মূর্তি ও মূর্তিপূজা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের কিছু বাণী

প্রকাশিত: ২:০৯ পূর্বাহ্ণ , অক্টোবর ১৭, ২০২১

 

লেখক হাফেজ মাওলানা হাবিবুর রহমান তাবারীঃ

মুমিন-মুসলিমদেরকে যা বলা হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأنْصَابُ وَالأزْلامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ ও জুয়া আর প্রতিমা-মূর্তি এবং ভাগ্য-নির্ধারক তীরসমূহ অপবিত্র শয়তানের কাজ, তাই তোমরা তা পরিহার কর যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। (আল-মায়িদাহ, ৫/৯০)
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ
তোমরা মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বিরত থাক এবং মিথ্যা কথা পরিহার কর। (হাজ্জ, ২২/৩০)
وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ ۚ ذَٰلِكُمْ فِسْقٌ ۗ
আর যে সমস্ত পশুকে পূজার বেদীতে বলি দেয়া হয়েছে তা আর জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে, এগুলো পাপ কাজ। (মায়িদা, ৫/৩)
আল্লাহ বলেন; “মূর্তিপূজা অপবিত্র শয়তানের কাজ’, তাই মুসলিমরা কখনো মূর্তির সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে পারে না। কারণ আল্লাহ অন্যত্র বলেন;
إِنْ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ إِلا إِنَاثًا وَإِنْ يَدْعُونَ إِلا شَيْطَانًا مَرِيدًا
তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে কতগুলো নারীমূর্তিকে আহবান করে আর তারা কেবলমাত্র অবাধ্য শয়তানকে আহবান করে। (আন-নিসা, ৪/১১৭)
রাসুল (ﷺ) বলেন:
وَسَتَعْبُدُ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي الأَوْثَانَ وَسَتَلْحَقُ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي بِالْمُشْرِكِيِنَ
অচিরেই আমার উম্মাতের কতক সম্প্রদায় মূর্তি পূজায় লিপ্ত হবে আর আমার উম্মাতের কতক গোত্র মুশরিকদের সাথে যোগ দিবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৯৫২)
মূর্তি পূজারীদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছেঃ
إِنَّمَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْثَانًا وَتَخْلُقُونَ إِفْكًا ۚ إِنَّ الَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوا عِنْدَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ ۖ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
তোমরা তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তির পূজা করছ আর মিথ্যা বানাচ্ছ। নিশ্চয় আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদের উপাসনা কর তারা তোমাদের জন্য রিয্ক দানের কোন ক্ষমতা রাখে না। তাই আল্লাহর নিকট রিয্ক তালাশ কর আর তাঁরই ইবাদাত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (আন-কাবুত, ২৯/১৭)
إِنَّمَا اتَّخَذْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْثَانًا مَوَدَّةَ بَيْنِكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُ بَعْضُكُمْ بِبَعْضٍ وَيَلْعَنُ بَعْضُكُمْ بَعْضًا وَمَأْوَاكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ نَاصِرِينَ
দুনিয়ার জীবনে তোমাদের মধ্যে পরস্পরিক ভালবাসার জন্যই তো তোমরা আল্লাহকে ছাড়া মূর্তিদেরকে গ্রহণ করেছ। তারপর কিয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং পরস্পর পরস্পরকে অভিশাপ দিবে, আর তোমাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম আর তোমাদের জন্য থাকবে না কোন সাহায্যকারী। (আন-কাবুত, ২৯/২৫)
নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর সম্প্রদায়-এর ঘটনাঃ
