ঈদুল ফিতর আমাদের সবার জন্য অনাবিল সুখ বয়ে আসুক নিউজ ৭১ অনলাইন নিউজ ৭১ অনলাইন প্রকাশিত: ৩:৫১ অপরাহ্ণ , মে ১৩, ২০২১ মো.আলী আশরাফ মোল্লা।ইসলাম ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটি উৎসবের একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর আর অন্যটি হচ্ছে ঈদুল আযহা। আগামীকাল বাংলাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস পবিত্র রোজা পালন,সিয়াম সাধনা শেষে ১ শাওয়াল উদযাপিত হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ এক মাস বিভিন্ন ধর্মীয় কাজ, নামাজ, রোজা, যাকাত, ফিতরা, দোয়া দরুদ, জিকির আযকার,কোরআন খতম পালন শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন আমাদের সামনে সমাগত। রাত পেরুলেই ঈদ। ঈদুল ফিতর শব্দের অর্থ হচ্ছে, রোজা ভঙ্গের দিন। ইসলামী পরিভাষায় একে ইয়াওমুল জায়েজা বা পুরস্কার দিবস হিসেবে ও অভিহিত করা হয়েছে। অন্য অর্থে বিজয়ের দিন ও উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহ দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে যে আল্লাহ ভীরুতা অর্জন করেছে, পাপ পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে,তাই ব্যাপক অর্থে বিজয়ের কথাই বলা হয়েছে। এ দিন আনন্দ উৎসবের দিন। সাম্য প্রতিষ্ঠার দিন। গরীব দুঃখী,অসহায়, ধনী দরিদ্র, আমির ফকির, রাজা বাদশাহ কাধে কাধ মিলিয়ে ভালোবাসা আর আনন্দ বিলিয়ে দেওয়ার দিন।মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিবো। মুসলমান সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর মুসলিম নর নারীর জন্য এক আনন্দের এবং সুখের বার্তা নিয়ে আসে। সমগ্র মুসলিম জাহানে এর বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ দিনটি আমাদের জন্য খুবই তাৎপর্য এবং মহিমান্বিত একটি দিন। এবার ঈদুল ফিতর এমন এক সময়ে উদযাপিত হচ্ছে যখন পুরো বিশ্বজুড়ে কোভিড ১৯ আক্রান্তে মানুষ গৃহবন্ধী। গত বছরে ও এই ঈদুল ফিতর মানুষজন গৃহবন্ধী অবস্থায় পালন করেছিল। এবারেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এই মরণব্যাধি মহামারীর এই সময়ে বিশ্বে ঈদ পালিত হলে ও এই ঈদের যে চিরাচরিত নিয়ম বড় খোলা মাঠে ঈদের জামাত আদায়, সেটি কিন্তু এবার হচ্ছে না। ঈদের মাঠে কোন ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। ঈদের যে চিরাচরিত নিয়ম মানুষে মানুষে কোলাকুলি করর্মদন সেটি কিন্তু এবার ও করা যাবে না। মনের কোনে একটি অপূর্নতা রয়েই যাবে। একটি অতৃপ্ততা থেকেই যাবে। কারো সাথে কারো কোলাকুলি হবে না। করমর্দন হবে না।ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশী, ঈদ মানেই উৎসব। ঈদের দিন বড় মাঠে নামাজ আদায় শেষে বাড়িতে এসে বড় দের সালাম করা, সেলামী দেওয়া নেওয়া ইত্যাদি একটি প্রচলিত রীতিনীতি সংস্কৃতিতে প্রবহমান ছিল। আমরা জম্মের পর থেকেই দেখে এসেছি বা পালন করে এসেছি, ঈদের নামাজ আদায় শেষে পাড়া মহল্লা আত্বীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়া,সবার সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা,কোলাকুলি করা, সবার বাড়িতেই কমবেশি সামান্য হলেও আপ্যায়ন পায়েশ ফিরনি সেমাই খাওয়া ইত্যাদি ঈদের আনন্দকে পরিপূর্ণতা দান করতো। কিন্তু এবার সেটিও হচ্ছে না বিধায় ইতিহাসে লেখা থাকবে এক ভিন্ন ঈদ ২০২১। যদিও আমরা ২০২০ সালেও মহামারী করোনার জন্য এই পরিস্থিতিতেই ঈদ উদযাপন করেছিলাম। তারপরেও আমরা সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ঈদ উদযাপন করবো। সেই ক্ষেত্রে আমরা খেয়াল রাখবো কোন প্রকার স্বাস্থ্য ঝুকিঁতে যাতে কাউকে না পড়তে হয়। কোন প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় যাতে কেউ না পরি। যত সম্ভব স্বাস্থ্য বিধি মেনে এবং মুখে মাস্ক পরিধান করে চলি।