বাবার কাটা মাথার সন্ধানে ছেলেকে নিয়ে সাগরপাড়ে পিবিআইয়ের তল্লাশি টিম

প্রকাশিত: ৫:০৭ অপরাহ্ণ , অক্টোবর ৭, ২০২৩

চট্টগ্রাম নগরের আলোচির মো. হাসান (৬১) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় খুন হওয়া হাসানের ছেলে শফিকুর রহমান ওরফে জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজধানীর হাজারীবাগ থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা থেকে শফিককে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পর তাকে নিয়ে শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে পতেঙ্গা সাগরপাড়ে যায় পিবিআইয়ের টিম। সেখানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল শফিকের বাবার কাটা মাথা। তবে বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পর সন্ধান মেলেনি ভুক্তভোগীর কাটা মাথা। এরপর বেলা পৌনে ১১ টার দিকে তাকে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান বলেন, গ্রেপ্তার শফিকের বাসায় বাবাকে হত্যা ও টুকরো টুকরো করা হয়েছিল। এরপর শফিক ও তার স্ত্রী আনারকলি মিলে বাবার কাটা মাথা সাগরপাড়ে ফেলে দিয়েছিল। সেটি উদ্ধারে আমরা শফিকের স্ত্রী আনারকলিকে নিয়ে সেখানে যাই। কিন্তু দুদিন তল্লাশির পর কাটা মাথাটি আমরা পাইনি। এরপর শুক্রবার রাতে শফিককে গ্রেপ্তারের পর পুনরায় শনিবার সকালে মাথার সন্ধানে যাই। কিন্তু খোঁজ পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গা থানার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় সড়কের পাশে পড়ে থাকা একটি লাগেজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল মানুষের শরীরের ৮টি খণ্ড। এর মধ্যে ছিল ২ হাত, ২ পা, কনুই থেকে কাঁধ এবং হাঁটু থেকে উরু পর্যন্ত অংশ। প্রত্যেকটি অংশ টেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল। তবে ওই লাগেজে ভুক্তভোগীর মাথা না থাকায় তাৎক্ষণিক পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদির বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বা ব্যক্তিদেরকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর আগে খণ্ডবিখণ্ড এই লাশ পরিচয় শনাক্ত ও রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে পিবিআই কর্মকর্তারা। তারা প্রথমে ফিঙ্গারপ্রিন্টের সহায়তায় নিহত ব্যক্তি মো. হাসান বলে শনাক্ত করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী হাসান বাঁশখালীর উপজেলার কাথারিয়া এলাকার সাহেব মিয়ার ছেলে। তার বর্তমান ঠিকানা লেখা আছে সিলেট সদরের সাধুর বাজার সংলগ্ন রেলওয়ে কলোনির এলাকায়।

পিবিআই জানায়, অন্তত ২৮ বছর ধরে ভুক্তভোগী হাসানের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ ছিল না। এসময়ে তিনি কোথায় ছিলেন তাও জানতেন না পরিবারের সদস্যরা। বছরখানেক আগে হঠাৎ তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। বাড়িতে হাসানের নামে কিছু পৈতৃক সম্পত্তি ছিল। যেটি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন ভুক্তভোগী হাসান। এ নিয়ে বিরোধের জেরে গত ২০ সেপ্টেম্বর নগরের ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের পকেট গেট এলাকার জমির ভিলা ভবনের একটি বাসায় স্ত্রী-সন্তানরা মিলে হাসানকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে ফেলে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী হাসানের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম (৫০), তাদের বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে (৩২) ও ছোট ছেলে শফিকের স্ত্রী আনারকলিকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাদের দেওয়া তথ্যে হাসানের শরীরের অন্যান্য অংশ এবং হত্যার বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করে পিবিআই কর্মকর্তারা। গত ২৭ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি বাবাকে হত্যার কারণ, কীভাবে হত্যা করা হয় এবং কীভাবে লাশ ফেলে দেওয়া হয় তার বর্ণনা দেন। এরপর ৩ অক্টোবর একই আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন আনারকলি।

Loading