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ آزَرَ أَتَتَّخِذُ أَصْنَامًا آلِهَةً ۖ إِنِّي أَرَاكَ وَقَوْمَكَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ
আর (স্মরণ কর) যখন ইবরাহীম তার পিতা আযরকে বলেছিল, ‘আপনি কি মূর্তিগুলোকে ইলাহ রূপে গ্রহণ করছেন? নিশ্চয় আমি আপনাকে ও আপনার জাতিকে স্পষ্টভাবে গোমরাহীতে নিমজ্জিত দেখছি’। (আন‘আম, ৬/৭৪)
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ إِبْرَاهِيمَ إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا تَعْبُدُونَ قَالُوا نَعْبُدُ أَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عَاكِفِينَ قَالَ هَلْ يَسْمَعُونَكُمْ إِذْ تَدْعُونَ أَوْ يَنْفَعُونَكُمْ أَوْ يَضُرُّونَ قَالُوا بَلْ وَجَدْنَا آبَاءَنَا كَذَٰلِكَ يَفْعَلُونَ قَالَ أَفَرَأَيْتُمْ مَا كُنْتُمْ تَعْبُدُونَ أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمُ الْأَقْدَمُونَ فَإِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِي إِلَّا رَبَّ الْعَالَمِينَ
আর তুমি তাদের নিকট ইবরাহীমের ঘটনা বর্ণনা কর, যখন সে তার পিতা ও তার কওমকে বলেছিল, ‘তোমরা কিসের ইবাদাত কর?’ তারা বলল, ‘আমরা মূর্তির পূজা করি। অতঃপর আমরা নিষ্ঠার সাথে তাদের পূজায় রত থাকব। সে বলল, ‘যখন তোমরা ডাক তখন তারা কি তোমাদের সে ডাক শুনতে পায়?’ ‘অথবা তারা কি তোমাদের উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারে’? তারা বলল, ‘বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের পেয়েছি, তারা এরূপই করত’। ইবরাহীম বলল, ‘তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছ, তোমরা যাদের পূজা কর’। ‘তোমরা এবং তোমাদের অতীত পিতৃপুরুষেরা?’ ‘সকল সৃষ্টির রব ছাড়া অবশ্যই তারা আমার শত্রু’। (আশ-শুআরা, ২৬/৬৯-৭৭)
মুসলিমরা হল মূর্তি ভাঙ্গার জাতিঃ
إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا هَٰذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُونَ قَالُوا وَجَدْنَا آبَاءَنَا لَهَا عَابِدِينَ قَالَ لَقَدْ كُنْتُمْ أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمْ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ قَالُوا أَجِئْتَنَا بِالْحَقِّ أَمْ أَنْتَ مِنَ اللَّاعِبِينَ قَالَ بَلْ رَبُّكُمْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ َالْأَرْضِ الَّذِي فَطَرَهُنَّ وَأَنَا عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ مِنَ الشَّاهِدِينَ وَتَاللَّهِ لَأَكِيدَنَّ أَصْنَامَكُمْ بَعْدَ أَنْ تُوَلُّوا مُدْبِرِينَ فَجَعَلَهُمْ جُذَاذًا إِلَّا كَبِيرًا لَهُمْ لَعَلَّهُمْ إِلَيْهِ يَرْجِعُونَ قَالُوا مَنْ فَعَلَ هَٰذَا بِآلِهَتِنَا إِنَّهُ لَمِنَ الظَّالِمِينَ قَالُوا سَمِعْنَا فَتًى يَذْكُرُهُمْ يُقَالُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ قَالُوا فَأْتُوا بِهِ عَلَىٰ أَعْيُنِ النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَشْهَدُونَ قَالُوا أَأَنْتَ فَعَلْتَ هَٰذَا بِآلِهَتِنَا يَا إِبْرَاهِيمُ قَالَ بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَٰذَا فَاسْأَلُوهُمْ إِنْ كَانُوا يَنْطِقُونَ فَرَجَعُوا إِلَىٰ أَنْفُسِهِمْ فَقَالُوا إِنَّكُمْ أَنْتُمُ الظَّالِمُونَ ثُمَّ نُكِسُوا عَلَىٰ رُءُوسِهِمْ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا هَٰؤُلَاءِ يَنْطِقُونَ قَالَ أَفَتَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكُمْ شَيْئًا وَلَا يَضُرُّكُمْ أُفٍّ لَكُمْ وَلِمَا تَعْ

