আওয়ামী লীগ ২২১, স্বতন্ত্র ৫২, জাতীয় পার্টি ১১ আসনে জয়ী

নৌকার বিপুল বিজয়

প্রকাশিত: ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ , জানুয়ারি ৮, ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দেশের অপর বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি ভোট বর্জন করলেও, সাম্প্রতিককালের মধ্যে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে সুষ্ঠু এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৯ আসনের মধ্যে ২২১ আসনে বিজয়ী হয়েছে। বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৫২টি আসনে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয় অবস্থান লাভ করেছে। আর জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। ফলে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। আর টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। বিএনপির ডাকা হরতালসহ বিভিন্নভাবে আতঙ্ক সৃষ্টির কারণে ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। তবে নির্বিঘেœ কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রদান করতে পারায় বিদেশিরাও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। এর ফলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিচ্ছিন্ন কটি ঘটনা ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সমালোচকদের আশঙ্কা উড়িয়ে দলীয় সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালট পেপারে সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনের ভোট। টানা ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্র কেন্দ্রে ফল ঘোষণার পর রিটার্নিং অফিসারের কাছে ফলাফলের সিট পাঠানো হয়। রিটার্নিং অফিসারগণ প্রতিটি সংসদীয় আসনের সব কেন্দ্রের ভোট যোগ করে আসনভিত্তিক ফলাফল ইসিতে পাঠান এবং ইসি তা ঘোষণা করে। নির্বাচন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশের মতো। দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকরাও বলেছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।
ভোটের পরিবেশ নিয়ে কোনো প্রার্থীই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ উত্থাপন করতে পারেননি। এমনকি কোনো রাজনৈতিক দল বা নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ আসেনি। নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহল দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তা মিথ্যা প্রমাণ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়। তাই এই নির্বাচন বর্তমান সরকার ও ইসির জন্য বিশাল অর্জন।
এদিকে দিনভর নির্বাচন চলাকালে বিচ্ছিন্নভাবে যে ক’টি অঘটন ঘটে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুন্সীগঞ্জে নৌকার সমর্থকদের ওপর হামলা করে মো. জিল্লুর রহমান নামের একজন শ্রমিক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত জিল্লুর রহমান মিরকাদিম পৌরসভা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি। সে মুন্সীগঞ্জ-৩ (সদর এবং গজারিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের সমর্থক। সকালে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার টেঙ্গর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারসহ ১৫ জনকে শাস্তি দেয় নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া সাতটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া ভোট শেষের মাত্র ১৫ মিনিট আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল করা হয় চট্টগ্রাম-১৬ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ( নৌকা) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অনেক আগে থেকেই রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের সমমনা কিছু ছোট দল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র দলগুলো সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই বলে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়। এ পরিস্থিতিতে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে শুরু করে। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দেয় বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যারা বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেওয়া হবে। তাই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা ছিল বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়। সবার প্রত্যাশা ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন। তাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহল ইসির প্রশংসা করে।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিএনপি ও তাদের সমমনা দলের পক্ষ থেকে বলা হয় এই ইসির পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তবে এই ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বলে আসছে সুষ্ঠু নির্বাচন করাই তাদের চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের প্রথম পরীক্ষা দেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও ফলাফল ঘোষণায় বিলম্বসহ ছোটখাটো কিছু ঘটনা নিয়ে ইসির বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়। এর পর ইউপিসহ কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটায় সমালোচনার মুখে পড়ে ইসি। কিন্তু জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়ম হওয়ায় ওই নির্বাচন স্থগিত করার পর আবারও সুষ্ঠু নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে ইসি নিজেদের ইমেজ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। আর রবিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে ইসি কথার সঙ্গে কাজের প্রমাণ দেয়। অবশ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতাও প্রশংসনীয় ছিল বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।
বছরখানেক আগে থেকেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে লাগাতার আন্দোলন করতে থাকায় এবং জাতিসংঘ ও যুক্তলাষ্ট্রসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানানোর পর ইসি নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে অধিকতর সতর্ক হয়। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচন সুষ্ঠু করতে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করার প্রস্তুতি জোরদার করে।
বিএনপি নির্বাচন না করায় এবার অধিকাংশ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ছিল নির্ভার। তবে বিভিন্ন আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী প্রার্থীর সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়। এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়।
দুর্গম অঞ্চল ছাড়া রবিবার সকালে ভোটগ্রহণের কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌছে দেয়া হয় ব্যালট পেপার। তবে দুর্গম অঞ্চলের কেন্দ্রগুলোতে শনিবারই ব্যালট পেপার পৌছানো হয়। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে দেশি-বিদেশী বিভিন্ন মহলের চাপ থাকায় নিবাচন কমিশনের (ইসি) জন্য রবিবার ভোটের দিন ছিল অগ্নিপরীক্ষা। তাই দিনভর নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইসির নির্দেশে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল অধিকতর তৎপর। সারাদেশের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের আশপাশে ছিল আইনশৃংখলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীও মাঠে ছিল।
