আশুলিয়ায় চেতনা মাল্টিপারপাসের নামে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় গ্রেফতার ১০

প্রকাশিত: ৬:০৭ অপরাহ্ণ , মার্চ ২৩, ২০২২

আশুলিয়ায় চেতনা মাল্টিপারপাসের নামে প্রতারণা করে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)-৪ ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে, ঢাকা জেলার মোঃ ইকবাল হোসেন সরকার (৩৫), মোঃ মাজহারুল ইসলাম (৩৫), মোঃ মমিন হোসেন (৩৫), মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), বাগেরহাটের মোঃ ইব্রাহিম খলিল (৩৫), জেলা-বাগেরহাট। ঢাকার এস এম মকবুল হোসেন (৪০), মোঃ মিজানুর রহমান (৩৮), মোঃ আল আমিন হোসেন (২৮), মানিকগঞ্জের ফজলুল হক (৩৫), ঢাকার মোঃ নুর হোসেন (২৭)। এর মধ্যে ইকবাল সরকার চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির সহ-সভাপতি ও মোঃ মাজহারুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক।
র‌্যাব জানায়, আশুলিয়ায় জামগড়া এলাকায় অবস্থিত “চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” গ্রাহকের প্রায় শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়ে যায়। এ ঘটনায় প্রায় ৫ শতাধিক গ্রাহক তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত পেতে গত ১৯ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির জামগড়া অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। প্রাথমিকভাবে র‌্যাব জানতে পারে যে, সহ¯্রাধিক পরিবারের প্রায় শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এ চক্রটি।

ভূক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক উচ্চ মুনাফার আশা দেখিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সঞ্চয়ী প্রকল্প, ডিপিএস, এফডিআর, পেনশন পলিসি, হজ্জ পলিসি, প্রজেক্ট, বাগান, ডেইরি ফার্ম ফ্ল্যাট ইত্যাদি দেখিয়ে তাদের কাছে থেকে লাখে প্রতি মাসে টাকার পরিমাণ ও মেয়াদ অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রথমে ঠিকঠাক মতো লভ্যাংশ দিলেও এর কিছুদিন পর থেকে লভ্যাংশ তো দিচ্ছেই না বরং মেয়াদ পূর্ণ হলেও আসল টাকা দিতেই নানা তালবাহানা শুরু করে চেতনা মাল্টিপারপাস।
অভিযান পরিচালনা কালে “চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” অফিস থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাব আরো জানায়, ৩০ সদস্য বিশিষ্ট “চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ” প্রতিষ্ঠা করা হয়। সমবায় অধিদপ্তর থেকে প্রতিষ্ঠানটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়। যার নং -১৯৩। প্রথমদিকে তারা স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্বল্পআয়ের মানুষজনকে অধিক মুনাফায় সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণের প্রতি আকৃষ্ট করত। পরে আরো বড় পরিসরে কাজ শুরু করে চেতনা। এক্ষেত্রে তাদের মূল টার্গেট ছিল শিল্পনগরী আশুলিয়া ও সাভার এলাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত লোকজন।

কোম্পানিতে সঞ্চয়ী পলিসি, এফ ডি আর, ডিপিএস, পেনশন পলিসি, শিক্ষা পলিসি, হজ্ব পলিসি, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী পার্টনার পলিসিতে আকৃষ্ট করে চটকদার ১৮% থেকে ৩০% হারে মুনাফা এবং ফিক্সডিপোজিটের ক্ষেত্রে ৩/৫ বছরের দ্বিগুন লাভ প্রদানের আশ্বাসে প্রায় সহ¯্রাধিক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জীবনের সমস্ত অর্জিত আয় উক্ত সমিতিতে জমা রাখতে উৎসাহিত করত। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য, সংস্থাটি প্রথম দিকে কয়েক মাস চুক্তি অনুযায়ী লভ্যাংশ প্রদান করত। যা দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আরো বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হতো। অনেকে নিজের পেনশনের টাকা, গ্রামের ভিটেবাড়ি বিক্রি করা টাকা, বিদেশ থেকে কষ্ট করে অর্জিত অর্থ উচ্চ মুনাফা লাভের আশায় জমা রাখত।
চেতনা মাল্টিপারপাসের অংশীদাররা জনগণের অর্থে বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জায়গা-জমি কেনা, বহুতল ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন ছোট বড় কারখানা করেছে এবং একই সাথে বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে বিভিন্নভাবে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। বর্তমানে সংস্থাটির সভাপতি মুহাম্মদ উল্লাহ পলাতক রয়েছে।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক জানান, ভ‚য়া প্রকল্পের মাধ্যমে চক্রটি প্রায় শতাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা সাধারণ রিক্সা ও ভ্যান চালকদেরও ছাড় দেয়নি। অনেককে এই চক্রটি সর্বশান্ত করে দিয়েছে।

এ ধরনের সমবায় বা মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সাধারণ জনগণকে সচেতন থাকার অনুরোধ করেন তিনি।

Loading