ভাষা শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ১:৩৬ অপরাহ্ণ , ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি, সোমবার। মহান ‘শহীদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এছাড়া মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭০ বছরও পূরণ হলো এই দিনে। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জাতিসত্তা, স্বকীয়তা আর সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার আন্দোলনের অবিস্মরণীয় সেই দিনটি বাঙালির জীবনে ফিরে এসেছে আবার।

এ উপলক্ষ্যে প্রথম প্রহরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সালাউদ্দিন ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান।

রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে মেজর জেনারেল সালাউদ্দিন ইসলাম ও তার পরই মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় নেপথ্যে বাজছিল অমর একুশের কালজয়ী গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’।

ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে পাঁচ জ্যেষ্ঠ নেতা ফুল দেন। তাঁদের পর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে ফুল দেন জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস এম এম নাঈম রহমান।

এরপর শহীদ মিনারে ফুল দেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল ফুল দেন। তাঁদের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ফুল দেন।

এরপর আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতারা, সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে একে একে আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনারের বেদি।

এবারও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যাওয়ার পথ নির্ধারণ করে দিয়েছে একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্বাস্থ্যবিধিও ঠিক করা হয়েছে। সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ দুজন একসঙ্গে শহিদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। এ সময় সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। লোকসমাগম সীমিত রেখে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহিদ মিনারে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ঘুরে দেখা গেছে, পুরো এলাকা নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে আছে। সমগ্র এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। জনসাধারণকে সতর্ক করতে লাগানো হয়েছে ডিজিটাল সাইনবোর্ড। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের ডানপাশে র‌্যাব, ডিএমপি ও ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের মূল বেদীসহ সম্মুখভাগে শেষ হয়েছে আলপনা আঁকার কাজ। বাম পাশের দেয়ালে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন চিত্র আঁকা হয়েছে। মূল বেদির ঠিক বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের দেয়ালে লাল রঙে লেখা হয়েছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। চারদিকের দেয়ালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কাজী নজরুল ইসলামসহ বিখ্যাত মনীষীদের ভাষাবিষয়ক উক্তি লেখা হয়েছে।

জনসাধারণকে পলাশী মোড় দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং জগন্নাথ হলের পাশের রাস্তা হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যেতে হবে। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর এবং পেছনের রাস্তা দিয়ে চানখারপুল হয়ে বের হতে হবে।

Loading