রাজপথের বিরোধী দল নিজেরা নির্বাচন বর্জন করেই বসে থাকেনি। নির্বাচন বর্জনের পক্ষে সারাদেশে বেশ ক’দিন লিফলেট বিতরণসহ গণসংযোগের পাশাপাশি নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য ভোটের দিনও হরতাল ডাকে। সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্নভাবে জনগণকে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ারও আহ্বান জানায় বিএনপি। তবে তারা নির্বাচনের দিন যাতে কোনো ধরনের সহিংসা করে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনী সতর্ক পাহারায় থাকে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ ভোটে অংশ নেয়া প্রার্থীরাও সজাগ থাকে। মূলত : এ কারণেই ভোটের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে ১৫ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র দাখিল প্রতীক পাওয়ার পরও নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলামের মৃত্যুতে ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করে ইসি। ফলে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোট হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রেকর্ডসংখ্যক অর্থাৎ ২ হাজার ৭১৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে ৭৩১ জন। ৬৬০ জন প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেন। আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পান বেশ ক’জন। ইসির আপিলে ব্যর্থ হয়ে উচ্চ আদালতেও আপিল করেন আরও বেশ ক’জন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রার্থিতা ফিরে পান। তাই সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকেন ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী। এবার ভোটে অংশ নেয় ৯০ জন নারী প্রার্থী ও ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রার্থী। ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়াই করেছেন ১ হাজার ৫৩৪ জন আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন। এর মধ্যে ২৮ জন বর্তমান এমপিসহ অধিকাংশই ছিল আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন ও নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছিল ৮৫২ জন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪২ হাজার ১৪৯টি। আর ভোটকক্ষ ছিল দুই লাখ ৬১ হাজার ৬৬৮টি। প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য একটি করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স রাখা হয়। এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে একটি করে অতিরিক্ত ব্যালট বাক্স রাখা হয়। ভোটগ্রহণের জন্য এবার দশ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। সকল আসনে নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার।
এবার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪ টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নেয় সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, জাতীয় পার্টি ( জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী), গণতন্ত্রী পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
এবার সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ছিল আওয়ামী লীগের ২৬৬ জন ( নৌকা), দ্বিতীয় স্থানে জাতীয় পার্টির ২৬৫ জন (লাঙ্গল)। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন (সোনালি আঁশ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন (আম), বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন (ডাব), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩৯ জন (চেয়ার), ইসলামী ঐক্যজোট ৪২ জন (মিনার), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৩০ জন (গামছা), গণফোরাম ৯ জন ( উদীয়মান সূর্য), গণফ্রন্টের ২১ জন (মাছ), জাতীয় পার্টির ( জেপি) ১৩ জন (বাই সাইকেল), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬ জন (মশাল), বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০ জন (কুলা)। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী ৩৫ জন (মোমবাতি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৬ জন (হাত ঘড়ি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১১ জন (বট গাছ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির পাঁচজন (কাঠাল), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জন (নোঙর), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ৩৮ জন (ফুলের মালা), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) পাঁচজন (কুঁড়েঘর), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের ৪৫ জন (টেলিভিশন), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ৪ জন (হাত পাঞ্জা), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন (একতারা), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৬৩ জন (ছড়ি), বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির ২৬ জন (হাতুড়ি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) ৪ জন (চাকা), গণতন্ত্রী পার্টির ১০ জন (কবুতর) ও জাকের পার্টির ২১ জন (গোলাপ ফুল)।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের অতিমাত্রায় দৌড়ঝাঁপ ও বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দলের নির্বাচন প্রতিহত করার হুমকি-ধমকিসহ নানামুখী তৎপরতার কারণে নির্ধারিত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি না এ নিয়ে ছিল কিছুটা সংশয়। এমন পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সংবিধান অনুসারে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবার নির্বাচন কমিশন ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং অন্য কমিশনাররাও বিভিন্ন জেলায় গিয়ে প্রার্থী, রাজনৈতিক দলের সে নতা, প্রশাসন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গেও দফায় দফায় মতবিনিময় করে ইসি। এ সময় তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকলের সহযোগিতা চান। তারা সবাই সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রার্থীসহ অন্যরাও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহল সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করেন। নির্বাচন কমিশনও সকলের সহযোগিতা নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করে অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ইসি।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিল সাড়ে সাত লাখ পুলিশ, বিজিবি ও আনসার। তাদের মধ্যে পুলিশ ১ লাখ ৮৯ হাজার, বিজিবি ৩৫ হাজার, এপিবিএন ৬ হাজার এবং আনসার-ভিডিপির ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৬৭ জন, ২ হাজার ৩৫০ জন কোস্ট গার্ড সদস্য রয়েছেন। তারা মাঠে নামে ২৮ ডিসেম্বর। আর ৩ জানুয়ারি থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। তারা সবাই ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় থাকার কথা রয়েছে।
ভোটগ্রহণের দায়িত্ব নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আচরণবিধি মানাতে ৬ শতাধিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। সব সংসদীয় আসনের জন্য ৩০০টি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্ট আসনে প্রার্থীদের অপরাধ তদন্ত করে আমলে নেয়ার জন্য এসব কমিটি গঠন করা হয়। ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত এ কমিটি দায়িত্ব পালন করবে। – জনকন্ঠ

Loading