ডয়েচে ভেলেসংকটপূর্ণ দেশগুলোর কাতারে স্বাগতম নিউজ ৭১ অনলাইন নিউজ ৭১ অনলাইন প্রকাশিত: ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ , জুলাই ১২, ২০২২ জার্মানিও এখন স্থায়ী সংকটে এবং সুসঙ্গে৷ তাই এর অবস্থা অনেকটা ব্রাজিলের মতো, অনেকটা সাধারণ৷ তবে এটা নাটকীয় নয়, মনে করেন ডয়চে ভেলের আস্ট্রিড প্রাঙ্গে ডে অলিভিয়েরা৷বিরক্ত, সন্দিহান, অবাক৷ ডয়চে ভেলের ব্রাজিল সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করার সময় যখন আমি জার্মানিতে ফিরতাম তখন এমন লাগত৷লোকে বলত, ‘‘ব্রাজিলে থাকা নিশ্চয় খুব কষ্টের,” অথবা, ‘‘সেখানে তো মূল্যস্ফীতি চরমে, অপরাধ তুঙ্গে, আছে দারিদ্র্য, মাদকাসক্তি৷ আর অ্যামাজন তো একেবারে রেকর্ড হারে ধ্বংস করা হচ্ছে৷ কেমন করে থাকো এমন একটা দেশে?” কিংবা কখনো এর চেয়েও খারাপ, ‘‘এমন একটা দেশকে ভালো লাগে কী করে?”এখন আমি যখন ব্রাজিলে ছুটি কাটাতে যাই, তখন উল্টো দিক থেকে একই রকমের প্রশ্নের মুখোমুখি হই- যার অর্থ দেশে-বিদেশে জার্মানির সুনাম অনেকটা নষ্ট হয়েছে৷‘আলেমানহা’রপ্রতিচ্ছবিএখনভিন্নগত বছর যখন জার্মানির আহর উপত্যকা বন্যায় ভেসে গেল, তখন আমার ব্রাজিলের বন্ধুরা অনুদান পাঠাতে চেয়েছিলেন৷ আর এখন রাশিয়া গ্যাস বন্ধ করে দিলে শীতে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতে হবে৷ ব্রাজিলিয়ানরা তো এটা কল্পনাই করতে পারবে না, কারণ তাদের অনেকে দিনে কয়েকবার স্নান করে নেন৷‘আলেমানহা’- যে নামে ব্রাজিলিয়ানরা জার্মানিকে ডাকেন, ভিন্ন এক শ্রদ্ধা ছিল এ নামটিতে, আর তা শুধু ব্রাজিলেই নয়৷ জার্মানি এখনো সামাজিক ও ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকের কাছে রোল মডেল৷ তবে সমালোচকদের কণ্ঠ দিন দিন উঁচু হচ্ছে এবং আমাকেও আরো বেশি করে জার্মান ও এর সমস্যাগুলো নিয়ে সাফাই গাইতে হচ্ছে এবং এর বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে৷অনেকের কাছেই আমার ব্যাখ্যা মনঃপুত হচ্ছে না৷ তারা মাথা নাড়াচ্ছেন এমনভাবে যেন বলতে চাইছেন, ‘‘বুঝেছি কী বলতে চাইছ৷” স্বাগতম তোমাকে সংকটাপূর্ণ দেশগুলোর কাতারে৷জার্মানিযেনআরোব্রাজিলময়একটা বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন৷ দুই দেশের সমস্যাগুলো খুবই আলাদা৷ আমি ব্রাজিল বা জার্মানি কাউকেই ছোট করতে চাইছি না৷ আমি কোন দেশের সমস্যাকেই বাড়িয়ে-কমিয়ে বলার চেষ্টাও করছি না৷ আমার সহজ কথা হলো: বার্লিন দেয়ালের পতনের পর থেকে জার্মানি বেশি বেশি ব্রাজিলের মতো হয়ে উঠছে৷ করোনাভাইরাস, যুদ্ধ ও সন্ত্রাস, মুদ্রাস্ফীতি ও ব্রেক্সিট, ইউরোপের ঋণ সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন- গেল ২০ বছর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি একরকমের দীর্ঘস্থায়ী সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে৷ সরকারগুলো এক সংকটের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে তা সমাধানের আগেই আরেক সংকটে পড়ছে- মনে হয় যেন সুড়ঙ্গের শেষে কোন আলো নেই৷এতটা সুনাম ও সম্ভাবনা থাকার পরও জার্মানি কখনোই সুখের স্বর্গ ছিল না, আর হবেও না৷ এখন সময় এসেছে আমাদের পুরানো ধারণা বদলাবার৷ জার্মানি এখন স্থায়ী সংকটে এবং সুসঙ্গে৷কেন নয়? জলবায়ু পরিবর্তনতো শুধু জার্মানির ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়৷ যদিও বোমা এর সীমানার ভেতর পড়ছে না, তারপরও ইউক্রেন কিংবা সিরিয়ার যুদ্ধের ক্ষত এখানেও পৌঁছাচ্ছে৷ আর নিজেদের সমস্যা তো আছেই, যেমন, জীর্ণ সেতু, শ্লথগতির ইন্টারনেট, ট্রেনের বিলম্ব এবং শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী ও দক্ষ জনশক্তির সংকট৷ক্লান্তিওঘুরেদাঁড়ানোএত সব সংকটের পরও আমি জার্মানিকে এমনটিই ভালোবাসি- যেমনটি আমি বাসি ব্রাজিলকে৷ তাই প্রশ্ন হলো: হেয়ার বলসোনারো প্রেসিডেন্ট থাকার পরও কি আপনি ব্রাজিলকে ভালোবাসতে পারেন, কিংবা অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) থাকার পরও জার্মানিকে?হ্যা, আমি পারি৷ কারণ যে জার্মান সমাজ অগণতান্ত্রিক ইন্ধনকে রুখে দেয়ার ক্ষমতা রাখে এবং আইনের শাসন টিকিয়ে রাখতে পারে, তাকে আমি শ্রদ্ধা করি৷ সেইসব ব্রাজিলিয়ানের প্রতিও আমার শ্রদ্ধা যারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করছেন, বিশেষ করে বিচারিক বিভাগের সেই ব্যক্তিদের যারা প্রেসিডেন্টের আক্রমণকে সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পেরেছেন৷আর রাজনৈতিক, অর্থনেতিক ও সামাজিক সংকটের কারণে বারবার চাপ ও অবসাদগ্রস্ত হয়েও আমাকে তাদের সঙ্গেই থাকতে হবে৷ আমি তাদের উপেক্ষা করতে পারি, অভিশাপ দিতে পারি, লড়তে পারি তাদের বিরুদ্ধে বা পালাতে পারি, কিংবা আত্মসমর্পন করতে পারি৷ব্রাজিলের পথশিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আমার মনে হয়েছে, প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও পরিবর্তন সম্ভব৷ যেসব শিশুর ভবিষ্যত অনিশ্চিত, তারাই আমার হতাশাবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, ভাবতে শিখিয়েছে৷ সংকটের মাঝখানে এমন ঘটনাগুলো অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে৷ যেহেতু সংকট এখানে আপাতদৃষ্টিতে চিরস্থায়ী, একটু আশার আলো ও একটু উষ্ণতাই এখন সবচেয়ে দামী হয়ে উঠেছে৷ শেয়ার আন্তর্জাতিকবিষয়: