সুদ ও আজকের বিশ্ব।

প্রকাশিত: ১:১৯ অপরাহ্ণ , সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১

সুদ যাকাতের বিপরীত। একটি হল আদেশ আর অন্যটি হল নিষেধ। সুদ মানুষের জীবনে সমাজ ও রাষ্ট্রে অতিশয় অভিশাপ পক্ষান্তরে যাকাত অর্থনৈতিক সুষম বন্টনে মানবিক প্রক্রিয়া মাত্র। আজ সমাজ ও রাষ্ট্র নীতি পুরোপুরি উলটো পথে যেন সৃষ্টিই স্রষ্টাকে চালায়। মানুষের দাম্ভিকতা মৃত্যুর সেই অচেনা চির পথকে ভুলে অনিয়ন্ত্রিত বেপরোয়া হয়ে বসে আছে। আদি অন্ত একক মালিক কে বৃদ্ধাঙুলি দেখাচ্ছে। সুদ, সুদ চারিদিকে সুদ, সুদে ছড়াছড়ি এ বিশ্ব। ব্যক্তি, সমাজ,রাষ্ট্র এর থেকে কারোর মুক্তি নেই। কেহ লাভে, কেহ লোভে, কেহ জেনে, কেহ না জেনে জড়িয়ে আছে এ দাবানলে।এমন মানুষ পাওয়াও কঠিন যে সুদের বৃত্তের বাহিরে। আমরা ভুলেই বসেছি যে এ পৃথিবীটা একটা পরীক্ষার জায়গা এবং পরকালের সমস্ত সুখ আল্লাহর হুকুম পালনের মাধ্যমে। মানব সৃষ্টি করলেন এবং সৃষ্টির চলার বিধি বিধান নিরূপণ করতে ম্যানুয়াল কোরআন দিলেন। অনন্ত সুখের ঠিকানা রয়েছে এ ম্যানুয়ালে। দিক নির্দশনায় এ ম্যানুয়ালে করা আর না করার আদেশ আছে। সুদ হল না করার এক চরম নির্দেশ। সুদ যে অমানবিকতা তা ভুক্তভোগীই জানে। আর এ জন্যেই আল্লাহ পাক একে হারাম করে দিয়েছেন। কোরআনে ৭২ বার উল্লেখ করার মাধ্যমে এর পাপের গভীরতা বুঝানো হয়েছে। সুদের দাতা,সুদ গ্রহীতা, সুদের লেখক ও সুদের পরামর্শকারী এরা সবাই এ জঘন্য পাপের অন্তর্ভূক্ত। সুদে বাহাত্তরটি পাপের সমন্বয় রয়েছে। পাপের সর্ব নিন্ম কাজটি মায়ের সাথে যিনা অর্থাৎ যৌনতাকে বুঝানো হয়েছে। নাউজুবিল্লাহ। তাহলে এর উচ্চতম পাপ টি কি হতে পারে, আপনারাই ধারণা করুন।
আসলে সুদ একটি মর্মান্তিক সামাজিক ব্যাধি যৌতুকের ন্যায়। মানুষের সুখকে কেঁড়ে নিয়ে মানুষ কে সর্বস্বান্ত করে দেয় মানব সৃষ্ট এই সুদ ।এটি একটি নীরব ডাকাত, নীরব ঘাতক। মানুষের রক্তের রন্দ্রে রন্দ্রে সুদ মিশে আছে। অথচ সিকি পরিমান হারাম মালের ভক্ষণে চল্লিশ দিন পর্যন্ত ইবাদত হয় না। তাহলে হারাম মাল দ্বারা গঠিত শরীর দ্বারা ইবাদত তো নিশ্চয় হওয়ার কথা নয়। কত অজানা মানুষ সুদের অভিশাপে ধ্বংস হয়েছে কে তার খবর রাখে? কত মানুষের হাহাকার ধ্বনিতে পৃথিবী প্রকম্পিত তার হিসেব কয়জনার আছে?
আমরা মুসলিম,আমরা নিশ্চিত জানি আমাদের সামনে কবর, পুলছিরাত, হাশর, মিজান অথচ এ বিষয় নিয়ে আমাদের কোন ভ্রক্ষেপ ও নেই। যে যাই বলুক, আমরা তো জানি মৃত্যু তো নিশ্চিত, আমরা এক অজানা পথে মহাকালের যাত্রী।
