আশুলিয়ায় গণধর্ষণ: কিশোর গ্যাং লিডার সারুফ গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১১:১৫ অপরাহ্ণ , অক্টোবর ৭, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক: সাভারের আশুলিয়ায় গণধর্ষণের পর ভিডিও ধারণের ঘটনায় মাথা ন্যাড়া করে নিজের চেহারা পরিবর্তনের চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি প্রিন্স নামের কিশোর গ্যাংটির প্রধান সারুফের। অবশেষে নিজের বাবাই বাধ্য হলেন তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে। যদিও এর আগে তার বাবা আকরাম টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন।

আশুলিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতি এলাকা ভাদাইল। দুটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ জোন গড়ে ওঠায় চাকরির তাগিদে এই এলাকায় বিভিন্ন জেলার মানুষের পদচারণা। অত্যন্ত ঘনবসতি হওয়ায় এক প্রকার বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে এটি। দৌরাত্ব বেড়েছে বিভিন্ন রকম গ্যাং এর। গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দিনে দুপুরে ধর্ষণসহ নানান অপরাধের অভিযোগ এদের বিরুদ্ধে।

এমনই একটি গ্যাংয়ের নাম ‘প্রিন্স’! ডায়মন আলামিন, জাকির, পান রাকিব, আল-আমিন, জিদান, রেদওয়ানসহ প্রায় ১৫ থেকে ১৬ জনের এই গ্যাং। যার নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলো প্রিন্স সারুফ। স্কুল খোলা থাকাকালীন সময়ে ছুটির পর তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে একত্রিত হতো। করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গ্যাংটি।

প্রায় এক মাস আগে আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকায় তারা একটি মেয়েকে গণধর্ষণ করে। যার ভিডিও ধারণ করা হয়। সারুফের বাবা আকরাম গ্যাংয়ের অন্য সদস্যদের অভিভাবকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে স্থানীয়ভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কথা আছে ‘পাপ ছাড়েনা বাপকেও!’ গ্যাংটির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ধারণকৃত অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভিডিওটি ফাঁস হয়ে যায়। ফেঁসে যা প্রিন্স নামের কিশোর গ্যাংটি। ভিডিও ফাঁস হওয়ামাত্র আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক আসওয়াত, এমদাদ ও সুদীপসহ পুলিশের টিম তদন্তে নামে। ভিডিওর সূত্র ধরে ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর সহায়তায় ৭ অক্টোবর ভোরে অভিযান চালিয়ে প্রিন্স গ্যাংয়ের ৩ সদস্যকে আটক করতে সমর্থ হন তারা।

তবে লাপাত্তা ছিলো গ্যাং প্রধান সারুফ। গ্রেফতার এড়াতে মাথা ন্যাড়া করে নিজের চেহারার পরিবর্তন করার চেষ্টা করে সারুফ। চলে যায় খালার বাসা খুলনায়। প্রথমে সারুফের বাবা আকরাম ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তিন সদস্য আটকের পর ছেলেকে ধরিয়ে দিতে রাজি হন। পরে সারুফের বাবাকে সাথে নিয়ে খুলনায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় খুলনার হরিণটানা থানার গোল্লামারি হুবলাডাঙ্গা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।

সারুফের বাবা আকরাম বলেন, আমার দুই সন্তান সারুফ ও মারুফ। আমার ভালো ছেলে মারুফের জীবনে কোনো দাগ লাগাতে চাই না। প্রয়োজনে পচা আঙ্গুল কেটে ফেলে দেবো (ছেলেকে ধরিয়ে দেবো)। পরে তিনি তার সন্তানের অবস্থান বলে দেন এবং সাথে গিয়ে তাকে ধরিয়ে দেন।

ভুক্তভোগীর চাচা আতোয়ার বলেন, আমরা এই এলাকায় চাকরির জন্য নতুন এসেছি। আমার ভাতিজির কারখানা বন্ধ থাকায় তাদের সাথে নিয়ে ওই এলাকায় ঘুরতে যাই। এ সময় ১২ থেকে ১৪ জন আমাদের ঘিরে ফেলে এবং আমাদের মারধর করে। আমার চোখে চোট লাগলে এদের মধ্যে দুই জন একটি স্থানে নিয়ে আমার মাথায় পানি ঢালে। আর ভাতিজিকে নিয়ে পাশে কোথাও চলে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তারা আমাদের ছেড়ে দেয়।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক সুদীপ কুমার গোপী বলেন, ভিডিও ফাঁস হওয়ার সাথেই আমরা তদন্তে নামি। ভিডিওর সূত্র ধরে ৭ অক্টোবর ভোর রাতে গ্যাংটির ৩ সদস্যকে আটক করা হয়। পরে খুলনায় অভিযান চালিয়ে গ্যাংটির প্রধান সারুফকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আটক সারুফ খাজা গরিবে নেওয়াজ স্কুলে লেখাপড়া করতো।

প্রসঙ্গত, প্রায় ৩৫ দিন আগে চাচার সাথে ভাদাইলের গুলিয়ারচক এলাকায় ঘুরতে গেলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা চাচাকে মারধর করে আটকে রেখে গণধর্ষণ করে শ্রমিক ভাতিজিকে। পরে মাথা ন্যাড়া করে নিজের চেহারা পরিবর্তনের চেষ্টা করে আত্মগোপনে যায় গ্যাং প্রধান সারুফ। ভিডিও ফাঁস হলে গ্যাং প্রধান সারুফসহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশ।

Loading