ডিএমপির হস্তক্ষেপে মিশরীয় তরুণী পেল ভালবাসার সংসার

প্রকাশিত: ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ , আগস্ট ৬, ২০২১

বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দমনের পাশাপাশি নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রুখতে এবং তাদের দ্রুত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে কাজ করছে ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। এই ডিভিশনের মধ্যস্থতায় মিশরীয় তরুণী ইমাম হুসেন ফিরে পেল তার ভালবাসার সংসার।
মিশরীয় অল্পবয়সী তরুণী ইমাম, ভালোবেসে বিয়ে করে চাঁদপুরের ত্রিশ বছর বয়সী নূর সুজনকে। বাংলাদেশি তরুণ সুজনকে বিয়ের পর অনেক স্বপ্ন নিয়ে সুদূর মিশর থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছিল ২০২০ সালের অক্টোবরে।

নূর সুজন ২০০৮ সালে সৌদি আরবে গিয়ে সেখানে ‘ভালো কিছু’ করতে না পেরে ভিজিট ভিসায় ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া, চীন ঘুরে ২০১৯ সালে তার মামার সহযোগিতায় মিশরে যান। সেখানে ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সংগ্রামে নামেন সুজন। মিশরে বসবাসরত মামার পরামর্শে মিশরীয় তরুণী ইমাম হুসেনের সঙ্গে ২০১৯ সালের ৫ মে মিশরীয় আইন অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বৈশ্বিক মহামারি করোনার নেতিবাচক প্রভাবে ব্যবসার ক্ষতি হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়ে সুজন।

ইমাম হুসেনের পরিবারও কোনো সহায়তা না করায় বাধ্য হয়ে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা মিশরীয় বধূকে নিয়ে ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশে চলে আসেন। বাংলাদেশেই জন্ম নেয় সুজন-ইমাম দম্পতির পুত্রসন্তান মালেক। প্রথম দিকে সব ঠিকই চলছিল কিন্তু পরের দিকে শুরু হয় দুই দেশের সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব! নূর সুজনের উপার্জন না থাকায় তার পরিবারের অন্য সদস্যরা মিশরীয় বধূকে আর সহ্য করতে পারছিলেন না। শুরু হয় শারীরিক-মানসিক নির্যাতন। ইমামকে পড়তে হয় কঠিন পরীক্ষায়। দিন দিন বৈরী পরিস্থিতি, ভাষা ও সংস্কৃতিগত পার্থক্যে ইমাম এর স্বপ্ন ভেঙে যেতে থাকে। বিভিন্ন অজুহাতে তিক্ততা বেড়েই চলে। ইমাম এসব কষ্টের কথা তার মাকে জানালে ঘটনার নাটকীয় মোড় নেয়।

ভিকটিমকে নির্যাতনের বিষয়টি তার মা বাংলাদেশের ‘এম্বাসি অফ দ্য আরব রিপাবলিক অফ ইজিপ্ট’-কে জানায়। সেখান থেকে ডিএমপির ডিপ্লোমেটিক ডিভিশনকে অবহিত করে মেয়েটিকে দ্রুত উদ্ধার করার অনুরোধ করে। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে ওয়ারী বিভাগ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে গত ২৬ জুলাই মিশরীয় নাগরিক ইমামকে তার স্বামী নূর সুজনের হেফাজত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

থানা পুলিশ ভিকটিম ইমাম ও তার আট মাসের শিশুসন্তান মালেককে নিরাপদ হেফাজতসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে পাঠায়। এ ডিভিশন ইমাম ও তার সন্তানের রুচি অনুসারে খাবার, পোশাক ও অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করে।

ভিকটিম ইমামের মানসিক বিপর্যয়কে কাটিয়ে তুলতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা নেওয়া হয়। মানসিক বিপর্যয় কাটাতে তাকে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় নিয়ে গুগল ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাকে তার ভালোবাসা আর সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য তার স্বামীকে আর একবার সুযোগ দিতে অনুরোধ করে ডিএমপি। ইমাম কিছুটা বাংলা বোঝায় প্রতিদিন উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন টিম ইমামের সঙ্গে বারবার কথা বলতে থাকে। অবশেষে ইমাম এই ডিভিশনের নারী পুলিশের কাছে তার মনের সব কষ্ট শেয়ার করে। এই ডিভিশনের কর্মকর্তারা জানতে পারে যে, মিশরীয় ভিকটিম ইমাম আবারও মা হতে চলেছেন।

তাদের সংসার টিকিয়ে রাখতে এবার বদ্ধপরিকর হন উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের কর্মকর্তা উপ-পুলিশ কমিশনার হামিদা পারভীন। মায়ের মমতা দিয়ে তিনি ইমামকে বোঝাতে থাকেন। তার নিরলস প্রচেষ্টা অবশেষে আলোর মুখ দেখে। পরবর্তী সময়ে মিশর এম্বাসির প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সে আবার তার সংসারে ফিরে যাবার এবং স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশে থাকতে চাওয়ার কথা জানায়। মামলা করার প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে সে। কিছু শর্ত সাপেক্ষে আর একবার সুযোগ দিতে চায় বাংলাদেশী স্বামী সুজনকে। মিশরীয় তরুণী তার ভালোবাসার সংসার ফিরে পাবে, সব সমস্যার সমাধান হবে- এ দৃঢ় বিশ্বাস টিম উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের।

Loading