পাহাড়ী জুম্মো সমাজ কোন পথে হাটছে?

প্রকাশিত: ৫:০৮ অপরাহ্ণ , ডিসেম্বর ৭, ২০২০
যতই দিন যাচ্ছে ততই বেড়ে চলেছে পাহাড়ী জুম্মো সমাজে মারামারি,হানাহানি,খুনখারাপি, হিংস্রতা,একে অপরের শত্রুতা,মিথ্যাকে সত্য, সত্যকে মিথ্যা বলার প্রবণতা যাহা আজ নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাবতেই অবাক লাগে আমরা যতোই শিক্ষা দীক্ষা,জ্ঞান বিজ্ঞানে, ধর্ম সাহিত্য, প্রজ্ঞায় সামাজিক উৎকর্ষ সাধনে এগিয়ে যাচ্ছি ততোই আমাদের পাহাড়ী জুম্মো সমাজে উপরে উক্ত সীমাহীন অপকর্মে চেয়ে যাচ্ছে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম।এখানে চলছে জুম্মো রাজনৈতিক দলগুলির দন্ড সংঘাত, হানাহানি, রক্তারক্তি,চলছে ধর্মীয় আচরণের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য আক্রমণ,আবার এখানে মানবিক কাজও হচ্ছে প্রচুর, অসহায় ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে,অসহায় রোগীদের সাহার্য্য করা হচ্ছে, দুর্গম এলাকায় ক্ষুধার্তদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু পাহাড়ী মানুষের হিংসার মনোভাব নিষ্ঠুর আচরণের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।এখানে চলে সোশাল মিডিয়া ফেসবুকে ক্ষণে ক্ষণে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ একে অপরের বিরুদ্ধে। বাদ যায় না রাজনৈতিক কর্মী,রংবস্ত্রধারী বৌদ্ধ ভিক্ষু,সরকারী চাকুরীজীবি থেকে শুরু করে সকলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র টাক করা হয়।আর এসব হচ্ছে শুধু হিংসার বশবর্তী হয়ে তাদের ভাল কাজগুলি তেনাদের পছন্দ নয় তারা/তথা কথিত মিথ্যা অপপ্রচারকারীরা ফেসবুক মিডিয়াই আশ্রয় নেয় তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য।তারা এসব করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে আর তাদের এসব হীন কর্মে সহযোগী হয় কিছু উশৃংখল লোক তারা অশ্রাব্য কর্কশ ভাষায় গালমন্দ করে রাজনৈতিক কর্মীদের,বৌদ্ধ ভিক্ষুদের,স্যোশিয়াল এক্টভিষ্টদের। আর তাদের মিথ্যা বানোয়াট খবরে আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে অশ্রাব্য ভাষায় কমেন্ট করা হয় যা সংখ্যাই অতি নগণ্য এবং লাইকের পরিমাণ দেখবেন বড়জোর ১০/১৫/২০ জনের মতো এরা সবাই একই গুরুর শিষ্য একই গোয়ালের গরু রাম,শ্যাম,যধু,মধু।
মাঝে মাঝে আমি হতবাক হোই যে সমস্ত জ্ঞানী বিজ্ঞজনরা,ভান্তেরা সমাজে অমূল্য অবদান রেখে যাচ্ছেন আমরা তাদেরকে নিয়েও গালমন্দ করি,তুচ্ছতাচ্ছিল্য ব্যবহার করি,ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে এমন এমন মন্তব্য/কমেন্ট দেখী যা সত্যি ভাবনার বিষয়। আমরা ভূলে যাচ্ছি একজন ধর্মীয় গুরু,একজন শিক্ষক,একজন বড়জন/গুরুজনের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়।আমরা ভূলে যাচ্ছি বুদ্ধের অহিংসা নীতিকে,ভূলে যাচ্ছি মা বাবা, গুরুজন,শিক্ষকদের শেখানো আদব কায়দা তাই যত্র তত্র অশ্রাব্য ভাষায় বাক্যবাণ ছুড়ি যার তার দিকে।আমি ইদানিং লক্ষ্য করছি আমাদের সমাজ পূজনীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের যথেষ্ট অবমাননা করে চলেছেন যা কখনও কারোর শুভফল বয়ে আনবেনা।যারা আজ নিরলসভাবে দিনরাত পরিশ্রম করে জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছেন আমরা তাদেরকে কেন বিতর্কিত করে চলেছি?তাদের দূরদর্শীতা চিন্তা চেতনাকে কেন অবমূল্যায়ন করছি? একটা বিষয় চিন্তা করে দেখুন আজ সুদূর ভারত বর্ষে বনবিহারের শাখা ও বিভিন্ন অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে আমাদের অসহায় অনাথ জুম্মো ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। স্বয়ং বুদ্ধ গয়াতে বনবিহারের শাখা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে কীর্তিমান বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অবদানে। আজ জুম পাহাড়ের বৌদ্ধ তীর্থ যাত্রীরা তীর্থ পরিভ্রমণ করে বুদ্ধ গয়াই গিয়ে নিরাপদে ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদন করে বিশ্রাম করতে পারছেন।