রাজনৈতিক ‘আশ্রয়ে’ আকুলের যত অপরাধ

প্রকাশিত: ৬:২৯ অপরাহ্ণ , সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১

মোঃ সংগ্রাম হোসেন শার্শা উপজেলা প্রতিনিধি

ভারত থেকে অবৈধভাবে অস্ত্র এনে বাংলাদেশে বিক্রির অভিযোগে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন আকুল হোসাইন নামে একজন। তিনি ছিলেন ছাত্রলীগের যশোরের শার্শা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। যদিও অপকর্মে ধরা পড়ার পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জানা গেছে, আকুল পশ্চিমবঙ্গের তিন মহাজনের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতেন। মহাজনের লোকজন সীমান্ত এলাকার আবাদি জমিতে পুঁতে রাখতো অস্ত্র। হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেয়ে মাটি খুঁড়ে অস্ত্র বের করতো আকুলের লোকজন। এমনকি নজরদারি এড়াতে পানির জারের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হতো অস্ত্র। অস্ত্রগুলো আগে ডেলিভারি হতো এবং পরে অর্থ পরিশোধ হতো। বাংলাদেশি চোরাচালানকারী ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এবং মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে মেটানো হতো পাওনা। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত এভাবেই দুই শতাধিক অবৈধ অস্ত্র ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে বিক্রি করেছেন আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাকারবারি দলের সদস্যরা। আকুলও এই কারবারই করতেন। স্থনীয় সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটনের আস্থাভাজন ও ডান হাত হিসেবে পরিচিত আকুল হোসাইন। শার্শা-বেনাপোলে আকুল ছিলেন অনেকের কাছে আতঙ্কের নাম। মেয়রের রাজনীতিতে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। সেই সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি অংশ তার পেছনে ছিলেন। অস্ত্রসহ আকুলের গ্রেফতারের ঘটনা মেয়রের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় বেশ কিছুদিন ধরেই শার্শাসহ যশোরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ডিবি সূত্র বলছে, সীমান্তে সতর্কতা কিছুটা শিথিল হলে ভারতের চোরাকারবারিরা বাংলাদেশিদের কাছে চালান পাঠায়। এই কাজে অপরাধীরা স্থানীয় দিনমজুরদের কাজে লাগায়, যারা অর্থের একটি অংশ পায়। ভারত থেকে ৫০ হাজার টাকায় কেনা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজর এড়িয়ে চোরাকারবারি ঢুকতো বাংলাদেশে। দেশে এনে সেগুলো বিক্রি করতো ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়, অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ দামে। এসব অস্ত্র বাংলাদেশে বিভিন্ন সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহার হচ্ছিল। ডিবি জানায়, বাংলাদেশি চোরাকারবারি ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের একটা তালিকা পাওয়া গেছে। তাদের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তাদের সবাইকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।জানা যায়, রাজনৈতিক পদ ব্যবহার করে আকুল অস্ত্র ও গুলি ব্যবসা করতেন। পাশাপাশি মাদক ও সোনা চোরাচালানেও জড়িত হয়ে পড়েন তিনি। দেশে অবৈধপথে যত গুলি আসে, তার একটি বড় অংশ এই ছাত্রনেতার নেটওয়ার্কেই আসতো। এ কাজে বাংলাদেশ-ভারতে ২৪ সদস্যের এক বাহিনীও গড়ে তুলেছেন তিনি। এসব কাজে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বড় নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন এই ছাত্রলীগ নেতা। এর আড়ে গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ অভিযান চালিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতা আকুলসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। রাজধানীর মিরপুর, দারুস সালাম ও গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে আটটি বিদেশি পিস্তল, আট রাউন্ড গুলি, ১৬টি ম্যাগাজিন ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করে ডিবি। এই পাঁচজনের মধ্যে আকুল ছাড়া ছিলেন ইলিয়াস হোসেন, আব্দুল আজিম, ফারুক হোসেন ও ফজলুর রহমান। আকুলসহ সবাই যশোরের বেনাপোল ও শার্শা থানা এলাকার বাসিন্দা। রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় একজন ঠিকাদারকে গুলির ঘটনার ব্যবহৃত অস্ত্র এবং সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া কয়েকটি অস্ত্রের উৎসের সন্ধানে নেমে চক্রটির সন্ধান পায় ডিবি। পরে গোপন সংবাদে অভিযান চালানো হয়। বিক্রির জন্য অস্ত্র ও গুলি সঙ্গে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে গাবতলী হয়ে ঢাকায় ঢুকছিলেন তারা।

Loading