বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে জাতি

প্রকাশিত: ১:৩৪ অপরাহ্ণ , ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২

বাঙালির রক্তে লেখা দিন অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি। বাঙালির এই গৌরবগাঁথায় ২১শে ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। ইতিহাসবিদরা বলছেন, ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই ছিলো বাঙালির স্বাধীনতার দিশা। তাই একুশ একদিনের নয়, একুশ প্রতিদিনের।

দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘোষণা উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণায় বারুদের মতো জ্বলে ওঠে ছাত্র-জনতা। দাবি উঠে রাষ্ট্রভাষা বাংলার। বাঙালির তীব্র বিরোধিতায় সে সময় পিছু হঠতে বাধ্য হন জিন্নাহ।

জিন্নাহর মৃত্যুর পর ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের এসেম্বলিতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। পরের দিনই ঢাকার পল্টন ময়দানে সে কথা ঘোষণা দেন গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন। মুহূর্তেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাঙালি। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শহর থেকে গ্রামে। ২১ ফেব্রুয়ারি হরতালের ডাক দেয় দৃঢ়চেতা বাঙালি। শুরু হয় মিছিল সমাবেশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জমায়েত ঠেকাতে ১৪৪ ধারা জারি করে সরকার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা হয়ে ওঠে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু।

ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এক দল বলছে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেছে সেটা মানা উচিত। কিন্তু আরেকটি দল যারা গরিষ্ঠ, তারা তা মানতে রাজি ছিল না। সেজন্য খুব কৌশলে তিনজন তিনজন করে বেড়িয়েছে।’

ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গতে গেলে গুলি চালায় পুলিশ। ছাত্র-জনতার তাজা খুনে লাল হয় ঢাকার রাজপথ। রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ শহীদ হন নাম না-জানা অনেকে। মুহূর্তে সে খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা পূর্ব বাংলায়। দ্রোহের আগুন জ্বলে উঠে সবখানে।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আসে বাঙালির স্বাধীনতা। তাইতো একুশকে লালন করতে হবে হৃদয়ে।

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘একুশের চেতনাটা আমাদের পার্বনিক হয়ে গেছে এবং উদযাপনের বিষয় হয়ে গেছে। একুশ হতে হবে মাতৃভাষার প্রতি নিষ্ঠা, সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা, অন্যান্য মাতৃভাষাগুলোর প্রতি দায়িত্ব। ভবিষ্যতে যদি একটা জাতি বেড়িয়ে আসে, যারা নিজের সংস্কৃতি ও ভাষাকে ভালবাসবে- তখন সেই জাতি একুশের চেতনাকে প্রতিদিন লালন করবে। একুশের চেতনা কিন্তু একদিন লালন করার ব্যাপার নয়।’

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করায় দিবসটি এখন পালিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। বাঙালির গৌরবদীপ্ত দিনটি এখন হয়ে উঠেছে সব ভাষাভাষীর মাতৃভাষা রক্ষার দিন।

Loading