আশুলিয়ায় উন্নত চিকিৎসার নামে ভারতে নিয়ে কিডনি বিক্রি চক্রের নারী সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১১:৫০ অপরাহ্ণ , এপ্রিল ৬, ২০২২

চিকিৎসার সহায়তা ও উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে এক শ্রমিকের কিডনি বিক্রি করে দিয়েছে একটি অসাধু চক্র। দেশে ফিরে ভুক্তভোগী নারী আইনের আশ্রয় নিলে আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত এক নারীকে। কিডনি হারিয়ে চিকিৎসার অভাবে এখন অসহায় জীবনযাপন করছেন ভুক্তভোগী শ্রমিক আব্দুল কাশেম।

সোমবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম। এর আগে রবিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচারকারী নারী বিউটি আক্তারকে আশুলিয়ার দুর্গাপুর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩। পরে তাকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত বিউটি বেগম নাটোরের সদর থানার কালীবাড়ি এলাকার মৃত বিনসের আলীর মেয়ে। বিউটির অপর দুই সহযোগী এখনো পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন, বিউটি আক্তারের স্বামী মো. শহিদ (৪৫)। সে নাটোর সদর থানার কালীবাড়ি এলাকার ইসলাম ব্যাপারীর ছেলে। ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার পাইকপাড়া এলাকার নুরুল হকের ছেলে শেখ ফরিদ (৪২)।

এজাহার থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী আব্দুল কাশেম আলী (৩৮) গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহাট গ্রামের মো. হাফিজার রহমানের ছেলে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে সেবা-শুশ্রূষার জন্য আশুলিয়ায় স্ত্রী ববিতা বেগমের কাছে আসেন অসুস্থ আবুল কাশেম। পরে তাদের পূর্বপরিচিত বিউটি বেগম তার অসুস্থতার কথা জানতে পেরে চিকিৎসা করানোর জন্য সহায়তা করার প্রলোভন দেখায়। বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য বিউটি বেগম নিজের পাসপোর্ট বের করে দেখায়। বিউটি বেগমের কথায় ভুলে এবং উন্নত চিকিৎসার লোভে নিজেরাও পাসপোর্ট ও ভিসা করেন আবুল কাশেম দম্পতি।  পরে বিউটি বেগম যশোর বর্ডার দিয়ে তাদের ভারতে নিয়ে যায়। পরে ভারতের অজ্ঞাত স্থানে রেখে বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের ডাক্তার দেখানোর জন্য ঘুরায়। পরে জানায় যে, তার অপারেশন করতে হবে। চিকিৎসার কথা বলে তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে নেয় আসামিরা। একদিন ভারতের কলকাতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাসপাতালে অপারেশনের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে অজ্ঞান করা হয় কাশেমকে। জ্ঞান ফিরে সে দেখতে পায় তার পেটের বাম পাশের অংশ কাটা।

ভুক্তভোগী আব্দুল কাশেম বলেন, ডাক্তারদের জিজ্ঞেস করলে ডাক্তার জানায় আমি নাকি স্বেচ্ছায় কিডনি দান করেছি। আমি আসামিদের কাছে আমার কিডনির কথা জানতে চাইলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি দেশে পাঠিয়ে দেয়। পরে নিরুপায় হয়ে আমি র্যাব-৩-এর কাছে আইনি সহায়তা চাই গত ২ এপ্রিল। সে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আশুলিয়ায় অভিযান চালায় র্যাব। আমার কিডনি বিক্রি করে দিয়েছে তারা। আমি তাদের বিচার চাই।
আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃতকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব-৩। আব্দুল কাশেম বাদী হয়ে মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন অনুযায়ী ও প্রতারণার অভিযোগে তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Loading