আমরা মুসলমানরা কোন পথে চলছি? কোন আদর্শে আমরা অন্যের প্রতি এমন খারাপ আচরণ করছি যার ধাক্কা ইসলামের উপর আঁচড়ে পড়ছে। অথচ ভালো আচরণের মানুষের ভালো আচরণ দ্বারা হবে মিজানের পাল্লা টা বেশি ভারী। পাচ্ছাত্যের বিলাসিতা ও উচ্চাকাঙ্খা মুসলমানকে পেয়ে বসেছে। তাই বিত্তশালী হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতামূলক সুদ খাওয়া শুরু করেছে এবং আল্লাহর আইন কে তোয়াক্কা না করে নিজের মন গড়া মত চালিয়ে নিচ্ছে। জগতের সব কিছুই নশ্বর, সব কিছুই ভঙুর, কারো সময় বেশি, কারো সময় কম এর চেয়ে বেশি ব্যাত্যয় নয় কোন কিছুই। তবে কেন স্রষ্টার হুকুম কে লংঘনে এত দৌরাত্ব কোথা থেকে আসে?
কিছু মানুষ আছে যারা অপকর্মের জালে আত্মলিপ্সায় জড়িয়ে পড়ে, শুরু করে সীমাহীন অপরাধ। নিজের অক্ষমতার বাহিরে ক্ষমতা প্রকাশের জাহিরে দিশেহারা মানুষ গুলো সুদের মত অপরাধের জালে জড়িয়ে পড়ে। বেশি সুখের আশায়, বেশি প্রাপ্তির আশায় অধর্য ও অস্থির হয়ে নিজ সীমা লঙ্ঘন করে এবং সুদের দ্বারস্থ হয়। বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপটে মানুষ সুদ গ্রহণ করে। শহরে আর গ্রামে সুদের ধরণ ভিন্নতর হওয়াই স্বাভাবিক। তুলনামূলক গ্রামের গরিবদের অবস্থা সূচনীয়। ম্যাগা ঋণ ও ক্ষুদ্র ঋণের তান্ডব বাংলার সর্বত্রই। সুদ দাতারা টাকা নিয়ে বসে আছে যেন মানুষ বিপদে পড়ে আর সুদ গ্রহণ করে। অভাবীরা বিপদে পড়েই অজগরের মুখে পড়ে সাময়িকভাবে তাদের বিপদ দূর করতে। অথবা বড় কিছু প্রাপ্তির জন্য সুদ গ্রহণ করে। আসল কথা লোভে আর লাভে যারা সুদে মত্ত তারা দুনিয়ার সাময়িক সার্থ কে বড় ভেবে আল্লাহ হুকুম কে তুচ্ছ ভাবে।
কিছু মানুষের অনৈতিকতার কারণে আজ সুদের রাজ অনেক বেশি। ইসলামে করজে হাসানা আছে যা বেশি সওয়াবের কাজ। করজে হাসানা হলো বিনা পার্থিব লাভে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিপদ গ্রস্থ ব্যক্তিকে টাকা বা জিনিস দিয়ে তাকে সাহায্য বা ইকরাম করা। মানুষের কিছু অলস টাকা থাকে যা কারো দুঃসময়ে সাহায্য দেয়া যায় কিন্তু মানুষ এত নিমক হারাম, এত অকৃতজ্ঞ যে সময় মত তো দেনা পরিশোধ করেই না বরং সাহায্য দাতাকে চরম নাজেহাল করে। অবশেষে নিজের টাকা আদায় করতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর হাত পাততে থেকে ভিক্ষুকের ন্যায়। আবার কেহ কেহ নিজের টাকা আদায় করতে পারে না।
পক্ষান্তরে, সুদ দাতাকে কোন কষ্ট করতে হয় না। সুদ সহ সময় মত প্রদান করে। তাছাড়া সুদ দাতার আছে জনবল, আছে আইনী শক্তি অর্থাৎ সে আটঘাট বেঁধেই নামে। সুতরাং মানুষের করজে হাসানা দেওয়ার মত সাহস, শক্তি ও বিশ্বাস নেই। কিভাবে লেনদেন বা বিনিয়োগ করলে সুদ হয় না, তার জ্ঞান ও আমাদের নেই। জ্ঞানের অভাবের কারণে ও মানুষ অজান্তে সুদ খাচ্ছে। তাই ইসলাম তো মূর্খের জন্য নয় সুতরাং যে মুসলিম সে অবশ্যই শিক্ষিত। শিরক যে অমার্জনীয় অপরাধ সেখানেও না জেনে অনেকেই শিরকে লিপ্ত। সুতরাং জানতে হবে, মানতে হবে। দ্বীন তথা ইসলামিক জ্ঞান অর্জন ফরজ মানে আবশ্যকীয়। তাই না জানার ভাব ধরে বসে থাকার সুযোগ ও নেই।

 

Loading