, বিপজ্জনক এস্টাবিলিস্টমেন্টের চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে ন্যায়ের কথা সোজা ও বলিষ্ঠভাবে বলার ভাষা তাঁর ছিল। রাস্তাঘাটে লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন শ্লোগান দেয় ‘গণতন্ত্র চাই’ ‘অধিকার চাই’ তখন কাদেরী শওকত বলেন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে আমাদের গণতন্ত্র ও অধিকার দরকার। আধিপত্যবাদের পৃথিবীতে এস্টাবিলিস্টমেন্টের কাছে আত্মসমর্পণ স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা ও অধিকার হরণে শুধু গণবিরোধী এস্টাবিলিস্টমেন্ট দায়ী নয়। অনেক বেশী দায়ী পরাধীন মস্তিস্কের, সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী চিন্তা চর্চা। এই চিন্তা বিচারবোধকে বন্ধক রেখে দেয় পুঁজি, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির কাছে। চিন্তা-চেতনার দিক থেকে মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত এসব ভ্রান্ত ধারণার ঘোরতর বিরোধী। পূর্বসুরী, অনুবর্তী, সহকর্মী সাংবাদিক মহল ও পরিচিত সকলের কাছে মইনুদ্দীন কাদেরী শওকতের বিশ্বস্ততা, সততা ও নিষ্ঠার কথা সুপরিজ্ঞাত। জীবন নিয়ন্ত্রণে তিনি বরাবরই সুনীতিকে উচু স্থান দিয়েছেন। হিংসা, অশোভনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে তিনি ঘৃণা করেছেন আজীবনই।
গত প্রায় দু’বছর ধরে তিনি রোগ-শোকে কষ্ট পাচ্ছেন। অনেক সময় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উপনীত হন। সুস্থ থাকলে আমরা অনেক কিছু তাঁর কাছ থেকে পেতাম। তার সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত এ রকম, মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক-সম্পাদক মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত ১৯৯৬ সালে সাংবাদিকতা ও ১৯৬৯ সালে সার্বজনীন ভোটাধিকার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবার মাধ্যমে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ও ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পূর্বে বিভিন্ন দৈনিকের রিপোর্টার ছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রতিষ্ঠিত ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের নেতা অলি আহাদ সম্পাদিত ‘ইত্তেহাদ’ এর বিশেষ সংবাদদাতা, ডেইলি ট্রিবিউন এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি দৈনিক নয়াবাংলা’র সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১৭ আগস্ট তাঁর সম্পাদনায় চট্টগ্রাম থেকে ইজতিহাদ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। প্রকাশনার কয়েক মাস পর তদানিন্তন এরশাদ সরকার পত্রিকাটির প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে পরে হাইকোর্টে রীট করার পর এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত চট্টগ্রাম সংবাদপত্র পরিষধ ও চিটাগাং এডিটরস কাউন্সিল সাধারণ সম্পাদক, পূর্বাঞ্চলীয় সংবাদপত্র পরিষদ সভাপতি, বাংলাদেশ সম্পাদক সমিতির আহ্বায়ক ও ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিল ডব্লিউ এপিসি নির্বাহী পরিষদ সদস্য ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, প্রেস জুডিশিয়াল, প্রেস রুলস কমিটি সদস্য (২০০২-২০০৬) বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ বিএসপি সহ-সভাপতি (২০০২-২০০৩), বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (১৯৮৮-১৯৯১) চট্টগ্রাম সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি (১৯৮০-১৯৬৮৪), চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব নির্বাচন কমিশনার (১৯৮৭-১৯৯১), চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৯-১৯৮৪), বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সংসদ কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক (১৯৮৭-১৯৯১), গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদ

Loading