কবি শ্যামসুন্দর সিকদার এর পাঁচটি কবিতা নিউজ৭১অনলাইন,ঢাকা নিউজ৭১অনলাইন,ঢাকা প্রকাশিত: ৫:২১ অপরাহ্ণ , জুন ১১, ২০২০ ১.মনের ক্যানভাসে ভোরের ছবি আঁকা ভোরের ছবিটা রাতে এঁকেছি একান্তে মনের ক্যানভাসে -যেন হয় রৌদ্রোজ্জ্বল ! শস্য-শ্যামল পৃথিবী হাসিবে দিনান্তে, কার ভুল রঙে তাতে ঝরে অশ্রুজল ? পৃথিবীর জলকাব্য জলছবি আঁকে দুঃখেরা জলের মত থাকে প্রবাহিত, সুপ্ত সুখ মাঝে মাঝে দৃশ্যমান থাকে জলরঙে ছবি তার – ছিল প্রত্যাশিত। সাগরের বিশালতা আছে বহুদূর তবু কষ্টকে নেয় না কাছে, বুকে টেনে নদীর মতন, শত সকরুণ সুর ব্যর্থ শ্রবণে, কষ্টের মহাকাব্য জেনে! স্বপ্ন গড়ি ততটুকু – যত দীর্ঘ দৃষ্টি হয়, সমুদ্রের পাড়ে সাতরঙ ধরে, ভোরের প্রার্থনা – দূর হোক অনাসৃষ্টি প্রভু ! অস্থির সময় দাও শান্ত করে ! ২.সোনালু ফুলের প্রতি এইতো সোনালু ফুল ঝুলে আছে সব যেন একসাথে অনেক কানের দুল ! ছুঁয়েছে মাটির ঘাস, অন্তরেতে জায়গা নিয়েছে কৃপণেরে করে যেন উপহাস! বিণীত অনেক সুন্দরের মাঝে এই নরম ফুলেরা যেন উদারতায় হয়েছে ভীষণ ভরপুর সোনালু হয়েছে ঋদ্ধ হলুদ-সুন্দর সাজে॥ ৩.হোলির অতিথি ছিল প্রত্যাশা মৃদু মৃদু জোছনা দিবে আলো আঁচলে – আড়চোখে চাহনী দিয়ে মুগ্ধ রূপের নীল হাসি ছড়াবে নিশি হাতে শিউলী ঘ্রাণ নিয়ে আসিবে খুশি। তুমি আসোনি তাই চাঁদ ওঠেনি আজ আমি কাঁদিনি বলে বৃষ্টি নামেনি রাতে রোদ দুপুরে ঘুম ছিল বিশ্রাম ঘরে ছিল অচেনা কোনো এক অতিথি দ্বারে। ছিল জলের ভালোবাসা অন্তরে জমা হাত বাড়ালে নদী – মায়া মুখের বাণী প্রাণে ছোঁয়ায় উষ্ণ শস্য কণার মোহ তাই প্রার্থনা করেছিল প্রাণিত দ্রোহ। তুমি আসোনি তাই তারা ঝরেনি মাঠে লাল পলাশ শিমুলের রঙীন ঠোঁটে চুমু দেয়নি হোলি খেলা দোলের শেষে রাতে উপোসে কাটিয়েছে অতিথি এসে। ৪. মায়া মেঘের আস্তিন ধরে ধরে জন্মের দুয়ারে গিয়েছি বৈরাগ্য বেশে, সাত্ত্বিক সাধনা ছাড়া পুণ্যবান আখ্যা দিল পিতামাতা প্রতিবেশি, যখন ছুঁয়েছি এই মাটি – প্রথম মায়ায় ! সময়ের নদী ধরে ধরে পথ হাঁটিতেছি, বীরত্ব দেখেছি, আর স্বার্থের প্রতিযোগিতা, শেষে নিয়ন বাতির আলো খুঁজে দেয় পথ। পিছুটানে এক শক্তি – তাও মায়া জন্মান্তরে ! ক্ষোভ-বিক্ষোভের অন্তে শ্যামল-ছায়ায় ছিল ভালোবাসা ঋণ।মৃদু বাতাসের বারান্দায় প্রজন্মের কাছে জমা থাকে ভবিষ্যত দায়, সেখানেও থাকে সেই বন্ধনের ইন্দ্রজাল। এভাবেই মায়া আছে বহমান জন্মে জন্মে, কিছু পায়না – চায়না প্রতিদান, তবু চলে পরম্পরায় অজান্তে।বেদনার অশ্রু দেয় বাড়িয়ে অদৃশ্য টান, নীল মেঘ হতে দূরে। যত চাই বেশি দূরে যাবো, তত যাই কাছে; কোন্ কুহকী কূজন শুনে কুসুম্ভী মুখের হাসি টানে ! কে সেখানে? দেখি পুনর্বার মায়া ! পবিত্র স্পর্শের বোধ – যেন স্বর্গের মতন। ৫.চন্দ্রাবতীকে শুদ্ধতার নিমন্ত্রণ চন্দ্রাবতী ! এখানে বাতাসে আজ উড়ছে এক অভিশাপ চারিদিকে উদ্বিগ্নতা মনে বাসা বেঁধেছে ‘করোনা’-মৃত্যু-ভয় ! চন্দ্রাবতী ! এখানে মনের ভেতর আতঙ্ক এখন দখলদারী এখানে বিশুদ্ধ বাতাসে আকাল, নিঃশ্বাসে ডুবেছে ভয় এখানে এখন ভয়ের রাজত্ব করে পায়চারি ! তাই তুমি নিরাপদ দূরত্বে নির্বিঘ্ন থাকো ছুঁইও না শরীর আমার – হয়তো ছড়াবে ‘করোনা’র মরণ ছোবল ! চন্দ্রাবতী ! এখানে যখন এই ঘর আবার ‘করোনা’ মুক্ত হবে তুমি এসো! এখানে যখন থাকবে না আর ‘করোনা’ আতঙ্ক এখানে যখন দীঘির জলের ওপর আবার খেলবে সুখের সাঁতার তুমি এসো! ভালোবাসার শতেক হাত ফিরে এসে খেলে যদি সেই গোল্লাছুট – ছোঁয়াছুঁয়ি, তবে তুমি এসো! এখানের বিশুদ্ধ বাতাস যদি ভালো লাগে তোমার তবে তুমি তা নিজের মনে করো ! চন্দ্রাবতী ! তবে তুমি এসো আবার সবুজ গালিচায় মুক্ত আঙ্গিনায় আর এই বাতাসকে একটু পুনর্বার ছুঁয়ে দিয়ে বলো – সব মানবতা আমি ছুঁয়ে দিলাম ভালোবেসে! সব অন্তর আবার ফিরে যেন পায় ছোঁয়াছুঁয়ির সাহস ! চন্দ্রাবতী ! তুমি ফিরে এসো – লাল পলাশের ফাগুন বাতাসে তুমি এসো – বাঙালির বন্ধু হয়ে – আমাদের ঘরে এই আমন্ত্রণ তবে থাক তোমারই জন্যে – চিরতরে !! শেয়ার শিল্প-সাহিত্য বিষয়: https://news71online.com/?p=3589&preview=true