ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে অজ্ঞাত যুবক খুনঃপরকীয়ার জের রহস্য উদঘাটন করল ডিবি পুলিশ

প্রকাশিত: ১০:১১ পূর্বাহ্ণ , সেপ্টেম্বর ৩, ২০২১

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে অজ্ঞাত যুবক হত্যাকান্ডের মামলায় ২৪ঘন্টার মধ্যে ডিবি পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে।এ ঘটনায় লিয়াকত আলী ও নিহতের স্ত্রী সাবিনা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে ডিবি পুলিশ ও আদালতে পৃথকভাবে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। নিহত ব্যক্তির নাম হযরত আলী। সে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বাঁশকান্দা গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে।স্ত্রীর পরকীয়া প্রকাশ পাওয়ায় স্বামী হযরত আলীকে কৌশলে ডেকে নিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়।
ডিবির ওসি সফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২সেপ্টেম্বর)সন্ধ্যায় জানান, গত ৩০আগস্ট দুপুরে হালুয়াঘাটের আঁতলা বিলে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ হালুয়াঘাট থানা পুলিশ উদ্ধার করে। পরে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। মৃত ব্যক্তির পরিচয় উদঘাটিত হলে জানা যায় তার নাম হযরত আলী। তার পিতার নাম গোলাম মোস্তফা। সে নালিতাবাড়ীর বাঁশকান্দা পূর্বপাড়ার বাসিন্দা।
এ ঘটনায় ছোট ভাই আবু নাসের বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হালুয়াঘাট থানায় মামলা নং-২৮,তারিখ-৩১/০৮/২০২১ইং ধারা ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমারউজ্জামান ক্লু লেস এই মামলাটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্তভার দেন জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি কে। ডিবি’র ওসি সফিকুল ইসলাম পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় মামলার স্বল্প সময়ের মধ্যে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘাতকদের গ্রেফতারে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্তে মাঠে নামেন। ডিবি’র এল আই সি বিভাগ তদন্ত করে হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার ২৪ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারী মোঃলিয়াকত আলী ও সাবিনা খাতুনকে গ্রেফতার করে। মামলার মূল রহস্যও উদঘাটিত হয়।
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে ওসি সফিকুল ইসলাম বলেন, আসামি লিয়াকত আলী ঢাকা উত্তরা এলাকায় থাকিয়া রাজমিস্ত্রী ও রিক্সা চালাতো।১০বছর আসামি সাবিনা খাতুন তার ১ম স্বামী জনৈক সাইদুর রহমানকে শারীরিক অক্ষমতার অপবাদে তালাক দিয়ে তার দুলাভাই গ্রেফতারকৃত লিয়াকতের কাছে ঢাকায় চলে যায়। লিয়াকতের বাসায় থেকে সাবিনা বিভিন্ন বাসা -বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করত। এ সময় লিয়াকত ও সাবিনার মধ্যে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এ পরকীয়ার কারণে লিয়াকতের সংসারে অশান্তি দেখা দিলে ২বছর পূর্বে সাবিনা ঢাকা থেকে বাড়ীতে চলে আসে। গত৮/৯মাস আগে সাবিনাকে তার পিতা-মাতা হযরত আলীর কাছে বিয়ে দেয়। এর পরও লিয়াকতের সাথে সাবিনার বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক চলতে থাকে। প্রায় ১মাস আগে লিয়াকত ও সাবিনার অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি হযরত আলীর কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে। এ ঘটনায় হযরত আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করে লিয়াকত ও সাবিনা।
এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২৯আগস্ট সাবিনা মিথ্যা অজুহাতে তার স্বামী হযরত আলীকে পরকীয়া প্রেমিক দুলাভাই লিয়াকতের কাছে গোরক পুর বাজারে পাঠায়। দুলাভাই লিয়াকত তার শ্যালিকার স্বামী হযরত আলীকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার অজুহাতে ঘটনাস্থলে নিয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ও কাদা মাটির মধ্যে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশের পরিচয় গোপন করার জন্য হযরত আলীর লাশে কাদা মেখে রাখে। হযরত আলীর ব্যবহৃত মোবাইল সেট, পরিহিত লুঙ্গি , শার্ট,গেন্জি খুলে কাদা মাটিতে পুঁতে রাখে। একই সাথে লিয়াকত তার প্রেমিকা সাবিনার কাছে হযরত আলীকে হত্যার বিষয় মোবাইল ফোনে জানায়ও সতর্ক থাকতে বলে।পরে লিয়াকত আত্মগোপনে চলে যায়।
ওসি আরো জানান, গ্রেফতারের পর ঘটনাস্থল থেকে আসামি লিয়াকতের দেখানো মতে কাদামাটিতে পুঁতে রাখা মৃত হযরত আলীর মোবাইল সেট, পরিহিত লুঙ্গি, শার্ট, গেন্জি ও হযরত আলীকে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে ব্যবহার করা গামছা উদ্ধার করা হয়। তাদেরকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হলে গ্রেফতারকৃতরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

Loading