আজ যারা সেই সকল সুযোগ সুবিধাদি করে দিয়েছেন সেই সকল অধ্যক্ষ ভান্তেদেরও তুচ্ছ তাচ্ছিল্যভাবে গালমন্দ করছি এসব দেখে আমার নিজেকে অপরাধী মনে হয় আমরা জাতি হিসাবে এতো অকৃতজ্ঞ কেন?একজন বৌদ্ধ কুলপুত্র তো কারোর শত্রু হতে পারে না তারা মহান বুদ্ধের অহিংসা নীতি অনুসরণ করেই সমাজে বসবাসরত মানুষদের উদ্দেশ্যে বুদ্ধের মহামন্ত্রের অমীয় বাণী প্রচারে দিকে দিকে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিচ্ছেন আমরা কেন তাদের শত্রু ভাবছি? তাদের অমর্যাদা করছি স্যোশাল মিডিয়াতে তারা তো আমাদের সকলের কল্যাণমিত্র পরম পূজনীয় ধর্মীয় দৃষ্টিতে।বিগত কয়েকদিন আগে পারমীপুর বনবিহারে লুটপাট চালালো অসভ্য বর্বরেরা। তাদের লক্ষ্য ছিল কয়েকদিন আগে মহান কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে অনেক টাকা উঠেছে সেই টাকার লোভে তারা পারমীপুর বনবিহারের অধ্যক্ষকে টার্গেট করেছে।ভান্তের কাছে জিজ্ঞেস করে মেলার টাকা কোথায় মানে চীবরদানের টাকাটা কোথায়?বেচারা ভান্তের কাছে ১০/১৫ হাজার যা ছিল সবই লুটে নিলো মূল্যবান জিনিসপাতিসহ আর ভান্তেকে প্রহার করলো। আমরা কোন সভ্য সমাজে বসবাস করছি ভাবতে অবাক লাগে।সবসময় একটা না একটা ইস্যু/ ব্যাপার নিয়ে ফেসবুক মিডিয়া গরম করে রাখছে হীন উদ্দশ্য সাধনকারীরা আজও নেটে দেখলাম গতবছরের শ্রদ্ধেয় এক ভান্তের নামে আইডি খুলে বিশ্রী ভাষায় নিজেরা চ্যাট করে সেই পুরনো মিথ্যা অপবাদগুলি জালাই করছে, অনেককে দিব্যি কমেন্ট করতেও দেখলাম। আমার প্রশ্ন হলো তারা আসলে এইসব কর্মকান্ডগুলি করে কি পায়, কত টাকা পায় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুর পিছনে লেগে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কেন দিন দিন অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে?আমরা কি এসব নোংরামি থেকে উত্তোরণ ঘটাতে পারবো না।
আজ যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ভাবছে/রাজনীতি করছে তাদের উচিত এসব হীনমনা অপকর্মকারী গোষ্ঠীদের সমূলে উৎখাত করা যারা সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে চলেছে। অপর দিকে এটাও ঠিক কারা করবে তাদের উৎখাত আমাদের পার্টিরা তো নিজেরা তিন চারভাগে বিভক্ত তারা ব্যস্ত আছে নিজেদের আদিপত্য বিস্তার নিয়ে কে কাকে ঘায়েল করবে।এভাবে তো একটা সমাজ চলতে পারে না আমাদের কিন্তু সমাধানের পথ খুঁজতে হবে, সমস্যা যেখানে সমাধানও সেখানে।আমরা যদি সকলে মহান বুদ্ধের অহিংসার পথে চলি তাহলে তো কোন হানাহানি দন্ড সংঘাত হওয়ার কথা নয়। আমাদের হতে হবে আচরণে বৌদ্ধ কথায় নয়। আমরা যদি সকলে ভগবান মহান বুদ্ধের নির্দেশিত পঞ্চশীল পঞ্চনীতি মেনে চলি তাহলে আমরা এমন সমাজে উত্তর্ণী হবো কেন? আমাদের সকলকে বুদ্ধের অহিংসা নীতিতে পথ চলতে হবে, সকল হিংসা ভেদাভেদ, শত্রুতা পরিহার করতে হবে।সকল রেষারেষি হানাহানি, মারামারির বিভেদ ভূলে ক্ষমা করো ভূলে যাও নীতির ভীত্তিতে আবারও নতুন করে শুরু করতে হবে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য।আসুন আমরা সকলে মিলে মহান বুদ্ধের অহিংসা মৈত্রীর বন্ধনে সামিল হই। এখন আপনি কোন পথে হাটবেন হিংসা না মৈত্রী?বন্ধুরা কেউ কারোর প্রতিপক্ষ হতে যাবেন না সকলে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হোন।জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। ##Priyadarshi Chakma এর ফেসবুক দেয়াল থেকে নেয়া ।

Loading