আনারকন্যা ডরিনের অভিযোগ অস্বীকার ডিএমপি কমিশনারের

প্রকাশিত: ২:০৩ পূর্বাহ্ণ , জুন ১৬, ২০২৪

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলার তদন্তে আটক করা ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে রক্ষার জন্য কোনো তদবির নাই। এখানে কারোর কোনো হস্তক্ষেপ বা এ ধরনের কোনো কিছুই আমাদের ওপর নেই। স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেছেন, সংসদ সদস্য আনার হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত সঠিকভাবে এগিয়ে চলছে। তদন্তে কারও হস্তক্ষেপ বা কোনো প্রেসার নেই। আমরা স্বাধীনভাবে মামলার তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

শনিবার (১৫ জুন) সকালে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ডিএমপি সদরদপ্তরে এক সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকারের সঞ্চালনায় সমন্বয় সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মহা. আশরাফুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ অনেকে।

এর আগে বুধবার (১২ জুন) আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে অভিযোগ করেন, আসামীদের বাঁচাতে তদবির হচ্ছে। তাদেরকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়, সেজন্য জোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এসময় আনার কন্যা ডরিন সঠিক বিচারের দাবি করে বলেন, কোনো তদবিরের চাপে পড়ে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে বন্ধ করার চেষ্টা না করা হয়, চাপের মুখে যাতে সঠিক তদন্ত বন্ধ করা না হয়। আমি যেন সঠিক বিচার পাই।

গিয়াস বাবু নামে যাকে আটক করা হয়েছে, তিনি আমার বাবার প্রতিপক্ষ না। আমাদের সঙ্গে তার কোনো ধরণের শত্রুতাও নেই। আমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে। গত মে মাসের ১৭ তারিখে তার সাথে ভাঙায় দেখা হয়েছে। সেখানে একটা টাকা দেওয়ার লেনদেনের কথা উঠেছে, যা আমি ইতোমধ্যে খবরে শুনেছি। আমার কথা হলো, এ টাকার যোগানদাতা আসলে কে? এটা তারা কেন করিয়েছি? আপনারা দেখেছেন, তাকে আটকের আগে থানায় জিডি করেছেন তিনি যে, তার তিনটি ফোন হারিয়ে গেছে। একই দিনে একজন মানুষের তিনটি ফোন কীভাবে হারিয়ে যায়, সেটাও আমার মনে প্রশ্ন। এগুলো কী আসলে পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে, সে তো আমার বাবার কোনো শত্রু না। এই কাজগুলো কে করাচ্ছে, সেটা আমি বারবার বলেছি।

তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি নিয়ে গেছে। অবশ্যই তাদের কাছে সত্যিকারের কোনো তথ্যপ্রমাণ আছে, আর সেটা আমি নিজেও জানি। সেই প্রমাণ সাপেক্ষেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আসলে এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ বিচার চাই। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আইনে যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবেই যাতে আমার বাবার হত্যার বিচার করা হয়, আমি সেই দাবি জানিয়েছি। আমি শুনেছি, অনেক তদবির করা হচ্ছে। অনেক বড় বড় জায়গা থেকে ফোন আসছে, তাদেরকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য।

পরবর্তীতে সঠিক বিচারের আশ্বাস দিয়ে তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এক্ষেত্রে কাউকে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না। যেটা আইনে আসবে, আর যেটা সত্য ও সেটার বিচার হবে।

এদিকে, এমপি আনারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে গ্রেফতার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বর্তমানে আটদিনের রিমান্ডে আছেন। এ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত কয়েকজনের সাথে মিন্টুর যোগাযোগ, কিলার আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম আসা, তার আগে থেকে আনারের সাথে মিন্টুর দ্বন্দ্ব, এসব বিষয় সামনে এনে ঘটনার সাথে যোগসূত্র খুঁজছেন গোয়েন্দারা।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে বর্তমানে পাঁচজন গ্রেফতার রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রথমে গ্রেফতার হন আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, সিলাস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়া। এরপর আনার হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বিষয়টিও প্রকাশ্যে চলে আসে। এর পরেই গ্রেফতার হন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু। তার পরেই গ্রেফতার হন আরেক আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি হচ্ছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু।

Loading