সবাই নিজ নিজ দিক থেকে যথেষ্ট পরিমান সর্তক থাকতে হবে। আমরা পাড়া মহল্লায় মসজিদে মসজিদে লোক থাকা সাপেক্ষে একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের মাঠে কোন ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। সবাই ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে নামাজের বিছানা নিয়ে যাবেন এবং সাথে মাক্স ব্যবহার করবেন। ঈদের নামাজ শেষ হলে সবাই যার যার বাড়ি চলে যাবেন। কোন প্রকার হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি করা থেকে এবার বিরত থাকুন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে এই দুর্যোগ শেষ হলে আমরা আবার সবার সাথে সবার দেখা হবে, কুশল বিনিময় করবো সেটাই এবার ঈদুল ফিতরের দিন প্রত্যাশা করতে পারি। ঈদ হোক আমাদের আনন্দের এবং সাম্যের। এবার ঈদে আমরা যে যেখানে বর্তমানে অবস্থান করছি সেখানেই ঈদ উদযাপন করছি। পরিবার, বাবা-মা, আত্বীয় স্বজন কারো সাথে দেখা হচ্ছে না। অন্তত সবারই এই ব্যাপারটি নিজের নিরাপত্তার জন্য পরিবারের ভালোর জন্য মেনে চলা উচিত। কারণ পরিবারের সাথে ঈদ পালন করতে যেয়ে আপনি অনেক দূর থেকে অনেক লোক জনের সাথে বাড়ি ফিরছেন। এতে করে করোনাভাইরাস বহন করছেন না তো! কারণ এই মুহূর্তে আপনার বেচে থাকার উপরেই সবার্ধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এই বৈশ্বিক মহামারী দূরীভূত হলে আমরা আবার আনন্দ করতে পারবো, আবার পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ ।এবার ঈদুল ফিতরের দিনে আমরা যা যা মিস করবো তা আমাদের নিজেদের স্বার্থেই মেনে নিতে হবে। আমরা যা মিস করবো তা হচ্ছে, ঈদের জামাত ঈদগাহ মাঠে মিস করব, নামাজ আদায় শেষে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হ্যান্ডশেক,কোলাকুলি করা মিস করব,নিজের এলাকার মানুষ জন কে মিস করব, পরিবারের প্রিয়জনদেরকে মিস করব। মায়ের হাতের বানানো পিঠা,পায়েস ফিরনি সেমাই,নুডুলস মিস করব। বড়দের থেকে ঈদের সেলামি পাওয়া এবং ছোটরা আমার কাছ থেকে সেলামি পাওয়া মিস করবে। দলবেধেঁ পাড়া মহল্লায় কিংবা বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে ঘুরতে যাওয়া মিস করব। ছেলেমেয়ের মুখে পরম মমতায় ডাকা বাবা শব্দটিকে ভীষণ মিস করব। আবার আমিও বাবা-মা কে সেলাম করা মিস করব। প্রিয় জনের সান্নিধ্য মিস করব।তথাপিও আমাদেরকে এই করোনাময় এই দুঃসময়ে বৃহৎ স্বার্থে নিজের এবং পরিবারের সুরক্ষার জন্যই হাসি মুখে তা মেনে নিতে হচ্ছে। তারপরেও আমি আশাবাদী, এই মহামারীর অবসান হবে একদিন, আবার আসবে সুদিন। এবারের ঈদ হোক আমাদের জন্য সুখের এবং নিরাপত্তার। এই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের থেকে বেচেঁ থাকার সংগ্রাম। ঈদকে ঘিরে অযথা অযাচিত বিপদ ডেকে আনবেন না। দয়া করে হৈ হুল্লোড় করা থেকে বিরত থাকুন। ঘরেই থাকুন নিজে নিরাপদ থাকুন পরিবার কে নিরাপদে রাখুন। আমাদের সকলেরই প্রত্যাশা, এই অসময় হয়তো বেশি দিন থাকবে না। আলোর মুখ অবশ্যই আমরা দেখব। সেই পর্যন্ত সবাই যার যার অবস্থান থেকে স্বাস্থ্য বিধি এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলি, ঝুঁকি মুক্ত জীবন গড়ি।অন্ধকারের পরেই আলো আসে। আমি গভীর ভাবে বিশ্বাস করি,একদিন অন্ধকার দূরীভূত হয়ে নিশ্চয়ই আলো আসবে। আর এই করোনাময় যুগেরও অবসান হবে। সবার মুখে ফুটবে হাসিঁ,বাসযোগ্য হবে পৃথিবী। এটাই হোক ঈদুল ফিতর ২০২১ এর চাওয়া পাওয়া। ঈদ সবার জীবনেই অনাবিল সুখ,শান্তি, সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। সাম্য,ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠিত হোক আর সকল অন্যায় চিরতরে দূরীভূত হোক। ঈদের অনাবিল আনন্দ আর সুখ ছড়িয়ে পড়ুক সারাবিশ্বে। দূর হয়ে যাক মহামারী করোনা। বিশ্ব আবার প্রানচাঞ্চল্যে ভরে উঠুক। ঈদ সবার ভালো কাটুক, আনন্দে কাটুক। সবার জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসুক। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা– ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক।লেখকঃ প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। শেয়ার অতিথি কলামবিষয়: