ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন এখন বাস্তব

প্রকাশিত: ১২:০৫ অপরাহ্ণ , নভেম্বর ১০, ২০২০

মোঃ আব্দুছ ছাত্তার সোহেল:: করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। প্রাণঘাতী এই মহামারি সামাল দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখাই এখন বিশ্বজুড়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যেসব দেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে (আইসিটি) এগিয়ে তারা করোনাকালে বাড়তি সুফল পাচ্ছে। দ্রুত ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারে এগিয়ে থাকা দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় গত ১১ বছরে গড়ে ওঠা তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামোই এ কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজে লাগছে বলে মনে করছেন তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী রূপকল্প বাস্তবায়নে আইসিটি উপদেষ্টা হিসেবে পাশে পেয়েছেন সুযোগ্য সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়কে। প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে ফাইভজি চালুর প্রস্তুতিসহ ডিজিটাল অবকাঠামো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৬ কোটি ২৯ লাখ মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে ১০ কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মোবাইলে আর্থিক সেবা, রাইড শেয়ারিং, ই-কমার্সসহ বেশ কিছু সরকারি সেবা এখন হাতের নাগালে। এ ছাড়া আগামী বছরের প্রথমার্ধে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল সেবা (ফাইভজি) চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা অ্যানালিসিস, ইন্টারনেট অব থিংকস, ব্লকচেইনের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে পা রাখবে বাংলাদেশ। উচ্চগতির মোবাইল ইন্টারনেট কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প ও সেবা খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। আর এ যাত্রাকে এগিয়ে নিচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি।

 

গত চার বছরে ডিজিটাল অর্থনীতিতে চমকপ্রদ অগ্রগতি অর্জন করে হুয়াওয়ের ‘গ্লোবাল কানেক্টিভিটি ইনডেক্স ২০১৯’-এর ‘টপ মুভার’ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরেরও কম সময়ের পথচলায় জিসিআই সূচকে সাত পয়েন্ট এগিয়েছে বাংলাদেশ। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ও বাসাবাড়িতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল অর্থনীতিতে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।

“২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ঘোষণার পর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছে। আমাদের এক বছর পর ‘ডিজিটাল ব্রিটেন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের ছয় বছর পর ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ ঘোষণা করে ভারত। আর আমাদের ১১ বছর পর ২০১৯ সালে ‘ডিজিটাল পাকিস্তান’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান।”

 

দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকেও ডিজিটাল উন্নয়ন স্পর্শ করেছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, জমির ই-পর্চা, মিউটেশন, ব্যাংকিং, পাসপোর্ট ফরম পূরণ, ভিসা আবেদন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ই-চালান, পেনশনভাতাসহ নানা সেবা মিলছে। বিশ্বের ৬৭টি দেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন পণ্য ও সেবা রপ্তানি হচ্ছে। এ খাতের রপ্তানি আয় ছাড়িয়ে গেছে এক বিলিয়ন ডলার (প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা)। তবে ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় করতে চায় সরকার। এ জন্য দেশে ২৮টি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া হার্ডওয়্যার খাতে এরই মধ্যে দেশে স্মার্টফোন সংযোজন করছে ৯টি ব্র্যান্ড। এ ছাড়া দেশের সফটওয়্যার সেবার বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই দেশি সফটওয়্যার নির্মাতারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।

‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, রোবটিকসের মতো প্রযুক্তিগুলো নিয়ে কাজ করতে হলে আমাদের দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই।’‘তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামো এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়, সেটা আজ বাস্তবতা। আমরা এখন ঘরে বসে অনেক কাজ করছি, অনলাইনে শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন, জরুরি মিটিং সারা যাচ্ছে।প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগ অসাধারণ; কিন্তু আমাদের আরো দ্রুত এগোতে হবে। গ্রাম ও শহরের ডিজিটাল বৈষম্য আরো কমিয়ে আনতে হবে।

 

মোঃ আব্দুছ ছাত্তার সোহেল
চেয়ারম্যান, ১২ নং ভাবখালী ইউনিয়ন পরিষদ
সদর,ময়মনসিংহ। 

Loading