হাটহাজারীর তুহিন হত্যা মামলায় মুন্নার ফাঁসি

প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ , অক্টোবর ১৯, ২০২২

ইয়াবা সেবন নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে হাটহাজারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তাছনিম সুলতানা তুহিন(১৩)কে পৌর এলাকার শাহজালাল পাড়ার সালাম ম্যানশনের ৪র্থ তলায় ধর্ষণের পর মুখ চেপে ধরে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলায় প্রধান আসামি শাহনেওয়াজ সিরাজ মুন্নার ফাঁসির আদেশ দিয়েছে চট্টগ্রামের একটি আদালত।

আজ বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ আদেশ দেন।

এদিকে, রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় আসামি মুন্না ক্ষুব্ধ হয়ে মিডিয়াকর্মী ও বাদীপক্ষের দিকে তেড়ে আসে বলেও সূত্রে জানা গেছে।

খুনী মুন্না হাটহাজারী পৌর এলাকার চন্দ্রপুর বানু বাপের বাড়ির (শাহজাহান ডাক্তারের বাড়ি) ডাক্তার শাহজাহান সিরাজের পুত্র।

সে সালাম ম্যানশনের ৪র্থ তলায় তার পিতামাতার সাথে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করত। তুহিন গড়দুয়ারা ইউনিয়নের নিয়ামত আলী সারাং বাড়ির মো. আবু তৈয়ব ও ফিরোজা বেগমের কন্যা। তবে পরিবারসহ শাহজালাল পাড়ার তাদের মালিকানাধীন সালাম ম্যানশনের ৪র্থ তলায় তারা বসবাস করে আসছিল।

জানা যায়, হাটহাজারির স্কুলছাত্রী তাছনিম সুলতানা তুহিনকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা মামলায় ২০১৯ সালের ১০ জুলাই চার্জশিট দেয় পুলিশ। দীর্ঘ ৪ বছর আইনি প্রক্রিয়া শেষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক একটি ধারায় মুন্নাকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে লাশ গুম করার ব্যাপারে ধর্ষক খুনি মুন্নার মা-বাবার সহায়তা থাকলেও মামলায় তাদের খালাস দেয়া হয়েছে।

ঘটনার পর নিহত তুহিনের বড় ভাই আকিব জাবেদ বাদি হয়ে হাটহাজারী মডেল থানায় মুন্না ও তার পিতা ডাক্তার শাহজাহান সিরাজ ও মাতা নিগার সুলতানাকে আসামি করে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০(সংশোধনী/০৩) এর ৭/৯(২)/৩০ তৎসহ দঃবিঃ ২০১ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।

বখাটে মুন্নার সাথে নিহত তুহিনের প্রায় ১০ মাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিকালে মুন্না ওই এলাকার সালাম ম্যানশনে তার বাসা থেকে মিরেরহাট দাদার বাড়িতে বেড়াতে যায়। পরদিন শুক্রবার বিকাল আনুমানিক ৩টার দিকে সে তাদের ভাড়া বাসায় সালাম ম্যানশনে ফিরে আসে।

ওই দিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত মুন্না তার ৪র্থ তলার বাসায় কয়েকজন বন্ধুসহ আড্ডা দেয় এবং সবাই মিলে ইয়াবা সেবন করে।

সন্ধ্যার দিকে বন্ধুরা চলে যাওয়ার পর সে ভাড়া বাসায় তার কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে। পরে মাগরিবের পর তুহিন তাদের নিচ তলার বাসা থেকে চতুর্থ তলায় মুন্নাদের বাসায় যায়। এসময় মাদক সেবন নিয়ে তুহিনের সাথে মুন্নার ঝগড়া হয়। মুন্না প্রথমে তুহিনকে বুঝিয়ে শান্ত করলেও পরে আবার ঝগড়া শুরু হয়।

এক পর্যায়ে মুন্না তার বাম হাত দিয়ে তুহিনের গলা পেঁচিয়ে ধরে ডান হাত দিয়ে নাক মুখ চেপে ধরে। এতে শ্বাসরোধ হয়ে তুহিন মারা যায়।

তুহিনের মৃত্যু হয়েছে বুঝতে পেরে প্রথমে মুন্না ঘরের খাটের নিচে তুহিনের লাশ লুকিয়ে রাখে। পরে তুহিনের লাশ টেনে নিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফার নিচে লুকিয়ে রাখে। তুহিন নিখোঁজ হওয়ার পর বখাটে মুন্নার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে সবাই জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সে কিছু জানে না বলে জানায়।

পরে তুহিনের ভাই ও মামারা মুন্নাকে আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করে। মুন্নার কাছ থেকে কোনো তথ্য না পাওয়ায় তাকে তার পিতামাতার জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। খুনী মুন্না নিজেও পুলিশের সাথে তুহিনকে খোঁজার ভান করে তখন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ ভবনের ৪র্থ তলা থেকে পঁচা দৃর্গন্ধ বের হলে মুন্নার পিতা-মাতা ও বখাটে মুন্না দ্রুত ঘর থেকে পালিয়ে যায়।

পরে কৌশলে মুন্নাকে হাটহাজারী মডেল থানায় ডেকে নিয়ে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে পুলিশের জেরার মুখে সে খুনের কথা স্বীকার করে এবং তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী সালাম ম্যানসনের ৪র্থ তলার ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ড্রয়িং রুমের সোফার নিচ থেকে প্লাস্টিকের বস্তা মোড়ানো তুহিনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আয়ুব খান জানান, মামলা দায়েরের পর দীর্ঘ ৪ বছর আইনি প্রক্রিয়া শেষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ রায় দেন।

নিহত তুহিনের পরিবার খুনি মুন্নার ফাঁসির রায়ে খুশি হলেও আসামির বাবা-মাকে খালাস দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে।

অপরদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শ্যামল বসু ফাঁসির এ আদেশের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান।

Loading