যখন সে (ইবরাহীম) তার পিতা ও তার কওমকে বলল, ‘এ মূর্তিগুলো কী, যেগুলোর পূজায় তোমরা রত রয়েছ’? তারা বলল, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি’। সে বলল, ‘তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা সবাই রয়েছ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে’। তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছ, নাকি তুমি কৌতুক করছ’? সে বলল, ‘না, বরং তোমাদের রব তো আসমানসমূহ ও যমীনের রব; যিনি এ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। আর এ বিষয়ে আমি অন্যতম সাক্ষী’। ‘আর আল্লাহর কসম, তোমরা চলে যাওয়ার পর আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে অবশ্যই কৌশল অবলম্বন করব’। অতঃপর সে মূর্তিগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল তাদের বড়টি ছাড়া, যাতে তারা তাঁর দিকে ফিরে আসে। তারা বলল, ‘আমাদের দেবদেবীগুলোর সাথে কে এমনটি করল? নিশ্চয় সে যালিম’। তাদের কেউ কেউ বলল, ‘আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহীম’। তারা বলল, ‘তাহলে তাকে লোকজনের সামনে নিয়ে এসো, যাতে তারা দেখতে পারে’। তারা বলল, ‘হে ইবরাহীম, তুমিই কি আমাদের দেবদেবীগুলোর সাথে এরূপ করেছ’? সে বলল, ‘বরং তাদের এ বড়টিই এ কাজ করেছে। তাই এদেরকেই জিজ্ঞাসা কর, যদি এরা কথা বলতে পারে’। তখন তারা মনে মনে চিন্তা করে দেখল এবং একে অপরকে বলতে লাগল, তোমরাই তো সীমালংঘনকারী। অতঃপর তাদের মাথা অবনত হয়ে গেল এবং বলল, ‘তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলতে পারে না’। সে (ইবরাহীম) বলল, ‘তাহলে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত কর, যা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না এবং কোন ক্ষতিও করতে পারে না’? ‘ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদেরকে! ‘তবুও কি তোমরা বুঝবে না’? (আম্বিয়া, ২১/৫২-৬৭)
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দু‘আ করেছিলেনঃ
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَٰذَا الْبَلَدَ آمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ ۖ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي ۖ وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
আর স্মরণ কর ‘যখন ইবরাহীম বলল, হে আমার রব! এই শহরকে নিরাপদ করুন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তি পূজা করা থেকে দূরে রাখুন। হে আমার রব, নিশ্চয় এসব মূর্তি অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে, সুতরাং যে আমার অনুসরণ করেছে, নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত, আর যে আমার অবাধ্য হয়েছে, তবে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (ইবরাহীম, ১৪/৩৫-৩৬)
নবী মুহাম্মাদ(ﷺ)ও মূর্তি ভেঙ্গেছেনঃ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ دَخَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَكَّةَ، وَحَوْلَ الْكَعْبَةِ ثَلاَثُمِائَةٍ وَسِتُّونَ نُصُبًا فَجَعَلَ يَطْعَنُهَا بِعُودٍ فِي يَدِهِ وَجَعَلَ يَقُولُ {جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ} الآيَةَ
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (মক্কা বিজয়ের দিন) মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন কাবা ঘরের চারপাশে তিনশ ষাটটি মূর্তি ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাতের লাঠি দিয়ে মূর্তিগুলোকে আঘাত করতে থাকেন আর বলতে থাকেন,
جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ ۚ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا
সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে; নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। (ইসরা, ১৭/৮১) (সহীহুল বুখারী: ২৪৭৮, ৪৭২০)
সুতরাং মুসলিমরা হল মূর্তি ভাঙ্গার জাতি তারা কখনো মূর্তির সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে পারে না। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো বর্তমানে একদল নামদারি মুসলিম বিভিন্ন স্থানে মূর্তি স্থাপন করে মানুষকে মূর্তিপূজার দিকে আহবান করছে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এসব জাহেলিয়াত থেকে হেফাজত করুন (আমিন)।

Loading