বিএনপির এমপিদের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ভুল: সাভারে ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ৮:৪৫ অপরাহ্ণ , ডিসেম্বর ১০, ২০২২

একাদশ জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগের যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটা ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর জন্য বিএনপিকে অনুতাপ করতে হবে এবং বর্তমান সংসদের এতে কিছুই হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে সাভারের রেডিও কলোনি মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন। বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদে ঢাকা জেলার তিন উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।

শনিবার দুপুরে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ থেকে বর্তমান সংসদে থাকা বিএনপির সাতজন সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। বিএনপির সাতজন চলে গেলে সংসদ অচল হয়ে পড়বে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে বিএনপির এই সিদ্ধান্ত ভুল। এর জন্য অনুতাপ করতে হবে।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপি ক্ষমতা দখলের খোয়াব দেখেছিল। কিন্তু ১০ ডিসেম্বরের আগেই কী হলো? পুলিশ তাদের কার্যালয়ে গিয়ে ১৬০ বস্তা চালসহ ডাল পেল। তারা সমাবেশের নামে পিকনিক পার্টি করতে চেয়েছিল। ঢাকায় আজ সমাবেশ। কিন্তু পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঢাকা সিটি আজ বঙ্গবন্ধুর সৈনিক শেখ হাসিনার কর্মীদের দখলে ।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে কি বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলন করে মুক্ত করেছে? তাকে মানবতা দেখিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাগার থেকে বের করে বাসায় থাকতে দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন জিয়াউর রহমান। শুধু তাই নয়, তিনি খুনিদের পুরস্কৃতও করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িতদের পুনর্বাসিত করেছেন। জেল হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাদের হাতে দেশ মোটেও নিরাপদ নয়। যেই বাংলাদেশে সরকারের বিকল্প সেন্টার হাওয়া ভবন, গাজীপুরে খোয়াব ভবন হয়েছে। আওয়ামী লীগের আহসানুল্লাহ মাস্টার, এ এম এস কিবরিয়া, মমতাজ উদ্দিনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে। রক্তের নদীর ধারা বইয়ে দিয়েছে বিএনপি। আপনারা কি সেই বাংলাদেশ চান?

এসময় খেলা হবে স্লোগান নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেকেই এই স্লোগানকে পছন্দ করেননি। তারা বলেন আমার মুখে এই স্লোগান মানায় না। এটি নাকি মার্জিত ভাষা নয়। আমি তাদের বলতে চাই, পশ্চিমবঙ্গের লাস্ট ইলেকশনে নরেন্দ্র মোদি, মমতা ব্যানার্জিরা একটাই স্লোগান দিয়েছেন- খেলা হবে। তাই আমি বলবো, জনগণ যে স্লোগান পছন্দ করে আমি সেই স্লোগান দেবো। এতে কে কী মনে করলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। খেলা হবে এই ডিসেম্বরেই খেলা হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম (এমপি) বলেন, বিএনপি আমাদের উন্নয়নের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। তারা বলেছিল, নভেম্বরের মধ্যে দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। নভেম্বর ছাড়িয়ে ডিসেম্বর এসেছে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি। তারা বলেছিল, ১০ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চলবে। ১১ তারিখ খুনি তারেক রহমান আসবেন। কোনো নির্বাচন নয়। বিমানবন্দর থেকে সোজা বঙ্গভবন যাবে। আজকে ১০ তারিখ। মির্জা ফখরুল ও আব্বাস এখন কারাগারে।

মির্জা আজম বলেন, আজকে ১০ তারিখ। ঢাকা শহরে বিএনপি খুঁজে পাওয়া যায় না। মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাস কারাগারে বসে আছেন। বিএনপি সমাবেশ করছে। বিদেশ থেকে ওহি নাজিল হবে। শেখ হাসিনাকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে তারা গদিতে বসে পড়বেন। আজকে তাদের সমস্ত পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়েছে। তাদের কথা বিশ্বাস করবেন না। গুজবে কান দেবেন না। যখনই কোনো নির্বাচন আসে, তখনই তারা (বিএনপি) জণগনের সঙ্গে প্রতারণা করে। দেশের দুঃসময় এলেই বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ। আজকে ১৪ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। সেই ১৪ বছর আগে বাংলাদেশ কী ছিল। যেদিন প্রধানমন্ত্রী শপথ নেন। সেদিন বাংলাদেশ কোথায় ছিল। সেই দেশ ছিল সবচেয়ে দরিদ্রতম দেশ। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪০ ডলার। ১৪ বছরে বাংলাদেশ আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। মাথাপিছু আয় ২১০০ ডলার।

জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী এনামুর রহমান, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ প্রমূখ।

Loading